অফবিট

১৭টি প্রাসাদ, ১০০টি বিলাসবহুল গাড়ি। কিম জং উনের অবাক করা তথ্য

নিউজ ডেস্ক –  কোন দেশের কাঠামো কেমন থাকবে তা নির্ধারণ করে ও দেশের জনগণকে দিক-নির্দেশনা দেন সে দেশের সরকার কিংবা রাজা। তবে এমন একটি রাজা রয়েছে যার কারণে অতিষ্ঠ হয়ে রয়েছে রাজ্য বাসীরা।‌ এমন একটা দেশ হলো উত্তর কোরিয়া আর সেই দেশের রাজার নাম হল কিম জং উন। এই রাজার পাগলামির জন্য তাকে অনেকে টক অব দি ওয়ার্ল্ড বলেও আখ্যায়িত করেন। তবে কি এমন করত এই রাজা যার জন্য অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল গোটা দেশ। রাজার কর্মকান্ড জানতে হলে আগে তার জন্ম থেকে শুরু করা একান্ত প্রয়োজন। যদিও তার জন্ম মৃত্যু নিয়ে যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে ১৯৮৩-৮৪ সালের ৮ই জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন কিম জং উন। তবে দেশের নথিপত্র অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১৯৮২ সাল।তার বাবার নাম ছিল কিম জং ইল। যদিও শৈশবকালে অর্থাৎ কিম জং উনের যখন ১০ বছর বয়স ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মৃত্যু হয় তার পিতার তথা কোরিয়ার সর্বোচ্চ অধিনায়কের। পাগল রাজার জন্ম গ্রহণের দিন তাঁর পিতামহ ইল সাংয়ের জন্মদিনের ৭০ বছর এবং তার পিতা জং ইলের জন্মের ৪০ বছর পূর্তি হয়েছিল।  কারণ অনুমান এই সকল তথ্য মনে রাখার জন্যই কিম জং উনের জন্মের সময় কালটা উল্লেখ করা হয় ১৯৮২ সালে।

ইতিহাসে দেখা যাবে কিমের মা অর্থাৎ কো ইউং হি ছিলেন তার স্বামীর তৃতীয় স্ত্রী। যার কারণে কিমই ছিল সর্ব কনিষ্ঠ সন্তান। তবে বরাবরই নিজের একান্নবর্তী পরিবারের সঙ্গে ছিলেন না তিনি। যে মায়ের সঙ্গে শৈশব ও কৈশোর সুইজারল্যান্ডে কাটিয়েছেন। সেখানেই সেখানেই পড়াশোনা শিখে বড় হয়ে ওঠা। তবে তার পুরো জীবনটাই ছিল গোপনন্তে মোড়া। যদিও সেটি তার নিরাপত্তার খাতিরে। যার কারণে তিনি ছদ্দবেশী পরিচয় নিয়ে স্কুল জীবন পার করেছেন। তবে তার কিশোরে উঁকি মারলে দেখা যায় তুমি খুব একটা ভালো ছিলেন না পড়াশোনায় কিন্তু বাস্কেটবল খেলতে পারদর্শী ছিলেন। পাশাপাশি তার আইডেল হিসেবে ধরা হতো মাইকেল জর্ডানকে। তবে তিনি তাঁর পরিবারের কনিষ্ঠ সন্তান হওয়ার পরেও সিংহাসনে বসে ছিলেন। যদিও এর পেছনে রয়েছে যথেষ্ট কারণ।

কিম জং উনের ব্যক্তিগত রাধুনী কেনিজ ফুনজিমোটো একটি প্রতিবেদনে লিখেছে,  জং ইলের জ্যেষ্ঠ সন্তান এবং কিম জং উনের সৎ বড় ভাই কিম জং ন্যাম ২০০১ সালের জাল পাসপোর্টের সঙ্গে জাপানের প্রবেশ করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান যার কারণে তার বাবা তাকে ত্যাজ্যপুত্র করেন। যদিও পরবর্তীতে তিনি আততায়ীদের হাতে মারা যান। এরপরে  জং উনের আপন ভাই জং চুলের সবকিছুতে মিলির হওয়ার কারণে তাকে উত্তরাধিকার হিসেবে মনোনীত করা হয়নি। যার কারণে অবশিষ্ট কিম জং উন পিতার ছায়া পুত্র হাওয়ায় তাকেই উত্তরাধিকার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তার বাবা। কার্যত সেইখান থেকেই রাজনৈতিক শাসনে পদার্পণ করেন কিম জং উন। 

পরবর্তীতে ২০১০ সালের ১০ই অক্টোবর ওয়ার্কার্স পার্টিতে  ৬৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানে পিতার পাশে আসন পান তিনি। যায় কারণে তখনই সকল রাজনৈতিক বিদদের ধারণা স্পষ্ট হয়ে যায় যে সিংহাসনে কে বসতে চলেছেন। পরবর্তীতে সেই ধারণা স্পষ্ট হয় ২০১১ সালের ১৭ই ডিসেম্বর। এই দিন ওয়ার্কার্স পার্টিতে কিম জং উনকে সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে ঘোষণা করে তার পিতা। এ পরবর্তীতে এই রাজনৈতিক পদে একে একে উত্তীর্ণ হন তিনি। ২৪শে ডিসেম্বর উত্তর কোরিয়ান পিপলস আর্মির সুপ্রিম কমান্ডার ঘোষণা করা হয়। সে সময় তার বয়স ছিল ২০। সেই বছরই ৩০শে ডিসেম্বর থেকে তিনি উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে পদার্পণ করেন। তবে রাজনীতি সম্পর্কে কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিলোনা তার। পরবর্তীতে অবশ্য সময়ের যাঁতাকলে পড়ে সমস্ত কিছুতেই পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন কিম জং উন।

যদিও পরবর্তীতে তার সঙ্গে কঠোর, নির্মম, পাগল ও খামখেয়ালি কথাগুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যায়। তবে উত্তর কোরিয়ায় তার পিতার থেকেও জনসাধারণের জন্য বেশি চিন্তা করতেন কিম জং উন। তার পাশাপাশি তিনি ছিলেন যথেষ্ট কঠোর ও খামখেয়ালী। কারণ যখন গোটা দুনিয়া লোক ডাউনে বন্ধ তখন এখনো কিছু তোয়াক্কা না করে তিনি তিন পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। এতেই ক্ষান্ত হননি পাগল রাজা। পরবর্তী বছরে যুক্তরাষ্ট্রের সামনেই ব্যালাস্টিক মিসাইল উৎক্ষেপণের পরীক্ষা করেছিলেন তিনি। একাধিক পরমাণু পরীক্ষার জন্য বিদেশী বহু প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা হয় তার। সেই সূত্রে একদিন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। যেখানে তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পাগল বলতেও ছাড়েনি কিম জং উন। দীর্ঘ পাগলামির পর ২০১৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের সঙ্গে একটি আলোচনা সাক্ষাৎকারে পরমাণু অস্ত্র এবং ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পরীক্ষায় বিরত থাকার কথা বলেন তিনি। তিনি ছিলেন একজন কঠোর রাজা। যার কারণে লকডাউনের সময় কেউ বাড়ি থেকে বেরোলে তাকে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে এমন ঘোষণা করেছেন তিনি।‌ তবে তিনি রাজত্ব শাসনে বসার পর বহু গণহত্যা করেছেন যেখানে বাদ যায়নি  তার নিজের কাকা। এমন কঠোরতার কারণে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে তাকে গ্রেফতার করে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। যদিও টিকা কিভাবে মৃত্যু হয়েছে তার পরিবারের সকল সদস্যদের। জানা যায় ২০১৭ সালে তার সৎ ভাই কিম জং ন্যামকে স্নায়ুতন্ত্রের ওষুধ প্রয়োগ করে হত্যা করা হয়। যদিও এই হত্যার পেছনে কিম জং উনের হাত রয়েছে বলে অনেকে অনুমান করে। ‌ তবে রাজ্যবাসীকে প্রতিনিয়ত অত্যাচার চালানো থেকে শুরু করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের একাধিক বেড়াজাল ভেঙেছেন তিনি। যার কারণেই তাকে আদালতে ইন্টার্নেশনাল কিলার হিসাবে গণ্য করা হয়। কোন কিছুই সেরকম পাত্তা দেননি কিম জং উন। তবে এসকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যেও তিনি গোপনে বিয়ে করেছিলেন। যদিও সেটি জনগণের কাছে প্রকাশ পেয়েছিল ২০১২ সালে। 

কারণ উত্তর কোরিয়ার জনগণের রাজনীতি, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা কম ছিল। তবে আর পাঁচটি বাজে কাজের মধ্যেও তিনি দেশকে অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। তবে দেশের পাশাপাশি নিজের ব্যাঙ্ক ব্যালান্স যথেষ্ট করেছিলেন তিনি।  কিম জং উনের প্রভাব-প্রতিপত্তির দিকে নজর দিলে দেখা যায় তার ১৭টি প্রাসাদ, ১০০টি বিলাসবহুল গাড়ি এবং একটি ব্যক্তিগত জেট ছিল। পাশাপাশি তার ব্যাক্তিগত একটি আইল্যান্ড অর্থাৎ দ্বীপ রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *