অফবিট

কেন নিজের সন্তানের হাত মৃত্যুবরন করতে হয়েছিল কুন্তি পুত্র অর্জুনকে?

নিউজ ডেস্কঃ মহাভারতের সময়কালীন সবথেকে বড় ধনুকধর কুন্তী পুত্র অর্জুনকে মানা হয়ে থাকে।এরকম মনে করা হয়ে থাকে যে  অর্জুন যদি ধনুকবিদ্যায় পারদর্শী না হত তাহলে পান্ডবদের পক্ষে মহাভারতের যুদ্ধ জেতা অসম্ভব হয়ে উঠত।তাই অর্জুনের ধনুকধর হওয়ার বিষয়টি কারোরই অজানা নয় তাই এই সম্পর্কে বিশদে কিছু বলার দরকার নেই। আমরা সবাই জানি যে পান্ডবদের স্বর্গযাত্রার সময় অর্জুনের মৃত্যু হয়েছিল কিন্তু আপনারা কি জানেন যে এর আগেও অর্জুনের একবার মৃত্যু হয়েছিল এবং দেবী গঙ্গা অর্জুনের সেই মৃত্যুতে হেসেছিলেন।কিন্তু কেন হেসেছিলেন দেবী গঙ্গা এবং কে অর্জুনকে মেরেছিলেন? 

মহাভারতের যুদ্ধের পরে পাণ্ডবপুত্র যুধিষ্ঠি যখন হস্তিনাপুরের রাজা হন তখন তিনি ঠিক করেন যে তিনি অশ্বমেধ যজ্ঞ করবেন।যজ্ঞের ঘোড়াকে ইচ্ছা মতো ঘুরতে ছেড়ে দেওয়া হল এবং ওই ঘোড়াকে অনুসরন করবেন অর্জুন। যুধিষ্ঠিরের নির্দেশ ছিল যে অর্জুন যাতে যেন বিভিন্ন প্রদেশের রাজাদেরকে মৈত্রী প্রস্তাব দেন। ওই ঘোড়াটি প্রথমে উত্তরের ত্রিগর্তদেশে প্রবেশ করে ওখানকার রাজা সূর্যবর্মা ঘোড়াটিকে আটকায় এবং অর্জুনের মৈত্রীর প্রস্তাব অস্বীকার করেন।এরপরে অর্জুন সূর্যবর্মার সাথে যুদ্ধ করেন এবং এতে সূর্যবর্মা হেরে যান।এরপরে ঘোড়াটি ঢুকল প্রাগজ্যোতিষপুরে যার রাজা ছিলেন বজ্রদত্ত এবং তিনি অর্জুনের মৈত্রী প্রস্তাব স্বীকার করেন।এভাবেই অর্জুন বিভিন্ন প্রদেশে যান বিভিন্ন রাজাদের মৈত্রীর স্বীকার করার জন্যে।যারা তার মৈত্রী স্বীকার করেন না তাদের সাথে যুদ্ধ করেন এবং যারা মৈত্রী স্বীকার করেন তাদের সাথে যুদ্ধ করেন না। অবশেষে অর্জুন যান মনিপুরে। যেখানের সিংহাসনের বসেছিলেন অর্জুন ও চিত্রাঙ্গদার পুত্র বভ্রুবাহন। পিতা এসেছেন বলে বভ্রুবাহন তাকে স্বাগত জানালেন। এটি দেখে অর্জুন বভ্রুবাহনকে বলেন যে শত্রুকে এভাবে স্বাগত জানানো ক্ষত্রিয়দের ধর্ম নয়। অর্জুন বভ্রুবাহনকে তার সাথে যুদ্ধ করতে বলে।বভ্রুবাহন পিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চান না।

এরপর অর্জুনের আরেকটি স্ত্রী উলুপি বভ্রুবাহনকে ক্ষত্রীয় ধর্ম পালন করার কথা বলেন। অবশেষ বভ্রুবাহন অর্জুনের সাথে যুদ্ধ করতে রাজি হন এবং যুদ্ধ করেন।অনেক সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও যখন কোন পরিনাম বের হল না তখন বভ্রুবাহন কামাখ্যা দেবীর কাছ থেকে পাওয়া দিব্যবান দিয়ে অর্জুনের উপর প্রহার করলেন। এরফলে অর্জুন ও তার পুত্র বভ্রুবাহনের হাতে নিহত হলেন।অর্জুনের এই রকম অবস্থা দেখে হস্তিনাপুরের সেনারা ভয় পেয়ে গেল। বভ্রুবাহনের সাথে যুদ্ধ করে যে শুধু মাত্র তাঁর পিতায়  পরাস্ত হয়েছিল তা নয় এর আগে পান্ডবপুত্র ভীমও পরাস্ত হয়েছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ যখন একথা জানতে পারলেন তখন তিনি দ্রুত দ্বারকানগরী থেকে মনিপুরের দিকে রওনা হলেন। এবং অন্যদিকে অর্জুনের মৃত্যুর খবর পেয়ে অর্জুনের মাতা কুন্তীও মনিপুরের দিকে রওনা হলেন।এরপর যখন  শ্রীকৃষ্ণ মণিপুরে পৌঁছে অর্জুনকে মাটিতে এভাবে পড়ে থাকতে দেখলেন তখন তাঁর  মনে দুঃখ হয়।আর এই সময় অর্জুন এর মৃত্যুতে দেবী গঙ্গাকে জোরে জোরে হাঁসতে দেখেন  শ্রীকৃষ্ণ। এরই মধ্যে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয় কুন্তি।কিন্তু সেখানে পৌঁছে যখন নিজের পুত্রের মৃতদেহকে দেখলে তখন তাঁর মৃতদেহকে কোলে তুলে কাঁদতে লাগলেন।কুন্তি এই কান্না দেখে আর সহ্য করতে পারলেন না দেবী গঙ্গা। তখন তিনি কুন্তিকে বললেন সে অকারনে কেন কাঁদছে কারন তাঁর পুত্র অর্জুন তারই কর্মের ফল অর্থাৎ তাঁর পুত্রমহ ভীষ্ম তাঁকে তাঁর  পুত্রের মত ভালোবাসা সত্ত্বেও সে শিখন্ডীর সাহায্য নিয়ে তাঁর পুত্র ভীষ্মকে হত্যা করে।তাই সে সময় সেও এই ভাবেই কেঁদেছিলেন। যেমন কুন্তি  আজ তাঁর পুত্র অর্জুনের জন্য কাঁদছে।মাতা গঙ্গা বলেন যে সে  আজ তাঁর আমার পুত্রের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিয়েছি। কেননা বভ্রুবাহন  যে কামাখ্যা দেবীর বান দিয়ে অর্জুনের উপর প্রহার করে সেটি তাঁর দ্বারায় বভ্রুবাহনকে প্রদান করা হয়েছিল। 

শ্রীকৃষ্ণ  দেবী গঙ্গার মুখে এরকম প্রতিশোধের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলেন।তখন  শ্রীকৃষ্ণ  দেবী গঙ্গাকে বলেন যে “ গঙ্গা দেবী আপনি কোন প্রতিশোধের কথা বলছেন আপনি কার ওপর প্রতিশোধ নেবেন অর্জুনের মাতা কুন্তী নাকি অর্জুনের উপর আপনি একজন মায়ের ওপর প্রতিশোধ কিভাবে নিতে পারেন”।তখন  দেবী গঙ্গা শ্রীকৃষ্ণকে বললেন যে “ হে বাসুদেব আপনি তো জানেন যে  আমার পুত্র নিরস্ত্র হওয়া সত্বেও অর্জুন আমার পুত্রকে হত্যা করেছিল তাহলে এটা যদি অর্জুন উচিত কাজ বলে মনে হয় তাহলে অর্জুনকে তার পুত্র দ্বারা হত্যা করে আমি কি ভুল করেছি”।দেবী গঙ্গাকে  তখন শ্রীকৃষ্ণ বলেন যে  “অর্জুন যেভাবে তার পিতামহকে হত্যা করেছিলেন সেই হত্যা করার কৌশল ভীষ্ম পিতামহ আগে থাকতেই অর্জুনকে শিখিয়ে দিয়েছিলেন কেননা তিনি জানতেন যে তিনি বেঁচে থাকলে পান্ডবদের জয় অনিশ্চিত তাই তিনি নিজেই ঠিক করেছিলেন যে তিনি এই যুদ্ধ থেকে সরে যাবেন”। এই জন্য তাকে হত্যা করার কৌশল অর্জুনকে শিখিয়ে দেন তিনি।আর বভ্রুবাহনকে অর্জুন শুধু আটকে ছিলেন তিনি কিন্তু পাল্টা বভ্রুবাহনকে আক্রমণ করেননি।আর অর্জুন কামাখ্যা দেবীর দিব্যবান  এবং আপনার মাহাত্ম্যকে বাড়িয়ে তুলেছে। দেবী গঙ্গা  চিন্তায় পড়ে গেলেন শ্রীকৃষ্ণের এইসব কথা শুনে।  তখন দেবী গঙ্গা  এই অবস্থা থেকে বাইরে আসার জন্য শ্রীকৃষ্ণের কাছে সাহায্য চাইলেন। তখন দেবী গঙ্গাকে  শ্রীকৃষ্ণ তার প্রতিজ্ঞা ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আবেদন করলেন।তারপর  দেবী গঙ্গা অর্জুনের মাথা ধড়ের সাথে পুনরায় জোড়া লাগানোর কৌশল বলে দিলেন। এরপর শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের দ্বিতীয় স্ত্রী এবং বভ্রুবাহনের সৎ মা উলুপির দ্বারা প্রাপ্ত নাগমণির সাহায্যে অর্জুনকে পুনরায় জীবিত করলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *