জোনাকী দেখাতে জাপানের অবাক করা পরিকল্পনা
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উন্নয়নে প্রতিনত উন্নত হচ্ছে সামগ্রিক বিশ্ব। চোখ ধাঁধানো লাইটের মাধ্যমে এক আলাদাই প্রভাব পরছে দুনিয়ায়। কিন্তু মানুষের এই আলোকসজ্জার ভিড়ে কোথায় যেন অবলুপ্তি ঘটছে পৃথিবীতে অবস্থানকারী ছোট্ট প্রাণী জোনাকির। ছোটবেলায় যে জোনাকি পোকার পেছনে ছুটে বাচ্চারা নিজেদের শৈশব উপভোগ করেছে, আজ সেই জোনাকি পোকাই হারিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী থেকে। বিষয়টি শুনলে আশ্চর্যজনক মনে হলেও এটি বাস্তব। বৈজ্ঞানিকরা পরীক্ষা করে দেখেছেন যে সমাজ যত উন্নত হচ্ছে ততই যেন সমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে জোনাকি। এর মূল কারণ, জোনাকির বাসস্থানের অভাব, কৃত্রিম আলোর অত্যধিক ব্যবহার এবং কীটনাশকের ব্যবহার। কারণ জোনাকী পোকা সাধারণত ঝোপ-ঝাড় জলাভূমিতে, অন্ধকারে থাকতে পছন্দ করে। আর এই অন্ধকার জায়গাতেই নিজের আলো জ্বালিয়ে অন্য জোনাকি পোকাকে বংশবৃদ্ধি করার জন্য আকৃষ্ট করে থাকে। অথচ বর্তমান যুগের হেভি পাওয়ারের আলোর জন্য জোনাকি পোকা নিজের আলো দ্বারা অন্য জোনাকিকে ইঙ্গিত দিতে অসমর্থক হয়ে পরছে। আর এই ব্যর্থতার কারণে বংশ বৃদ্ধি এক প্রকার থমকে গিয়েছে তাদের। তবে শুধুমাত্র যে তীব্র আলো এর জন্য দায়ী তাই নয়। কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য ব্যবহৃত কীটনাশক, জঙ্গল সাফাই করে অটলিকা নির্মাণ, এমনকি পোকা মারার জন্য বিষাক্ত কিট তেল এর জন্য দায়ী।
বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে জানিয়েছেন, জোনাকি যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজেদের শরীরে আলো উৎপন্ন করে সেটিকে জৈব প্রভা বলে। জোনাকি পোকার আলো তৈরির ক্রিয়াকৌশল নিয়ে গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে। সহজ করে ব্যাখ্যা করলে বিষয়টা দাঁড়ায় জোনাকি পোকার কোষে লুসিফেরিন নামের অণু থাকে। সেই অণু, অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে অক্সিলুসিফেরিন নামের একটি অণু তৈরি করে। লুসিফেরিন থেকে অক্সিলুসিফেরিন রূপান্তরের বিক্রিয়ায় সাহায্য করে একটি এনজাইম। আর সেই এনজাইমটির নাম লুসিফিরেজ। প্রকৃতিতে শক্তির বহুমাত্রায় রূপান্তর সম্ভব। আমার যে জোনাকির আলো দেখি তা মূলত এই রাসায়নিক বিক্রিয়া থেকে উৎপন্ন শক্তি। প্রায় ২ হাজার প্রজাতির জোনাকি যে কোনো সময় বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। জীবনচক্র পূরণের জন্য সুনির্দিষ্ট আবহাওয়া প্রয়োজন জোনাকিদের। জার্নাল বায়োসায়েন্সে এই তথ্য জানিয়েছেন টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের প্রফেসর সারা লিউস। আর এই তথ্য প্রকাশ্যে আসার পরপরই জোনাকী রক্ষা করার কাজ চলছে, তৈরী হয়েছে জোনাকী ট্যুরিজম।
এই ছোট্ট প্রাণীটি যে শুধুমাত্র শিশুদের শৈশব স্মরণীয় করে তুলেছে তাই নয় এমনকি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার ক্ষমতাও রেখেছে। মালেয়শিয়া, তাইওয়ান ও জাপানের মতো দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে জোনাকি পর্যটন। প্রতিবছর প্রায় ২ লাখ পর্যটক সংগৃহীত এসব জোনাকির তৈরি আলো দেখতে যাচ্ছেন। সংখ্যা কমে যাওয়ার এটিও একটি বড় কারণ বলে জানা গেছে।