২৫ বছর বয়েসের আগেই মেয়েদের মা হওয়া উচিৎ। জানুন বিস্তারিত
আমাদের বাড়ির যারা গুরুজনেরা আছেন, বিশেষ করে মা, কাকিমা, জ্যেঠিমা বা দিদিমা তাদেরকে প্রায়ই বলতে শোনা যায় যে, মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে করে নেওয়া উচিত এবং তারপর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গর্ভধারণ করা উচিৎ। যেটা অবশ্যই আজকালকার যুগে দাঁড়িয়ে মেনে নেওয়াটা প্রায়ই অসম্ভব এবং এখন যেহেতু সবাই স্বাধীন থাকতে চায় ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে, এই কারণে মেয়েরা এখন দেরি করে তাদের বিবাহিত জীবন শুরু করতে চায়। কিন্তু গুরুজনদের বক্তব্য যে একেবারেই ফেলে দেওয়ার মতো নয়। এর পেছনে একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বা যুক্তি আছে।
এই নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ডাক্তার স্বাতী মিশ্রা ( Swati Mishra- Consultant, Birla Fertility & IVF Centre, Kolkata: MBBS, MS (OBG/GYN) Over 18 years of experience)
কি সেই যুক্তি?
যখন একটি নারীর মা হওয়ার সামর্থ্য তৈরী হয়, তখন ঋতুস্রাবের মাধ্যমে সে নিজে থেকেই জিনিসটা বুঝতে পারে। মাতৃত্ব বোধ অনুভব করা, সেটা উপলব্ধি করা খুবই আনন্দের বিষয়। কিন্তু, এমন কিছু কারণ থাকতে পারে, যার ফলে একটি মেয়ে মা হতে চাওয়া সত্ত্বেও মা হতে পারে না। এখানে আলোচনার বিষয়টি মূলত এই নিয়েই। আমাদের গুরুজনেরা বলে থাকেন যে মেয়েদের ২৫ বছর বয়সের মধ্যে বিয়ে করে নেওয়া উচিৎ। তার পেছনে যে বৈজ্ঞানিক যুক্তি আছে সেটা হল- অল্প বয়সে মেয়েদের ডিম্বাশয়ে যে ডিম উৎপন্ন হয়, তার সংখ্যা অনেক বেশি থাকে এবং মান খুব ভালো থাকে। সুতরাং কোন নারী যদি ২৫ বছর বয়সের আগে বা ২৫ বছর বয়সে গর্ভ ধারণ করেন, তাহলে সেক্ষেত্রে একটি সুস্থ বাচ্চার জন্ম দিতে পারেন। কিন্তু অবশ্যই এখন মানুষের জীবনযাত্রা অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। বিভিন্ন জিনিসপত্রের চাহিদার পাশাপাশি অর্থের চাহিদার পরিমাণ বিপুল হারে বেড়েছে এবং মানুষের মধ্যে, ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে স্বাধীনচেতার যে বোধগম্য তাও কিছু পরিমাণে বেড়েছে।
সেই দিক থেকে দেখতে গেলে আগে যেমন মেয়েরা অর্থের জন্য কারোর উপর নির্ভর থাকত, বর্তমানে সেই নির্ভর থাকা মেয়েদের সংখ্যার অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। বর্তমান যুগে বেশিরভাগ মেয়েরা দেরি করে বিবাহিত জীবন শুরু করতে চায়, সংসার শুরু করতে চায়, তার কারণ হলো- তারা নিজেরা রোজগার বা টাকা উপার্জন করতে চায়। তার ফলে নিজেদের ক্যারিয়ার ঠিক করে নেওয়ার পর তারা সংসার জীবনে প্রবেশ করতে চায়। এই কারণে এখন মেয়েরা ২৫ বছর বয়সের পরেই বিবাহিত জীবন শুরু করে।
বর্তমানে সন্তান ধারণের জন্য সৃষ্ট সমস্যার দিকগুলির , একটি অন্যতম প্রধান কারণ হলো বয়স করে গর্ভধারণ করা। ২৫ বছরের পর ডিমের পরিমাণ এবং গুণগতমান অনেকটাই কমে যায়। এর কারণে মিসক্যারেজ হওয়ার সম্ভবনা থাকে, বা যে সন্তান ভূমিষ্ঠ হচ্ছে, সে সম্পূর্ণ অর্থে সুস্থ ও স্বাভাবিক নাও হতে পারে। কিন্তু একথাও একেবারে সঠিক বিবাহিত জীবনের পাশাপাশি ক্যারিয়ার টাও সঠিকভাবে গড়ে তুলতে হয়। এখন চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক উন্নত হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের আওতায় একটি পদ্ধতি রয়েছে যার সাহায্যে ডিম ফ্রিজ করে রাখা যেতে পারে। অর্থাৎ কোন মহিলা যদি চায় যে, সে ৩০ বছরের আগে বিবাহিত জীবন শুরু করবে না এবং বেবি কনসিভ করবে না কিন্তু তার ডিমের যে গুণগত মান সেটা ভালো থাকুক যাতে তার সন্তান সুস্থ স্বাভাবিকভাবে জন্ম নিতে পারে, তার জন্য সে নিজের ডিমকে অল্প বয়সে ফ্রিজ করে রাখতে পারে। এর ফলে ৩০ বছর বয়সেও তার ডিমের বয়স ২৫ বছর মেয়েদের মতোই থাকবে এবং গুণগত মানের কোনো পরিবর্তন হবে না। এইরকম চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্যে অনেক তারকা দম্পতি তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছেন। কিন্তু একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন যে, এই চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্য ৫০ বছর বয়সের আগে অবধি নেওয়া যেতে পারে। এই প্রসঙ্গে একটি কথা চলেই আসে যে অনেকে গর্ভধারণ করতে চায় না তার একটি কারণ হচ্ছে, চেহারার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে। কারণ এই সময়ে দুইজনের খাবার একজনকে খেতে হয় যার কারণে বডি শেপ নষ্ট হয়ে যেতে পারে । তবে এই ধারণা একেবারেই ভুল। সন্তানসম্ভবা মায়েদের খুব বেশি পরিমাণে না খেলেও চলে। একটা বাচ্চার বড় হওয়ার জন্য ঠিক যে পরিমাণ পুষ্টির দরকার, সেই পরিমাণ পুষ্টিযুক্ত খাদ্য গ্রহণই যথেষ্ট। তবে কেউ যদি তার নিজের বডি শেপ ধরে রাখতে চান তাহলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার ছমাস পরে সে তার আগের ডায়েট চার্ট, ব্যায়াম পুনরায় অনুকরণ করতে পারে। এমন অনেক তারকা রয়েছে যারা মা হওয়ার পরেও তাদের বডি শেপ ধরে রেখেছেন।