ভগবান শিব ত্রিকোণ শিবলিঙ্গেররূপে বিরাজমান। কেদারনাথ মন্দিরটি কারা বানিয়েছিলেন। অবাক করা রহস্য
নিউজ ডেস্কঃ ভারতে অবস্থিত প্রত্যেকটি মন্দিরের পিছনে লুকিয়ে রয়েছে হাজার হাজার অজানা তথ্য। এর ব্যাতিক্রম নয় হিমালয়ের কোলে অবস্থিত কেদারনাথ মন্দিরটিও। বছরের প্রায় ছয় মাস ধরে বরফে আচ্ছাদিত এই পবিত্র মন্দিরকে বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে একটি মনে করা হয়। এছাড়াও মনে করা হয় যে এটি ভগবান শিবের নিবাসস্থল এবং এখানে ভগবান শিব ত্রিকোণ শিবলিঙ্গেররূপে বিরাজমান। এই মন্দির সম্পর্কে পৌরাণিক গ্রন্থে এমন অনেক তথ্য রয়েছে যা বেশিরভাগ মানুষই জানে না।এই মন্দিরটি কারা বানিয়েছিলেন এবং কেনই বা বানিয়েছিলেন?
ধার্মিক গ্রন্থে বর্ণিত কাহিনী অনুসারে, মহাভারতের যুদ্ধে বিজয়ের পরে পান্ডবদের জ্যেষ্ঠ যুধিষ্ঠিরকে হস্তিনাপুরের রাজার সিংহাসনে বসিয়ে রাজ্যভিষেক করা হয়েছিল। এরপর প্রায় চার দশক পর্যন্ত যুধিষ্ঠির হস্তিনাপুরে রাজত্ব করেছিলেন। এরই মধ্যে একদিন পাঁচ পাণ্ডব ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে বসে মহাভারতের যুদ্ধের সমীক্ষা করছিলেন। সমীক্ষায় পাণ্ডবরা শ্রীকৃষ্ণকে বললেন যে তাদের সব ভাইয়ের ওপর প্রভু হত্যা এবং নিজেদের ভাই এবং মিত্রদের হত্যার কলঙ্ক লেগে রয়েছে। এই কলঙ্ককের থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যাবে? তখন শ্রীকৃষ্ণ পান্ডবদের বলেন যে তারা যুদ্ধে জয়লাভ করলেও তারা তাদের গুরু এবং ভাই এবং মিত্রদের হত্যা করার জন্য পাপের ভাগীদার এ পরিণত হয়েছে। এই পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব কিন্তু এই পাপ থেকে যদি কেউ মুক্তি দিতে পারে তাহলে সে মহাদেবই পারে। তাই তাদেরকে মহাদেবের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকা নগরীতে চলে যান। পাণ্ডবরা নিজের পাপের মুক্তি নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান। তারা মনে মনে ভাবতে লাগলেন যে কখন এই রাজপাঠ শেষ করে তারা মহাদেবের স্মরণে যাবেন। এরই মধ্যে একদিন পাণ্ডবরা জানতে পারলেন যে বাসুদেব তার শরীর ত্যাগ করেছেন এবং তিনি তার পরমধামে চলে গিয়েছেন। এই কথা শুনে পান্ডবদের আর এই পৃথিবীতে থাকা উচিত নয় বলে মনে হলো। গুরু, পিতামহ এবং সব বীর যোদ্ধারা সবাই যুদ্ধভুমিতেই রয়ে গিয়েছিলেন, মাতা জ্যেষ্ঠপিতা এবং কাকা বিধুরও বনভ্রমণে চলে গিয়েছিলেন,সদা সহায়ক শ্রীকৃষ্ণও নেই এইজন্য পাণ্ডবরা রাজ্যের সবভার পরীক্ষিতের উপর ছেড়ে দেন এবং দ্রৌপদীসহ তারা হস্তিনাপুর ছেড়ে ভগবান শিবের দর্শনের পাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়েন।
হস্তিনাপুর থেকে বেরিয়ে পাঁচভাই এবং দ্রৌপদী ভগবান শিবের দর্শনের জন্য সবার প্রথমে পান্ডব কাশি পৌঁছালেন কিন্তু সেখানও ভগবান শিবের দর্শন পান না। এরপর তারা আরো অনেক জায়গায় শিবকে খোঁজার প্রচেষ্টা করলেন কিন্তু তারা যেখানেই যাচ্ছিলেন শিব সেখান থেকে চলে যাচ্ছিলেন। এইভাবে খুঁজতে খুঁজতে একদিন পাঁচ পান্ডব ও দ্রৌপদী শিবকে খুজতে খুজতে হিমালয় এসে পৌঁছান। তাদেরকে দেখে ভগবান শিব সেখানে লুকিয়ে যান কিন্তু যুধিষ্ঠির ভগবান শিবকে লুকিয়ে যেতে দেখে ফেলেন। তখন যুধিষ্ঠির ভগবান শিবকে বলেন যে তারা যেই পাপ করছে তার জন্য তিনি তাদেরকে দর্শন দিতে চাইছেন না, কিন্তু তার দর্শন না পেয়ে সেই স্থান তারা ত্যাগ করবে না। এই কথা বলার পর হঠাৎই ওই সময় একটি ষাঁড় তাদের ওপর আক্রমণ করে। এই দেখে ভীম ওই ষাঁড়ের সাথে যুদ্ধ করে। ওই সময়ে ওই ষাঁড়েটি দুটি পর্বতের মাঝে নিজের মাথা লুকিয়ে ফেলে। এদিকে ভীম তার লেজ ধরে জোরে জোরে টানার ফলে ষাঁড়টির মাথা ধড় থেকে আলাদা হয়ে যায়। তারপরেই ওই ষাঁড়টির মাথা শিব লিঙ্গে রূপান্তরিত হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর সেই শিবলিঙ্গ থেকে ভগবান শিব প্রকট হন এবং পান্ডবদের সব ভুল ক্ষমা করে দেন। আজও এই ঘটনার প্রমাণ কেদারনাথ মন্দিরে পাওয়া যায় যেখানে একটি ষাঁড়ের মস্তক দেখতে পাওয়া যায়। ভগবান শিবকে দেখে তার প্রণাম করলেন এবং এরপর ভগবান-শিব তাদেরকে স্বর্গের রাস্তা বলে দেন। তারপর ভগবান শিব অন্তর্ধান হয়ে যান। এরপর পাণ্ডবরা সেই শিবলিঙ্গের পূজা অর্চনা করেন। আর এই শিবলিঙ্গই আজ কেদারনাথ মন্দির হিসেবে পরিচিত।