ভারতবর্ষের যে রাজ্যে দরদাম করে ‘কনে’ ক্রয় বিক্রয় হত
নিউজ ডেস্ক – সমাজে বিয়ের নামে কনে বিক্রি করা কোন নতুন ঘটনা নয়। বহুকাল আগে থেকেই টাকার বিনিময়ে অল্প বয়সী মেয়েদেরকে তুলে দেওয়া হচ্ছে বয়স্ক ধনীদের হাতে। প্রকাশ্যে রমরমিয়ে মেয়েদের নিয়ে সকলে ব্যবসা করলেও নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেন প্রশাসন। কারণ বৈধভাবেই নিকাহ বা পণের নামে মেয়ে বেচাকেনার ব্যবসা চলছে রমরমা। তবে মোটা অংকের বিনিময়ে কেনা বেচার ব্যবসা বেশি দেখা যায় পুরানো হায়দ্রাবাদ শহরের মুসলিম প্রধান এলাকায়। এই এলাকার সঙ্গে আরব দুনিয়ার একটা আত্মীক যোগ আছে৷ যার কারণে সেইখানকার ধনী আরোবীরা ছুটে আসে পাত্রীর খোঁজে টাকার থলি নিয়ে৷ এরপরে সেখানকার গরিব মেয়েদের সাথে হয় চুক্তিবদ্ধ বিয়ে৷ পাত্রীর পরিবার বেশির ভাগই গরিব বা নিম্নবিত্ত৷ পাত্রী অনুযায়ী দাম ওঠে ১০ হাজার থেকে ১০ লাখ৷ এই কাজে প্রধান ভূমিকা দালালদের৷ তবে দীর্ঘদিন এই সকল কাজের কেউ বিরোধিতা না করলেও সম্প্রতি এক তরুণীর মা এর ঘোর বিরোধীতা করেছেন, কারণ তার অগোচরে ১৫ বছরের মেয়েকে এক শেখের সাথে ৫ লক্ষ টাকার বিনিময় বিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে জানা যায় নিজের মেয়েকে তার বাবা ও পিসি যৌথ পরিকল্পনা করে ৫ লক্ষ টাকার বিনিময় শেখের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। এরপর সে তাঁর মেয়েকে নিয়ে বিদেশ পাড়ি দিয়েছিলেন। প্রথমদিকে তরুণী শেখের প্রতিপত্তি দেখে রাজি হলেও পরবর্তীতে তার উপর নির্যাতন করায় বিদেশ থেকে ফোন করে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য আকুতি জানায় সে। কার্যত ফোন করার পরেই ঘটনা সেইসময়কার কেন্দ্রীয় মহিলা ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী মানেকা গান্ধীর গোচরে আসার সঙ্গে সঙ্গে তিনি হায়দ্রাবাদের পুলিশ কমিশনারকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন৷ পরবর্তীকালে স্বর্গীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গেও কথা বলেন মানেকা গান্ধী, যাতে ঐ নাবালিকা মেয়েটিকে ফিরিয়ে আনা হয় দেশে৷ জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনকে নাবালিকার পরিবারকে সাহায্য করতে বলেছিলেন মানেকা গান্ধী৷
মন্ত্রী মহলে বিষয়টি পৌঁছানোর পরই পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে তরুনীর বাবা ও পিসিকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তারা এছাড়াও সন্দেহ তালিকায় ছিলেন তরুনীর মাও। পরবর্তীতে তাদের জেরা করে যানা যায় তারা সত্যিই অর্থের বিনিময়ে নিজের মেয়েকে বেঁধে দিয়েছিলেন ওই আরবি শেখের কাছে।
এই ঘটনায় তরুনীর মা নিজের মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে একাগ্রতা দেখানোয় বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে সকলের। কিন্তু এমন অনেক তরুণী রয়েছে যাদের কাহিনী হারিয়ে যায় এই গল্পের পাতায়। ঝরে পড়ে কয়েকশো স্বপ্নের ফুল। তবে সকলে এটাই আরজি যাতে প্রশাসন বিষয়গুলিকে কড়া হাতে নেয়। যদিও এই ঘটনার সম্পর্কে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থীর বচপন বাঁচাও আন্দোলন-এর মুখপাত্র ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বললেন,‘‘পাচারকারীদের কবল থেকে বাচ্চাদের উদ্ধার করার ওপরই আমরা বেশি জোর দেই৷ পাচারকারীরা টাকার লোভ দেখিয়ে মেয়েদের নিয়ে আসে৷ তারপর হাতবদল হয়, পাচার হয়৷ গরিব ঘরের মেয়ে বলে পুলিশও তেমন গা করে না৷ বড়সড় কেউ হলে আলাদা কথা৷ পাচার করা মেয়েদের একটা অংশকে পাঠানো হয় মধ্যপ্রাচ্যে শেখদের যৌনদাসী হিসেবে৷ আর একটা অংশকে বিক্রি করা হয় ভারতের রেডলাইট এলাকায়৷ নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর পেলে আমরা ঠিকানা এবং কোঠি নম্বর জেনে পুলিশের সাহায্যে তাদের উদ্ধার করি৷ হাজার হাজার নাবালিকার বিয়ে দেওয়া হয় বয়সের আগে, হাজার হাজার শিশু হারিয়ে যায় প্রতি বছর৷ অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানা রাজ্যের দুর্নাম সেক্ষেত্রে সবথেকে বেশি৷ কিশোর-কিশোরীদের পাচার সমাজে একটা উদ্বেগজনক স্তরে পৌঁছেছে।