ভগবান বিষ্ণুর মাথা কাটা পড়ার পেছনে কি কারন ছিল জানেন?
নিউজ ডেস্কঃ পুরাণ অনুসারে তিনটি মুখ্য রূপের মধ্যে একটি রূপ ছিল বিষ্ণুর এবং অন্য দুটি রূপ ছিল সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা ও মহেশ্বর।এই তিন দেবতাদের একসাথে ত্রিদেব বলা হয়।এই ত্রিদেবের মধ্যে ব্রহ্মাকে সৃষ্টিকর্তা, শিবকে সংহারক কর্তা এবং বিষ্ণুকে পালন কর্তা বলা হয়ে থাকে। কিন্তু আপনারা কি জানেন যে আমাদের পালনকর্তা ভগবান বিষ্ণুর মাথা ধড় থেকে আলাদা হয়ে যায় দেবতাদের একটি ভুলের কারনে। নিশ্চয় মনের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে যে কি এমন ভুলের কারনে ভগবান বিষ্ণুর মাথা কাটা পড়েছিল? না জানলে জেনে নিন এর কারনটি।
পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, একদিন বৈকুণ্ঠে ভগবান বিষ্ণু শেষ নাগের উপর বিশ্রাম করছিলেন তখন দেবী লক্ষী তার পাদুকায় বসেছিলেন। ভগবান বিষ্ণুদেবের নিদ্রা ভঙ্গ হওয়া পর তিনি তার চোখ খুললেন এবং তার পাদুকায় বসে থাকা দেবী লক্ষ্মীকে দেখে হাসতে লাগলেন। দেবী লক্ষ্মী ভগবান বিষ্ণুর এই আচরণ দেখে ভাবলেন যে বিষ্ণুদেব তাকে নিয়ে মজা করছেন।এবং এতে দেবীর মনে হলো যে তার সুন্দরতা নিয়ে বিষ্ণুদেব উপহাস করেছেন।এতে দেবী ক্রোধিত হয়ে যান এবং ভগবান বিষ্ণুকে অভিশাপ দেন যে যেই সুন্দর চেহারার জন্য এত অহংকার সেই অহংকার একদিন ক্ষুন্ন হবে আপনার মস্তক ধড় থেকে আলাদা হয়ে।এরপর কয়েক বছর পর একটি যুদ্ধের সময় ভগবান বিষ্ণু ক্লান্ত হয়ে পড়লেন।এই ক্লান্তির কারনে তিনি নিদ্রায় চলে গেলেন আর এই নিদ্রার ঘোরে তিনি তার ধনুকে মাটিতে খাড়া করলেন এবং আরেকটি প্রান্তে তিনি মাথা ঠেকিয়ে রেখেছিলেন। ওই সময়ে একটি যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন দেবতারা।আর এই যজ্ঞে দেওয়া আহুতি যতক্ষণ ত্রিদেব অর্থাৎ ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর গ্রহণ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই যজ্ঞ সম্পন্ন হবে না। যখন ওই যজ্ঞ সমাপ্তির দিকে যাচ্ছিল তখন যজ্ঞের পুরোহিতরা বলেন যে ভগবান বিষ্ণু নিদ্রার ভঙ্গ করা দরকার।তা না হলে এই যজ্ঞ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।তখন ভগবান বিষ্ণুর নিদ্রাভঙ্গের প্রচেষ্টা করেন দেবতারা মিলে কিন্তু শত চেষ্টা করেও ভগবান বিষ্ণুর নিদ্রাভঙ্গ করতে পারে না।
এরপর তারা ধনুকের সুতো কেটে দিলেন যার ফলে ভগবান বিষ্ণুর মস্তক ধড় থেকে আলাদা হয়ে যায়।ভগবান বিষ্ণুর মস্তক ধড় থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ায় বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে হাহাকার শুরু হয়ে যায়।তখন ভগবান বিষ্ণুকে পুনরায় জীবিত করার জন্য দেবতারা আদি শক্তির কাছে প্রার্থনা করেন।তখন দেবী আদিশক্তি দেবতাদের বলেন যে বিষ্ণুর ধরের সাথে ঘোড়ার মস্তক লাগানোর কথা।তখন দেবতারা দেবশিল্পী ভগবান বিশ্বকর্মা সাহায্যে ভগবান বিষ্ণুর ধড়ের সাথে ঘোড়ার মস্তক জুড়ে দিতে সক্ষম হলেন।
ঘোড়ার মস্তক জুড়ে দেওয়ার পরেই ভগবান বিষ্ণু জীবিত হয়ে গেলেন।আর ভগবান বিষ্ণু এই নতুন অবতার হয় গ্রীব অবতার রূপে পরিচিত হয়।আসলে এটি ছিল ভগবান বিষ্ণুরই একটি মায়া। ভগবান বিষ্ণুর এই অবতার নেওয়ার পিছনে রয়েছে একটি রোমাঞ্চকর কাহিনী।কাহিনী হল যে ‘মধু’ এবং ‘কৈটভ’ নামক রাক্ষস ছিল যে ভগবান ব্রহ্মার থেকে সমস্ত বেদ নিয়ে গিয়েছিল।আর ওই রাক্ষসের ওপর বরদান ছিল যে তাদের মৃত্যু হবে এমন কারোর হাতে যার মাথা হবে ঘোরা এবং ধড় মানুষের হবে।এই জন্য ভগবান বিষ্ণু ওই দুই রাক্ষসে বিনাশ করতে হয়গ্রীব অবতার ধারন করেন।অবশেষ হয়গ্রীব অবতারে ভগবান বিষ্ণু ওই দুই রাক্ষসকে বধ করে সমস্ত বেদ পুনরায় ব্রহ্মাকে ফিরিয়ে দিলেন।