বাস্কেটবল থেকে নার্স। শেষ ১০০ বছরে নারীদের ইতিহাস গোটা পৃথিবীতে
নিউজ ডেস্ক – বর্তমানে গোটা বিশ্ব পুরুষতান্ত্রিক হওয়ায় সেখানে নারীদের গুরুত্ব খুবই নগণ্য। সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে একজন সফল ও শিক্ষিত নারী হয়েও সহ্য করতে হয় সমাজের একাধিক লাঞ্ছনা-বঞ্চনা। কিন্তু পৃথিবীতে খোঁজ করলে এমন কয়েকশো নারী দেখতে পাওয়া যাবে যারা ইতিহাস গড়েছে। এসকল সমাজ পরিবর্তন নারীদের নিয়েই আজকের প্রতিবেদন লেখা হচ্ছে।
১)ক্যাথেরিন সুইজার – ইতিহাসের পাতায় স্বর্নাক্ষরে খোদাই রয়েছে ১৯৬৭ সালে বোস্টন ম্যারাথনে প্রথম স্থান অধিকার করে ক্যাথেরিন সুইজার নামে এক মহিলা। তবে একজন মহিলা হয়ে যখন দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান তখন সেখানে উপস্থিত পুরুষ সমাজের কেউই খুশি হননি। এই কথাটির সত্যতা যাচাই করে সেই মুহূর্তকার ফটোগ্রাফি।
২) ফরাসি মেয়েরা – যুদ্ধবিগ্রহের সময় অর্থাৎ ১৯৪৪ সালে ফরাসির অঞ্চলে হচ্ছিল ব্যাপক গান ফায়ার। সেই মুহূর্তে বিপদে পড়েছিল কয়েক হাজার শিশু। তাদের সকলের জননী হয়ে নিজের বক্ষে আগলে নিয়েছে ফরাসি মেয়েরা। যখন নিজের প্রাণের ভয়ে পুরুষরাও এগিয়ে আসেননি তখন প্রাণের বাজি লাগিয়ে শিশুদের রক্ষা করতে একমাত্র এগিয়েছিল প্রকৃতির অর্থাৎ নারী।
৩) মেরিন কর্পস – ইউএসএ-তে প্রতিবছর মেরিন কলেজ যোগ দেয় শতাধিক পুরুষ। এমন একটি সময়কাল ছিল যেখানে পুরুষদের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে সেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিল নারীরাও। সেই সময় কাল অর্থাৎ ১৯১৮সালটা খচিত রয়েছে কালের ইতিহাস।
৪) মড ওয়াগনার – প্রাচীন যুগ থেকে যখন আধুনিক যুগে সমাজ রূপান্তরিত করল তখন একমাত্র সাজসজ্জা ও পোশাক বাহারে পরিবর্তন আসে পুরুষদের। নারীদের ঘোমটা দেওয়া ছাড়া কোনো সাজই বরাদ্দ ছিল না। কিন্তু ১৯০৭ সালের পাতায় নজর দিলে দেখা যায় মড ওয়াগান নামে একজন নারী প্রথম নিজের দেহে ট্যাটু করায়। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে গোটা পৃথিবীতে মেয়েদের ট্যাটু করার বিষয়টিও সহজ হয়ে উঠেছে।
৫) ১৯৪৩ সালে একজন মহিলা প্রথম উইনি দ্য ওয়েল্ডারে কাজ করেন। তার আগে কোনো মহিলাই শিপইয়ার্ডে কোনদিন কাজ করেননি।
৬) লেডি পাইলট – যুদ্ধ-বিগ্রহ এক্ষেত্রে বরাবরই পুরুষদের অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রথম এক মহিলা পাইলট হয়েছেন। এমনকি যুদ্ধ জয় করেছেন তিনি। এরপর থেকেই মহিলা পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখে বহু তরুণী।
৭) সুইমিং কস্টিউম – সুইমিং কস্টিউম হচ্ছে এমন একটি প্রেস যা সাঁতার কাটতে সাঁতারুকে সহায়তা করে। পুরুষদের ক্ষেত্রে সামান্য একটি ছোট হাফপ্যান্ট হয় আর নারীদের ক্ষেত্রে পোশাকটা হয় একটু ভিন্ন। তবেই প্রাচীন যুগে নারীর সভ্যতার গণ্ডি থেকে বেরিয়ে একজন মহিলা সাঁতারু পোশাক পড়ে ছিলেন। কিন্তু সমাজের কাছে সেটি অশ্লীলতা হিসেবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। কিন্তু পরবর্তীতে অর্থাৎ বর্তমানে উন্নতি সমাজে লেডি সুইমিং কস্টিউম কোন অবাঞ্ছনীয় ব্যাপার নয়।
৮) ১৯৮০ সালে এক নারী প্রথম সামুরাই হয়েছিল। যেটা প্রথম ইতিহাসে ছিল প্রথম নারী।
৯) মহীয়সী বৃদ্ধা – ১৯৯০ সালে তার বাড়ির উপর কিছু দুষ্কৃতীরা অতর্কিত হামলা করে। সেই সময় বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন একমাত্র ১০৬ বছরের একজন আর্মেনিয়ান বৃদ্ধা। তিনি নিজ হাতে অস্ত্র তুলে রক্ষা করেছিলেন তার বাড়ি।
১০) এলন ও নিল – নিজের সংসারে গণ্ডি থেকে বের হতে পারেনি বহু মহিলারাই। কিন্তু সমাজের বেড়াজাল ভেঙে স্কেটবোর্ডার হয়েছিলেন এলন ও নিল নামের একজন মহিলা। সেই সময় ছিল ১৯৭৬।
১১) লিওলা এন কিং – যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী ট্রাফিক পুলিশ হয়েছিলেন লিওলা এন কিং। যদিও সে সময় তার নিন্দা করতে ছাড়েননি সমাজের একাংশ মানুষ। কারোর পরোয়া না করেই স্বপ্নকে বেছে নিয়েছিলেন এই মহীয়সী নারী। এমন কার্যকরে ইতিহাসের পাতায় খোদায় করে রেখেছিলেন ১৯১৮ সালটিকে।
১২) বস্কেটবল – খেলাধুলা সব সময় গণনা করা হয় ছেলেদের। কিন্তু ১৯০২ সালে ছেলেদের টেক্কা দিয়ে প্রথম বাস্কেটবল প্লেয়ার হয়েছিলেন এক নারী।
১৩) নার্স – চিকিৎসাবিজ্ঞান কিংবা খেলার মাঠ প্রতিবর্ত বিরাজ করে রয়েছে এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। কিন্তু ফ্রান্সের নরম্যান্ডি যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৪৪ সালে প্রথম নার্স হয়েছিলেন একজন মহিলা।
১৪) বাইকার্স – প্রাচীন সমাজে মেয়েরা বাইকার্স হবে এটি ছিল একটি দুঃস্বপ্ন। তবে ১৯৭৩ সাল থেকে একটি মহিলা বাইকার গ্রুপ খুব খ্যাতি অর্জন করে। সেই গ্রুপ কি নাম ছিল হেলস অ্যাঞ্জেলসর।
১৫) মহিলা ফটোগ্রাফার – ১৯৩৪ সালে নিউইয়র্কের ক্রাইসলার বিল্ডিংয়ে মার্গারেট ব্রুক হোয়াইট নামের একজন মহিলা ছবি তুলে গোটা দেশকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন।
১৬) রোলার ডার্বি – রোলার ডার্বি আবিষ্কার হওয়ার পর থেকেই সেখানে অংশগ্রহণ করে আসছেন সকল পুরুষ। তবে ১৯৫০ সালে মহিলাদেরকেও অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।
১৭) ভ্রমণকারী নারী – মেয়েদেরকে দূর বিদেশে পাড়ি দেওয়া হতো না। অর্থাৎ ঘরের চার গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ হয়ে থাকত সকল নারীরা। ১৯২৮ সালে সকল নিয়ম ভেঙে এমিলিয়া এরহার্ট নামের এক মহিলা বিমানে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়েছিলেন।
১৮) মেডিকেল স্টাডি – নারীদের শিক্ষা ছিল একটি সমাজের কাছে আইনত অপরাধ। যার কারণে নিজের সই করা ছাড়া আর সেরকম বিদ্যা দেওয়া হতো না মেয়েদের। তবে সমাজের একঘেয়েমি প্রথা ভেঙে ১৯৬২ সালে মেডিসিন নিয়ে পড়াশোনা করে আফগান নারীরা।