অফবিট

কংগ্রেস ফাউন্ডেশনে টাকা আসত বিদেশ থেকে। চীন বন্যার ত্রাণ উপলক্ষে প্রায় কুড়ি লাখ টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিল ভারতকে

নিজস্ব সংবাদদাতা: কথা উঠেছিল গলওয়ান ভ্যালির সংঘর্ষ নিয়ে। আসুন তার আগে তাহলে একটু চীনের সাথে ভারতের যোগসুত্রটা বুঝে নেওয়া যাক। রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশন নিজে থেকেই 2005-06 সালে অন্যান্য NGO র মতো প্রকাশ করেছিল তাদের বার্ষিক রিপোর্টে। যাতে স্পষ্ট উল্লেখিত ছিলো যে চিনের কমিউনিস্ট পার্টি এবং এমব্যাসি মানুষের সাহায্যের জন্য বেশ কয়েক কোটি টাকার অনুদান দিয়েছিল সেখানে। মানুষের সাহায্যে পাশে দাঁড়ানো তো কোনো খারাপ ব্যাপার নয়! কিন্তু গন্ডগোল যেখানে তা হল দেশে চীন বিরোধী আন্দোলনের মাত্রা তীব্রতা পেতেই 2005 ও 2006 সালের এই বার্ষিক রিপোর্ট সরিয়ে নেওয়া হয় রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশনের অফিসিয়াল সাইট থেকে। লিংকে বারবার ক্লিক করলেও কোনো তথ্য আসে না পেজে। পুনরায় 2007-08 সালে এই RGF অর্থাৎ রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশনেরই এক পুরনো রিপোর্ট পিডিএফ আকারে ওয়েবসাইটে আর্কাইভ করে রাখা অবস্থায় খুঁজে পাওয়া যায়। লুকিয়ে রাখা এই পিডিএফ থেকে জানা যায় চীন ‘রাজীব গান্ধী ইনস্টিটিউট ফর কনটেম্পোরারী স্টাডিজ’ বা সংক্ষেপে RGICS কে প্রায় 2 কোটি টাকা অনুদান দিয়েছিল। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, এই RGICS এর মূল কাজ হলো দেশের বিশিষ্টজনদের নিয়ে এক ‘পলিসি থিংকট্যাংক’ বানানো এবং ওখানে আলোচিত হওয়া পলিসিগুলোকে সরকারিভাবে যাতে কাজে লাগানো যায় সে চেষ্টা করা।

2008 সাল, নেপাল বিহার সীমান্তে নদীতে বাঁধ ভেঙে বন্যা হলে সেই সময় চীন বন্যার ত্রাণ উপলক্ষে আবার প্রায় কুড়ি লাখ টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিল ভারতকে। তবে অদ্ভুত ব্যাপার হলো অন্যান্য দেশের মতো সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে টাকা দান না করে চীন টাকাটা পাঠিয়েছিলো সরাসরি ইন্ডিয়ান রেড ক্রস সোসাইটিকে। বিহারের এমন এক দুর্যোগের সময় মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে টাকা না দিয়ে সম্পূর্ণ টাকাটা এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কে দান করায় ব্যাপারটা যথেষ্টই গোলমেলে ঠেকে। তবে হতেই পারে কংগ্রেসের সাথে নিতিশ কুমার কখনো জোট না বাঁধার ফলেই চিনের এমন আচরণ। সে কারণ যাই হোক না কেন সেটি আলোচ্য বিষয় হওয়া উচিত নয়।

রেড ক্রস প্রসঙ্গ যখন উঠলোই তখন এক্ষেত্রে উল্লেখ্য চিন রেডক্রসকে অনুদান দেওয়ার ঠিক দুবছর আগে অর্থাৎ 2006 সালে ইন্ডিয়ার হেড অফিসের মূল অফিস থেকে ঘুরে গেছিলো সেই দেশের প্রতিনিধি দল।

একইসাথে সেই সময় জানা যায় যে ইউপিএ সরকারের আমলে রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশনে বিভিন্ন পিএসইউ যথা ওএনজিসি বা সেইলেরাও নিয়মিত বিভিন্ন ভিত্তিতে করে গেছে অর্থ সাহায্য। এছাড়া চমকে দেওয়ার মতো খবর হলো ভারতের ব্যান হওয়া ধর্মগুরু জাকির নায়েকও এক সময়ে অর্থ সাহায্য করেছেন এই ফাউন্ডেশন।

এতটুকু শুনেই যদি চমকে গিয়ে থাকেন তবে অবিশ্বাস্য আরেকটা তথ্য দিই আপনাকে।

ভারতী এয়ারটেল কোম্পানিকে চীন 2006-07 অর্থবর্ষে প্রায় 90 লাখ টাকার অর্থ সাহায্য করেছিল। এতোটা পেছনে যাওয়ারও প্রয়োজন নেই। হালফিলেই কয়েকদিন আগে অব্দি টাটার সাথে চুক্তি হওয়ার পূর্বে চিনা কম্পানি হুয়াওয়ের ফাইভ-জি পরিসীমা ভারতে আসার জন্য তাবেদারী করছিল এয়ারটেল এর মালিক ভারতী নিজেই। 

এমনকি 2008 সালে চীন অরুণাচল প্রদেশ বেশ কয়েকবার অগ্রাসন দেখালেও ডিফেন্স মিনিস্টার তরফ থেকে কড়া নিন্দা ছাড়া কাজের কাজ কিছুই করা হয়নি।

একই সময় ভারতের স্পোর্টস এর ইতিহাসেও আসে ভয়ঙ্কর বেশ কিছু পরিবর্তন। সেই সময় বেজিং অলিম্পিকে শুটিং ক্যাটাগরিতে জিতে ভারতকে সোনা এনে দেন অভিনব বিন্দ্রা। কিন্তু জানলে অবাক হবেন এত বড় ঘটনার মাঝেও প্রধানমন্ত্রী হিসাবে অভিনব বিন্দ্রার জেতা অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বা সমাপ্তি অনুষ্ঠান কোনটাতেই থাকতে পারেননি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। কারণ সেইবার চীনের অলিম্পিক কমিটি ঠিক করেছিল প্রত্যেক দেশের ক্রীড়ামন্ত্রী কে আমন্ত্রণ জানানো হবে এবং সেই ক্রীড়ামন্ত্রীই ঠিক করবেন যে কোন দেশ থেকে প্রধান অতিথি হিসেবে কাকে আমন্ত্রণ করা হবে। যেখানে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ করাটা ছিল ন্যায্য সেখানে তৎকালীন ক্রীড়ামন্ত্রী ও কংগ্রেস সাংসদ M S Gill এর কাছে আমন্ত্রণ এলে তিনি জনসাধারণ ও সংবাদ মাধ্যমের চোখ এড়িয়ে খুব লো প্রোফাইল একটা ভিজিটের সিদ্ধান্ত নেন। সেইবার চীনে ভারত থেকে প্রধান অতিথি হিসেবে ক্রীড়ামন্ত্রী M S Gill ছাড়া বেজিংয়ে গেছিলেন সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, রবার্ট ভদ্রা এবং তাঁদের দুই সন্তান। প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি বা ন্যূনতম একজন মন্ত্রী না হওয়া সত্বেও প্রটোকল ভেঙেই এয়ারপোর্টে তাদের স্বাগত জানান চীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদের একজন মন্ত্রী। কিন্তু, অলিম্পিকের অনুষ্ঠানে যেখানেই ভিআইপি বক্সে অন্যান্য দেশের বড় বড় নেতারা উপস্থিত ছিলেন সেখানে ভারত থেকে উপস্থিত ছিলেন কেবলমাত্র ক্রীড়ামন্ত্রী গিল। আর গান্ধী পরিবার সেখানে গেলেও ভারতে কোনো মন্ত্রী পদে তারা না থাকায় অলিম্পিকের প্রটোকল মেনে তারা বসতে বাধ্য হন সাধারণ দর্শকাসনেই। স্বাভাবিক ভাবেই  তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং দলের সুপ্রিমোর মুখের ওপর কোনো রকম মন্তব্য করতে পারেননি। 

অলিম্পিক শুরু হওয়ার আগে তারা ভারতীয় খেলোয়াড়দের মনোবল বৃদ্ধির জন্য গেমস ভিলেজে গিয়ে তাদের সাথে দেখা করে আসেন ঠিকই কিন্তু এই অলিম্পিককে কাজে লাগিয়েই ব্যস্ত মিডিয়ার নজর এড়িয়ে ভারতীয় উপমহাদেশের বুকে প্রথমবারের মতো  mতারা এক চুক্তি করেন চীনের শাসক দল চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টির সাথে। চুক্তির মূল কথা ছিল ” ভারত ও চীন এই দুই দেশ নিজেদের সাহায্যার্থে তথ্য ও প্রযুক্তি দিয়ে একে অপরকে সহায়তা করবে।” ভারতের তরফে এই চুক্তির সাক্ষরকারী ছিলেন রাহুল গান্ধী। আর অপরদিকে চিনের পক্ষে স্বাক্ষরকারীর ছিলেন উন শি জিনপিং, চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *