অফবিট

অতীতে যুদ্ধে কিভাবে শত্রুর জলের ভান্ডার ধ্বংস করা হত?

বিংশ শতক পর্যন্ত যুদ্ধে একটি বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করা হত যাকে বলা হত স্কর্চড আর্থ। এই পদ্ধতিতে কোনও আক্রমনকারী দেশ যে দেশে আক্রমন করতো সেই দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন ফসল, গবাদি পশু, পানীয় জল নষ্ট করে দিত, গুরুত্বপূর্ন জিনিস জ্বালিয়ে দিত যাতে প্রতিপক্ষ জরুরী রসদ না পায় এবং তাদের বেঁচে থাকার মৌলিক উপাদানই নষ্ট হয়ে যায়। আক্রমনকারী দেশ ভাবতো এরকম করলে একটা সময় প্রতিপক্ষ দেশ বাধ্য হবে আত্মসমর্পন করতে। একেই স্কর্চড আর্থ নীতি বলা হয়। বাস্তবে তাই হত, বহুদেশই স্কর্চড আর্থ নীতির কারনে প্রতিপক্ষের কাছে আত্মসমর্পনে বাধ্য হত।  

স্কর্চড আর্থ নীতিতে আক্রমনকারী দেশ প্রথমেই প্রতিপক্ষের ফসল জ্বালিয়ে দিত কারন খাদ্য নষ্ট করে দেওয়ার মাধ্যমে শত্রুকে আঘাত করার এটাই সবচেয়ে মোক্ষম উপায় ছিল। স্কর্চড আর্থ বা ভূমিকে জ্বালিয়ে দেওয়া শব্দটা এখান থেকেই এসেছে। এরপর শত্রুর গবাদি পশুদের হত্যা করা হত অথবা আক্রমনকারী দেশ নিজেদের সাথে নিয়ে নিত কারন গবাদি পশুদের জ্বালিয়ে দেওয়া সম্ভব ছিলনা। স্কর্চড আর্থ নীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন অংশ ছিল পানীয় জল নষ্ট করে দেওয়া। জলকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করার পদ্ধতি পুরোনো যুগ থেকেই হয়ে আসছে। বর্তমানে চীন যেমন তিব্বতে উৎপন্ন নদীগুলোতে অসংখ্য বাঁধ নির্মান করে জলকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে ঠিক তেমনি একটা সময় যুদ্ধেও শত্রুদেশের পানীয় জলকে প্রতিপক্ষ দেশ নষ্ট করে দিত। আধুনিক প্রযুক্তি ছাড়া অতীতে পানীয় জল নষ্ট করা এতটা সহজ ছিলনা। শত্রুর নদীতে যদি বিষ মিশিয়ে দেওয়া হত তবে নদীর বিশাল জলরাশির কারনে বিষের প্রভাব নষ্ট হয়ে যেত। সাধারনত পুকুরে বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রয়োগ করলে মাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সেখানকার জলও গ্রহনের অযোগ্য হয়ে যেত কিন্তু একটি গোটা গ্রাম বা জনপদের মানুষ সবাই পুকুরের জলের উপর নির্ভরশীল থাকতোনা। তাই স্কর্চড আর্থ নীতিতে শত্রুর পানীয় জল নষ্ট করতে সবচেয়ে বেশী নিশানা করা হত কুয়োকে। আজ থেকে ২০০ বছর আগেও বিশ্বজুড়ে কুয়োর ব্যবহার ব্যাপক হত। প্রাচীনকালে এক একটা গ্রামের মানুষ পাঁচ, ছয়টা করে কুয়ো করে রাখতো তাদের ব্যবহারের জন্য। কুয়ো এমন জায়গায় করা হত যাতে গ্রামের সকল মানুষ খুব সহজেই তা ব্যবহার করতে পারে, কোথাও কোথাও কোনও বাড়ির নিজস্ব কুয়োও থাকতো। এজন্য অতীতে যুদ্ধের সময় আক্রমনকারী দেশ কুয়োগুলো নষ্ট করার জন্য তাতে ক্ষতিকর গাছ অথবা রাসায়নিক দিয়ে দিত। অনেকসময় পশুর ও মানুষের মৃতদেহও কুয়োতে ফেলে দেওয়া হত যাতে কুয়োর জল ব্যবহারের অনুপযুক্ত থাকে। কখনও কখনও ভারী পাথর দিয়ে কুয়োর মুখ পর্যন্ত ভর্তি করে দেওয়া হত যাতে ভবিষ্যতে কখনও কুয়োটি ব্যবহার করা না যায়। তবে কুয়ো নষ্ট করে দেওয়ার অর্থ এটা নয় যে সেই কুয়ো একদম পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়া। প্রতিপক্ষ যখন চলে যেত তখন স্থানীয় মানুষজন কুয়ো থেকে ক্ষতিকর গাছ অথবা পশু ও মানুষের মৃতদেহর অবশেষ বার করে ফেলে দিত এবং কুয়োর জলও অনেকাংশ বের করে ফেলে দেওয়া হত, এর নির্দিষ্ট কিছু সময় পর কুয়োতে যখন আবারও জল ভর্তি হত তখন তা ব্যবহারের উপযুক্ত হয়ে যেত। স্কর্চড আর্থ নীতিতে এভাবেই শত্রুর পানীয় জলের ভান্ডার নষ্ট করা হত একটা সময়। এই পদ্ধতি বহু পুরোনো হলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়েও বহু জায়গায় এভাবেই পানীয় জল নষ্ট করা হত। তবে আধুনিক যুদ্ধে এরকম আর করা হয়না কারন বর্তমানে কুয়োর ব্যবহার নেই বললেই চলে, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কোথাও কোথাও হয়তো কুয়োর ব্যবহার হলেও বেশীরভাগ মানুষ জলের জন্য রিজার্ভারের উপর নির্ভর করে। কিন্তু রিজার্ভারেও বিষ প্রয়োগ করা সম্ভব কিন্তু জেনেভা চুক্তি অনুযায়ী কোনও দেশ যুদ্ধে প্রতিপক্ষের পানীয় জলের ভান্ডার নষ্ট করতে পারবেনা বলে আন্তর্জাতিক আইন করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *