অফবিট

হনুমানের লেখা রামায়ন! পবন পুত্র হনুমানের অবাক করা দশটি গল্প

নিউজ ডেস্ক: পবন পুত্র হনুমানের যার শক্তি সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলার নেই কারন আমরা সবাই জানি। কিন্তু রামের এই একনিষ্ট ভক্তের এমন কিছু তথ্য রয়েছে যা বেশিরভাগ মানুষেরই অজানা।কি সেই তথ্য?

১। হনুমানজীর জন্ম হয়েছিল মাতা অঞ্জনীর পাপ নির্মূল করতে :

মর্তের এক অপ্সরা  ছিলেন  হনুমানের মাতা অঞ্জনী। তার মুখ মুণি ঋষির পাপে বাঁদরের মত বিকৃত হয়ে যায়। তাঁর উপর অভিশাপ ছিলে যে তিনি যখনই কারোর সাথে ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হবেন তখনই তার মুখ বানরাকৃতি হয়ে যাবে। বানররাজ কেশরীর সাথে অঞ্জনী প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং বিবাহ করেন। শিবের উপাসক ছিলেন সে। তার উপাসনায় মহাদেব প্রসন্ন হয়ে তাকে বর দিয়েছিলেন যে “তিনি তার গর্ভে জন্ম নেবেন  এবং  তাতে সে পাপ মুক্ত হবে”। একবার পুত্র লাভের আশায়  রাজা দশরত যজ্ঞ করছিলেন। আর সেই যজ্ঞের প্রসাদ যেটা কৌশল্যার পাতে পড়ার কথা ছিল সেটি একটি চিল এসে আচমকাই নিয়ে উড়ে চলে যায় এবং অঞ্জনীর পাতে পড়ে। ভগবান শিবের প্রসাদ ভেবে  অঞ্জনী সেটিকে  খেয়ে নেয় এবং গর্ভবতী হয়। পরে মহাদেবের একাদশতম রুদ্র অবতার হনুমানের জন্ম হয় এবং মাতা অঞ্জনী পাপ মুক্ত হন।

 ২। শ্রীরামের দ্বারা হনুমানকে মৃত্যু দন্ড প্রদান:

 রামই একবার হনুমানকে বধ করার চেষ্টা করেছিলেন। কি শুনে অবাক হচ্ছেন তো? হওয়াটায় স্বাভাবিক। তবে এটা সত্য। কি হয়েছিল? একবার রাম চন্দ্রের গুরু বিশ্বামিত্র কোন এক কারনে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে যান হনুমানের ওপর। তখন তিনি তাঁর শিষ্য রামকে আদেশ দেন হনুমান বধ করার। গুরুর আদেশ পালন করার জন্য রাম তখন হনুমানের ওপর অনেক মায়াবী বাণ বর্ষন করেন।  তবে সেই বাণের বিরুদ্ধে হনুমান ধ্যানমগ্ন হয়ে রাম নাম নিরন্তর জপ করতে থাকেন। রাম নামের প্রভাবে তাঁর  গায়ে একটিও বাণ হনুমানের ।  একেবারে অক্ষত থাকেন অবস্থায় থাকে হনুমান।

 ৩। মাতা সীতার উপহার হনুমানের প্রত্যাখ্যান :

 একবার হনুমানের উপর প্রসন্ন হয়ে মাতা সীতা তাঁকে এক সুন্দর সোনার হার উপহার দেন। তবে ওই উপহার নিতে অস্বীকার করেন হনুমান। এতে অসন্তুষ্ট হয়ে মাতা সীতা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন উপহার প্রত্যাখ্যান করার কারন। তখন হনুমান তাঁকে তার বুক চিরে দেখান যে তার বুকে শ্রীরাম ও সীতা বাস করেন । এইজন্য তার কাছে অন্য সব কিছু তুচ্ছ।

৪। হনুমানের লেখা রামায়ন : 

লঙ্কা কান্ডের পর একবার হিমালয়ে গিয়ে হনুমান তার নখ দিয়ে রামায়ন রচনা করতে লাগলেন। এই কথা ঋষি বাল্মিকী শুনে অসন্তুষ্ট হয়। বাল্মিকীর অসন্তুষ্ট হওয়ার কথা জানতে পেরে হনুমানজী তার লেখা রামায়ন সাগরে ফেলে দেন।

 ৫। ভীম এবং হনুমান দুই ভাই : 

মহাভারতে বর্ণিত রয়েছে যে একবার ভীমের গর্ব চূর্ন করেছিলেন হনুমান। তবে এটা জানেন কি যে  ভীম ও হনুমান দুই ভাই। হনুমানের জন্মদাতা পিতা হলেন কেশরী এবং ভীম হলেন পান্ডুর ছেলে। তবে তাদের দুজনেরই আধ্যাত্মিক পিতা হলেন বায়ু। তাই তারা একে অপরের সহদর। হনুমানের জন্মের  পেছনে যেমন বায়ুর অবদান ছিল ঠিক তেমনই ভীমের জন্মের পেছনেও ছিল বায়ুদেবের অবদান। 

 ৬। হনুমান নামের প্রকৃত অর্থ বিকৃত চোয়াল :

হনুমান এই শব্দটি আসলে একটি সংস্কৃত শব্দ। ‘হনু’ কথাটির অর্থ হল ‘ চোয়াল ‘ এবং ‘মান’ কথাটির অর্থ হল ‘বিকৃত’। অর্থাৎ বিকৃত চোয়াল। শৈশবকালে হনুমান সূর্যকে মধুর ফল ভেবে খেতে যাওয়ায় বজ্র দিয়ে ইন্দ্র দেবের প্রহার করায় হনুমানের চোয়াল বিকৃত আকার ধারন করে। 

 ৭। কিভাবে সুগ্রীবের সেনাপতি হলেন হনুমানজী :

যে সূর্যদেবকে হনুমান শৈশবকালে মধুর ফল ভেবে খেতে গিয়েছিলেন সেই সূর্যদেবকেই তিনি  বড় হয়ে তার গুরু করেছিলেন। সূর্যদেব অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছিলেন হনুমানের মেধায়। তিনি সমস্ত শাস্ত্র জ্ঞান লাভ করে ছিল মাত্র ষাট ঘন্টায়। সূর্যদেব গুরু দক্ষিণা হিসেবে সুগ্রীবের সঙ্গী হতে বলেছিলেন হনুমানকে। তাই তিনি সুগ্রীবের সেনাপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। সূর্যদেবেরই সন্তান ছিলেন সুগ্রীব।

৮। ভরত দ্বারা হনুমানজীকে আক্রমণ :

 একবার ভরত দ্বারা হনুমান তীরবিদ্ধ হয়েছিলেন। আমাদের সবারই জানা যে রাম রাবণের যুদ্ধে একবার লক্ষণের প্রান হারিয়েছিলেন। তখন লক্ষণকে ঠিক করতে সঞ্জীবনী বুটি আনবার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল হনুমানকে। হনুমান সেই আদেশানুসারে সঞ্জীবনী বুটি আনতে গেলে সঠিক সঞ্জীবনী বুটি চিনতে না পারায় গোটা গন্ধমাদন পর্বত তুলে এসে।ওই সময় ভরত মনে করেন যে অযোধ্যার ক্ষতি করতে কোন দৈত্য এসেছে। তখন তিনি শ্রীরামের নামে এক তীর ছোঁড়েন। সেই তীর হনুমানের পায়ে গিয়ে লাগে। তীর শ্রীরামের নামে ছোড়া হয়েছিল বলে সেই তীরটিকে প্রতিরোধ করেনি হনুমান। পরে আহত হনুমানের কাছ থেকে ভরত সব শুনে স্তম্ভিত হয়ে যান। তাঁকে সাহায্য করবার কথা বলেন তিনি। তবে হনুমান তার থেকে সাহায্য নিতে অস্বীকার করেন।

৯। হনুমানজীরা মোট ছয় ভাই ছিলেন : 

ব্রহ্মপুরাণ অনুযায়ী, মাতা অঞ্জনী ও কেশরীর মোট ছয়টি সন্তান ছিল। অর্থাৎ হনুমানের পাঁচ ভাই ছিল। তাদের নাম : মাতিমান, শ্রুতিমান, কেতুমান, গাতিমান ও ধৃতিমান। বাণররাজ কেশরীর জ্যেষ্ঠ পুত্র ছিলেন হনুমান। 

একাধিক তথ্য বিশ্লেষণ করে এই লেখা। এই নিয়ে একাধিক মতামত রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *