অফবিট

চীনের সীমান্তের কাছে ভারতের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি

গ্রীক পৌরানিক কাহিনী অনুযায়ী আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগে বিশ্বে এমন এক রাক্ষসী মহিলা ছিল যার চোখের দিকে তাকালে মানুষ পাথর হয়ে যেত। ওই মহিলার মাথায় চুলের বদলে অসংখ্য জীবন্ত সাপ ছিল যারা কাছে আসা কোনও ব্যক্তিকে বিষ প্রয়োগে মেরে ফেলত। গ্রীসের বহু রাজা ও যোদ্ধা অনেকবার চেষ্টা করেছিল ওই রাক্ষসী মহিলাকে হত্যা করার কিন্তু কেউই সফল হয়নি। উপরন্তু যারা ওই মহিলাকে হত্যা করতে গিয়েছিল তাদের কেউই আর ফিরে আসেনি, হয় তারা পাথরে পরিনত হয়েছিল নয়ত তাদের হত্যা করা হয়েছিল। ওই মহিলাটির নাম মেডুসা যাকে গ্রীক পুরানে সর্পকেশী রাক্ষসী বলা হয়েছে। কিন্ত মেডুসা প্রথমে এমন ভয়ংকর দর্শন মহিলা ছিলনা, গ্রীক পুরান অনুযায়ী মেডুসা গ্রীসের সবচেয়ে সুন্দরী নারীদের একজন ছিল। মেডুসার কোনও অপরাধ ছাড়াই তাকে এমন একটি সাজা দেওয়া হয় যাতে সে কুৎসিত দর্শন ভয়ানক রাক্ষসীতে পরিনত হয়। ২০১০ সালে তৈরি হওয়া হলিউডের বিখ্যাত সিনেমা ক্ল্যাশ অফ দি টাইটানসে মেডুসাকে পরিপূর্ন ভাবে দেখানো হয়েছে। দ্বিতীয় শতকে সাহিত্যিক ডায়োনিসিওস স্কাইটোব্র্যাচিয়ান মেডুসাকে লিবিয়ার অধিবাসী বলেছেন, আবার গ্রীক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস মনে করেন মেডুসার গল্প উত্তর আফ্রিকার বারবেরিয়ানদের দ্বারা প্রচলিত। 

গ্রীক পুরানে মেডুসার জন্মবৃত্তান্ত বা বাবা মায়ের সঠিক পরিচয় জানা যায়নি। কোথাও বলা হয়েছে মেডুসা সমুদ্রের দেবতা ফোরসিস ও দেবী সিটোর সন্তান আবার কোথাও বলা হয়েছে দানব দম্পতি একিডনা ও টাইফনের কন্যা মেডুসা। মেডুসারা দুই বোন ছিল যারা অমর ছিল কিন্তু মেডুসা অমর ছিলনা। মেডুসাকে গোরগো বা গোর্গোনও বলা হয়েছে। গ্রীক পুরানে মেডুসা সহ তার দুই বোন ইউরিয়াল এবং স্টেনোকে গোর্গোন বলা হয়েছে। বলা হয় ছোটবেলা থেকেই অসাধান সৌন্দর্যের অধিকারী ছিল মেডুসা। খুব কম বয়স থেকেই নিজেকে দেবী এথেনার সেবক হিসাবে উৎসর্গ করে মেডুসা। দেবী এথেনার মন্দিরেই থাকতো এবং প্রধান পুরোহিত হিসাবে তার সেবা করতো মেডুসা। গ্রীক পুরানে দেবী এথেনাকে গ্রীসের সবচেয়ে শক্তিশালী দেবতা জিউসের মেয়ে বলা হয়েছে যাকে প্রাচীন গ্রীসে বুদ্ধি, সাহস, যুদ্ধ ও শিল্পকলার দেবী হিসাবে পূজো করা হত। আজও গ্রীক স্থাপত্যে দেবী এথেনার মূর্তি লক্ষ্য করা যায় যার এক হাতে একটি বল্লম এবং অন্য হাতে একটি ঢাল রয়েছে এবং মাথায় শিরস্ত্রান রয়েছে। দেবী এথেনার মন্দিরে প্রধান পুরেহিত হওয়ার জন্য অনেক কঠিন নিয়ম ছিল। যে মহিলা দেবী এথেনার মন্দিরের প্রধান পুরোহিত হত তার চরিত্রও দেবী এথেনার মতোন পবিত্র হতে হত, তাকে আজীবন ব্রহ্মচারী হতে হত। মেডুসা ছোট থেকেই দেবী এথেনার প্রতি আকৃষ্ট ছিল এবং সে প্রধান পুরোহিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মেডুসার ভয়ানক সর্পকেশী রাক্ষসীতে পরিনত হওয়ার পেছনে দুটি কাহিনী পাওয়া যায়। 

প্রথম কাহিনী অনুযায়ী বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মেডুসার সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পেতে থাকে। যার কারনে দেবী এথেনার মন্দিরে পূজো করতে আসা মানুষজনও মেডুসার প্রশংসা করতে থাকে, বিশেষ করে মেডুসার সোনালী চুলের সবাই প্রশংসা করতো। এসব শুনে মেডুসারও নিজের প্রতি গর্ব চলে এসেছিল যার কারনে দেবী এথেনা ক্রুদ্ধ হয়ে মেডুসাকে অভিশাপ দিয়েছিল কুৎসিত হয়ে যাওয়ার এবং মাথার সমস্ত চুল সাপে পরিনত হয়ে যাওয়ার। তবে রোমান কবি ওভিডের লেখায় মেডুসার অভিশাপের পেছনে আরও একটি কাহিনী পাওয়া যায়। 

এই কাহিনী অনুযায়ী সমুদ্রের দেবতা নেপচুন বা পসাইডন ও মেডুসা একে অপরের প্রেমে পড়ে গিয়েছিল। আবার পসাইডন ও দেবী এথেনার মধ্যে শত্রুতা ছিল, তাদের মধ্যে যুদ্ধও হয়েছিল যাতে দেবী এথেনা পসাইডনকে পরাজিত করেছিল। একদিন মেডুসা ও পসাইডন উভয়েই দেবী মিনার্ভার মন্দিরেই সঙ্গমে লিপ্ত হয়। প্রাচীন রোমে দেবী এথেনার সাদৃশ্য দাবীকেই মিনার্ভা বলা হত। দেবী এথেনার মন্দিরে সঙ্গম করা গর্হিত অপরাধ ছিল। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে দেবী এথেনা মেডুসাকে অভিশাপ দেয় তার মাথার সমস্ত সোনালী চুল জীবন্ত সাপে পরিনত হবে এবং যে তার চোখের দিকে তাকাবে সে নিষ্প্রান পাথরে পরিনত হবে। বলা হয় এই অভিশাপের পরেই মেডুসার গায়ের চামড়া সাপের মতোই সবুজ, আঁশটে হয়ে গিয়েছিল। মেডুসাকে দেওয়া এই অভিশাপের কারনে মেডুসার সবচেয়ে কাছের বন্ধুই পাথরে পরিনত হয়ে যায়। যার কারনে প্রচন্ড কষ্টে মেডুসা দেবী এথেনার মন্দির ছেড়ে গহীন জঙ্গলে চলে যায়। এরকমই এক জঙ্গলে মেডুসা আশ্রয় নেওয়ার সময় তার মাথা থেকে প্রচুর সাপ মাটিতে পড়ে যায়। বলা হয় সেই স্থানই বর্তমান দিনে আফ্রিকা, এজন্য আফ্রিকা মহাদেশে সবচেয়ে বেশী বিষাক্ত সাপ রয়েছে। বহু প্রানী মেডুসার চোখের দৃষ্টির কারনে পাথরে পরিনত হয়ে যায়। এই অভিশাপের কারনে মেডুসা বাধ্য হয়ে লোকালয় ছেড়ে দূর সমুদ্রে এক নির্জন দ্বীপে থাকা শুরু করে। দেবী এথেনার এই অভিশাপের কথা সমগ্র গ্রীসে ছড়িয়ে পড়ে। গ্রীসের বহু যোদ্ধা, রাজা মেডুসাকে হত্যার জন্য ওই দ্বীপে অভিযান করে কিন্তু কেউই আর প্রান নিয়ে ফিরে আসতে পারেনি, সবাই পাথর হয়ে গিয়েছিল ওই দ্বীপে। 

তৎকালীন গ্রীসে মেডুসার মাথা কেটে আনার জন্য মোটা পুরস্কার পর্যন্ত ঘোষনা করা হয়েছিল কিন্তু কারও সামর্থ হয়নি মেডুসাকে হত্যা করার। অবশেষে এক গ্রীক যুবক পার্সিয়াস রাজি হয় মেডুসাকে হত্যা করতে। গ্রীক পুরান অনুযায়ী পার্সিয়াস একজন অর্ধ দেবতা ছিল কারন তার বাবা ছিল জিউস যে দেবতাদের রাজা এবং মা ছিল একজন মানব মহিলা ড্যানে। সেরিফোস দ্বীপের রাজা পলিডেকটেস চালাকি করে পার্সিয়াসকে মেডুসাকে হত্যা করতে পাঠায়। কারন পলিডেকটেস ড্যানেকে ভালবাসতো তাই চালাকি করে পলিডেকটেস পার্সিয়াসকে মেডুসাকে হত্যা করতে পাঠায় কারন সে জানতে মেডুসাকে যারা হত্যা করতে যায় তারা কেউই ফিরে আসেনা। পার্সিয়াস জিউসের সন্তান হওয়ায় সমস্ত গ্রীক দেবতা পার্সিয়াসকে সাহায্য করে মেডুসাকে হত্যা করতে। দেবী এথেনা পার্সিয়াসকে একটি আয়না যুক্ত ঢাল দেয়, দেবতা হার্মিস সোনার পাখা বিশিষ্ট জুতো দেয়, দেবতা হেফেস্টাস তাকে একটি তরোয়াল দেয় এবং দেবতা হেডেস একটি বিশেষ শিরস্ত্রান দেয় যেটি পড়লে মেডুসার সামনে অদৃশ্য হয়ে যেত পার্সিয়াস। দেবী এথেনার দেওয়া আয়না যুক্ত ঢালের কারনে মেডুসাকে দেখতে পায় পার্সিয়াস এবং তাকে হত্যা করে মাথা কেটে নেয় পার্সিয়াস। মৃত্যুকালে মেডুসা পসাইডনের কারনে গর্ভবতী ছিল। 

মেডুসার মৃত্যুর সময় দুটি বাচ্চার জন্ম হয় পেগস্যাস নামে পাখা বিশিষ্ট সাদা ঘোড়ার এবং ক্রাইসার নামে এক দানবের যার হাতে সোনার তরোয়াল ছিল। মেডুসার মাথা নিয়ে ফিরে আসার সময় পার্সিয়াসকে আক্রমন করে অ্যাটলাস নামে এক যোদ্ধা কিন্তু মেডুসার মাথার দিকে তাকানোর ফলে অ্যাটলাসও পাথরে পরিনত হয়। এরপর পার্সিয়াস ইথিওপীয়া যায় এবং সেখানে সে অ্যান্ড্রোমেডাকে বিয়ে করে। বলা হয় ইথিওপীয়া যাওয়ার সময় লোহিত সাগরে মেডুসার কাটা মাথা থেকে রক্ত পড়তে থাকে এবং তার থেকেই লোহিত সাগরে প্রবাল প্রাচীর তৈরি হয়েছে। পার্সিয়াসের অ্যান্ডোমেডাকে বিয়ে করার ঘটনা সম্পর্কে গ্রীক পুরানে অদ্ভুত ঘটনা রয়েছে। 

গ্রীক পুরান অনুযায়ী অ্যান্ড্রোমেডা ইথিওপীয়র রাজা সেফিয়াস ও রানী ক্যাসিওপিয়ার সন্তান। একবার রানী ক্যাসিওপিয়া জানায় তার মেয়ে সমুদ্রের নেরেইডসদের থেকেও সুন্দরী। সমুদ্রে থাকা এক ধরনের মহিলা আত্মাকে নেরেইডস বলা হয় গ্রীক পুরানে যাদের সমুদ্রের দেবত পসাইডনের বন্ধু বলা হয়। পসাইডন রানী ক্যাসিওপিয়ার কথায় ক্ষুব্ধ হয়ে ইথিওপীয়া উপকূলে এক সমুদ্র দানব সেটাসকে পাঠায়। সেটাসের হাত থেকে বাঁচার একটাই উপায় ছিল অ্যান্ড্রোমিডাকে বলি দেওয়া। কিন্ত পার্সিয়াস ইথিওপীয়া হয়ে সেরিফোস দ্বীপে ফেরবার সময় অ্যান্ড্রোমিডাকে দেখতে পায় এবং সমুদ্রের দানব সেটাসকে পাথরে পরিনত করে অ্যান্ড্রোমিডাকে রক্ষা করে। এরপেরই অ্যান্ড্রোমিডার সাথে পার্সিয়াসের বিবাহ হয়। 

বিবাহ করার পর পার্সিয়াস সেরিফোস দ্বীপে ফিরে আসে। ফিরে এসে পার্সিয়াস দেখতে পায় তার মাকে জোর করে বিয়ের চেষ্টা করছে পলিডেকটেস। মেডুসার মাথার সাহায্যে পার্সিয়াস পলিডেকটেসকেও পাথরে পরিনত করে দেয়। এরপর পার্সিয়াস মেডুসার মাথা দেবী এথেনাকে দিয়ে দেয়। 

দেবী এথেনা মেডুসার মাথা তার ঢালের সামনে লাগায় যাকে এজিস বলা হয়। গ্রীক পুরানে মেডুসা সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য রয়েছে। রাক্ষসী হলেও মেডুসার গ্রীক, রোমান সভ্যতার সাথে মিশে গিয়েছে চিরকালের জন্য। বহু শিল্পকলা, সাহিত্য, প্রাচীন মুদ্রাতে মেডুসার ছবি রয়েছে। 

ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে পার্সিয়াসের এক বিশাল মূর্তি রয়েছে যার এক হাতে একটি তরোয়াল এবং অন্যহাতে মেডুসার কাটা মাথা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *