ক্রিপ্টোকারেন্সি কতোটা নিরাপদ!
নিউজ ডেস্কঃ বর্তমানে প্রযুক্তি মানুষের দৈনন্দিন কাজ থেকে শুরু করে যোগাযোগ, কেনাকাটা এমনকি বিল পেমেন্টের ক্ষেত্রেও আমূল পরিবর্তন এনেছে। কোম্পানি হোক বা কাস্টমার সব সময় সাথে নগদ নিয়ে ঘোরা আর পছন্দ করেন না অনেকেই। আর উপভক্তার এই প্রয়োজনকে কাজে লাগিয়েই বাজারে আসছে অ্যাপল পে-এর মতো ক্যাশ- লেস পেমেন্টের একাধিক অ্যাপ। এখন স্মার্টফোনে একটা সামান্য ট্যাপের মাধ্যমে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ডিজিটাল রেজিস্টারে টাকা প্রদান করা সম্ভব। কিন্তু, এই ক্যাশ-লেস লেনদেন ব্যবস্থাকেই আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে বর্তমানে আবির্ভূত হয়েছে আরেক সম্পূর্নই নতুন পেমেন্ট সিস্টেম: ক্রিপ্টোকারেন্সি।
বিটকয়েনের কথা তো মনে হয় আমরা সকলেই শুনেছি। অল্প সময়ের মধ্যে বহুল জনপ্রিয়তা পাওয়া এই বিটকয়েনেই প্রথম ক্রিপ্টোকারেন্সিকে মূলধারায় নিয়ে এসেছে, এর জনপ্রিয়তার ওপর ভিত্তি করেই বাজারে এখন আত্মপ্রকাশ করছে নিত্যনতুন ক্রিপ্টো। বিশ্বে ইতিমধ্যেই রয়েছে ২০০০ এরও বেশি আলাদা আলাদা ক্রিপ্টোকারেন্সি তবে, সংখ্যাটা নিঃসন্দেহে আরো বাড়বে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণা থেকে জানা গেছে অধিকাংশ মানুষ ক্রিপ্টোকারেন্সির শুনলেও জিনিসটা ঠিক কি তা নিয়ে অধিকাংশের কোনো ধারণা নেই। তাই ক্রিপ্টো কি, এতে বিনিয়োগ কি নিরাপদ? কিভাবেই বা করবেন বিনিয়োগ? এই প্রশ্নগুলোর যথাযথ উত্তর দিয়ে ক্রিপ্টোর জগতে আপনার লেনদেনের নতুন যাত্রাকে যথাসম্ভব সহজ করে তোলার চেষ্টা করবো আজ আমরা।
ক্রিপ্টোকারেন্সি কি?
ক্রিপ্টোকারেন্সি এমন এক ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম যা লেনদেন যাচাই করার জন্য ব্যাঙ্কের উপর নির্ভরশীল নয়। এর পিয়ার-টু-পিয়ার সিস্টেমের মাধ্যমে আপনি যেকোনো জায়গায় পেমেন্ট পাঠাতে এবং গ্রহণ করতে সক্ষম হবেন। বাস্তব জগতে ব্যবহার করতে পারা টাকার পরিবর্তে,ক্রিপ্টোকারেন্সিতে হওয়া লেনদেনগুলো সম্পূর্ণভাবে জমা থাকে এক অনলাইন ডাটাবেসে ডিজিটাল এন্ট্রি হিসাবে। ক্রিপ্টোকারেন্সির ফান্ড স্থানান্তর করা হলে যাবতীয় লেনদেন সাথে সাথে রেকর্ড হয়ে যায় এক পাবলিক লেজারে। চাইলে অবশ্য আপনি একটি ডিজিটাল ওয়ালেটে নিজের ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলি জমা রাখতে পারেন।
এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, ক্রিপ্টোকারেন্সি নামটি কিন্তু এসেছে এটির লেনদেন যাচাই করতে ব্যবহৃত এনক্রিপশন থেকেই। অর্থাৎ, ওয়ালেট এবং পাবলিক লেজারে ক্রিপ্টোকারেন্সির ডেটা সঞ্চয় এবং ক্রিপ্টো লেনদেনের জন্য ব্যবহার করা হয় অত্যন্ত উন্নত কিছু কোডিং। এই এনক্রিপশনের মূল লক্ষ্যই হলো উপভক্তাকে সম্পূর্ন আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করা।
কিন্তু,ক্রিপ্টোকারেন্সি সত্যিই কি নিরাপদ?
ক্রিপ্টোকারেন্সি সাধারণত তৈরি হয় ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে। লেনদেনগুলি যেভাবে “ব্লক” এবং টাইম স্ট্যাম্পে রেকর্ড করা হয় সেগুলিকেই বর্ণনা করে এই ব্লকচেইন। গোটা প্রক্রিয়াটা জটিল ও প্রযুক্তিগত হলেও এর ফলেই ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের জন্য এমন এক ডিজিটাল লেজার তৈরি করা সম্ভব হয় যা হ্যাক করা প্রায় অসম্ভব।
উপরন্তু, লেনদেনের জন্য প্রয়োজন আলাদা আরেকটি দ্বি-ফ্যাক্টর অথেনটিফিকেসানেরও। উদাহরণস্বরূপ, লেনদেন শুরু করার আগে আপনাকে হয়তো একটি ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ড তৈরি করতে বলা হলো৷ তারপর, আপনাকে আবার হয়তো ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন বা ইমেইল এ পাঠানো একটি গোপন অথেনটিফিকেসান কোড লিখতে হতে পারে।
এতো সিকিউরিটি থাকা সত্ত্বেও অবশ্য ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলিকে কখনোই আন-হ্যাকাবেল বলা চলে না৷ অতীতে কয়েকটি ক্রিপ্টোকারেন্সি স্টার্টআপ হ্যাকের ফলে বেশ খানিকটা আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলেছিল। ২০১৮ সালে হ্যাকিং এর ফলে Coincheck- ৫৩৪ মিলিয়ন এবং BitGrail-১৯৫ মিলিয়ন ডলার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছিল। ইনভেস্টোপিডিয়া অনুসারে, ২০১৮ সালের সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টোকারেন্সি হ্যাকগুলির মধ্যে এই দুটি অন্যতম।
ক্রিপ্টোকারেন্সিতে নিরাপদে বিনিয়োগ করার জন্য আজ আপনাদের জন্য রইল বিশেষ ৪ টি টিপস।
যে কোনো রকম বিনিয়োগই কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু, বিশেষজ্ঞদের মতে কনজিউমার রিপোর্ট অনুযায়ী ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে ঝুঁকিটা আরো খানিকটা বেশি। তবু, চড়া রিটার্নের সুযোগ থাকায় এই মুহূর্তে ডিজিটাল মুদ্রায় বিনিয়োগ অনেক বেশি। প্রত্যেক বছর ক্রিপ্টোর মূল্য ক্রমশ বেড়ে চলেছে। তাই, আপনার যদি ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা থাকে, তাহলে আজকের টিপসগুলিতে একবার বুলিয়ে নিতে পারেন চোখ। হয়তো আপনার বিনিয়োগের রাস্তা হয়ে উঠবে খানিকটা মোলায়েম।
রিসার্চ এক্সচেঞ্জ
ক্রিপ্টোকারেন্সিতে এক ডলারও বিনিয়োগ করার আগে, ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ সম্পর্কে যতটা সম্ভব জানার চেষ্টা করুন। ক্রিপ্টোতে লেনদেনের জন্য বর্তমানে রয়েছে হাজারো প্ল্যাটফর্ম। প্রত্যেকটা সাইট নিয়ে ভালো করে গবেষণা করে নিজের সুবিধামতো প্লাটফর্ম পছন্দ করুন এবং বিনিয়োগ করার আগে অবশ্যই আপনার চেয়ে অভিজ্ঞ কোনো বিনিয়োগকারী সাথে কথা বলুন।
ডিজিটাল মুদ্রা কিভাবে সংরক্ষণ করবেন?
ক্রিপ্টোকারেন্সি ক্রয় করলে প্রয়োজন তা জমানোরও। আপনি চাইলে এক্সচেঞ্জে করে নিতে পারেন কিংবা ডিজিটাল “ওয়ালেটে” ক্রিপ্টো সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। বর্তমানে ক্রিপ্টো লেনদেনের বিভিন্ন অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে ইনবিল্ট ক্রিপ্টো ওয়ালেট থাকে। চাইলে সেখান বা অন্য কোনো ক্রিপ্টো ওয়ালেটে নিজস্ব সুবিধা, প্রযুক্তিগত প্রয়োজনীয়তা ও নিরাপত্তা যাচাই করে ক্রিপ্টো রাখতে পারেন আপনি। বিনিয়োগের আগেই অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের মতোই স্টোরেজও পছন্দ করে নেওয়া উচিত।
বিনিয়োগে বৈচিত্র্য হলো যেকোনো ভালো বিনিয়োগ কৌশলের আসল চাবিকাঠি। ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও এটি সমান সত্যি। বিটকয়েন জনপ্রিয় বলে আপনার সমস্ত অর্থ একেবারে বিটকয়েনে লাগিয়ে দেওয়া মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। মনে রাখবেন বিকল্প রয়েছে হাজার হাজার এবং আপনার বিনিয়োগকে বিভিন্ন মুদ্রায় ছড়িয়ে দেওয়াই সবচেয়ে ভাল।
মার্কেটে উত্থান পতনের জন্য প্রস্তুত থাকুন
ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজার অত্যন্ত অস্থির ফলে যে কোনো রকম উত্থান-পতনের জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকুন। বিনিয়োগের পর ক্রিপ্টোর দামে নাটকীয় পরিবর্তন দেখতে পাবেন আপনি। ফলে,আপনার বিনিয়োগের পোর্টফোলিও বা মানসিক স্বাস্থ্য যদি সেই চাপ সহ্য না করতে পারে তবে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ না করায় আপনার জন্য শ্রেয়।
ক্রিপ্টোকারেন্সি এখন জনপ্রিয়তার শিখরে কিন্তু মনে রাখবেন, এটি এখনও রয়েছে তার শৈশবকালে। নতুন কিছুতে বিনিয়োগ করার সঙ্গে সঙ্গে আসে নতুন কিছু চ্যালেঞ্জও।তাই প্রস্তুত থাকুন। বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করলে, অবশ্যই নিজস্ব গবেষণা করুন এবং শুরুতে বিনিয়োগ আরম্ভ করুন অল্প কিছু টাকা দিয়ে।