অফবিট

ভুল সময়ের জন্মের কারনেই রাক্ষস হয়েছিলেন রাবন

নিউজ ডেস্কঃ রামায়নের কথা বলতে গেলে যেমন রামের কথা উঠে আসে ঠিক তার সাথে রাবনের কথাও উঠে।কারন রাম ছাড়া যেমন রামায়নে হতো না ঠিক তেমনই রাবন ছাড়াও রামায়নে হতো না।তাই বলা যায় যে রামের  মতোই রাবনও রামায়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।এই রাবণকে আমরা সবসময় একটি নেতিবাচক চরিত্র হিসাবে দেখে থাকি কিন্তু আপনার কি জানেন যে রাবণ প্রবল বুদ্ধিমান এবং জ্ঞানী পুরুষ ছিলেন? যার জন্মের ভুল সময়ে হওয়ার কারণে রাবণ বুদ্ধিমান হওয়া সত্ত্বেও রাক্ষস প্রকৃতির হয়ে গেলেন।না জানলে জেনে নিন রাবনে অজানা দিকটি যা বেশিরভাগ মানুষই জানে না।  

সকলেরই কমবেশি জানা যে লঙ্কার রাজা ছিলেন রাবণ।নানা পৌরাণিক কাহিনীতে লঙ্কেশ্বর রাবণের জন্ম সম্পর্কে বিবরণ পাওয়া যায়।বাল্মীকি রামায়ণ অনুযায়ী ঋষি বিশ্রবার পুত্র ছিলেন রাবন। পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী মাল্যবান, সুমালী ও মালী নামক তিন খুব শক্তিশালী দৈত্য ছিলেন। তিনজন মিলে একবার সুমেরু পর্বতে ব্রহ্মার কঠোর তপস্যা শুরু করে এবং সবথেকে শক্তিশালী হওয়ার বর প্রার্থনা করেন।তাদের এই কঠোর তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে ব্রক্ষ্মা তাদেরকে এই বর প্রদান করে।এই বরদান পেয়ে তারা খুব অত্যাচারি হয়ে উঠেন।অত্যাচার শুরু করেন দেবতা, ঋষিদের উপর।এই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দেবতারা ভগবান শিবের শরণাপন্ন হন এবং তাদের প্রাণ রক্ষা  প্রার্থনা করতে লাগলেন।তখন ভগবান শিব দেবতাদের জানান যে তাঁর পক্ষে ওই তিন রাক্ষসে বিনাশ করা সম্ভব নয়।এদের থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ভগবান শিব দেবতাদেরকে শ্রীবিষ্ণুর কাছে যাতে বলেন।দেবতারা শিবের এই এমন কথা শুনে তাকে প্রণাম করে সেখান থেকে প্রস্থান করেন। এরপর দেবতারা বিষ্ণুদেবের কাছে যান এবং তাঁর কাছে গিয়ে তারা ওই তিন রাক্ষসের কথা বলেন এবং তাদের প্রান রক্ষার জন্য প্রার্থনা করতে লাগলেন। তখন বিষ্ণু দেবতাদের বলেন যে তাদের আর কোন চিন্তা নেই তারা যাতে ভয়মুক্ত হয়ে নিজের নিজের ঘরে ফিরে যায় এই বলে আশ্বস্ত করলেন।তারপর দেবতারা সেখান থেকে প্রস্থান করলে ভগবান বিষ্ণু পৃথিবীলোকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন।এরপর পৃথিবীতে পৌঁছে  ভগাবান বিষ্ণু ওই তিনজন রাক্ষসকে তাঁর সাথে যুদ্ধ করার অহবান দিলেন।এরফলে প্রচণ্ড রেগে গেলেন ওই তিনজন রাক্ষস। তারপর তারা বিষ্ণুদেবের সাথে যুদ্ধ করতে তৎপর হয়ে উঠলেন।

শুরু হল প্রবল যুদ্ধ।এই যুদ্ধে বিষ্ণুদেবের হাতে মালি মারা যান।এই দেখে মাল্যবান ও সুমালী ভয় পেয়ে পাতালে চলে যায়। অনেক দিন পরে পাতাল থেকে বেরিয়ে পৃথিবীতে ভ্রমণ করতে এসেছিলেন সুমালি।তবে তিনি মনে মনে ভয় পাচ্ছিলেন যে যাতে তাঁকে যাতে কোন দেবতা না দেখে ফেলে।এই কারনে কিছু সময় পরে  সুমালি আবারও পাতালে ফিরে যান।সুমালি পাতাললোকে ফিরে আসার পর  ভাবতে লাগলেন যে  এমন কি করা যায় যাতে সব দেবতারা তাঁর কাছে হার মানতে বাধ্য হয়। তখনই কুবেরের কথা সুমালির মনে পড়লে । তখন তিনি ভাবলেন যে  যদি তার মেয়ের বিয়ে কুবেরের পিতা  বিশ্রবার সাথে হয় তাহলে যে তাদের থেকে যে দেবতার সমান পুত্রের জন্ম হবে তাকে বধ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে এবং সেই পুত্র খুব সহজেই দেবতাদেরকে পরাজিত করতে পারবেন। এরপর সোমালী তার কন্যা কৈকষিকে সব কথা বললেন।কৈকষি রাক্ষস কন্যা পাওয়া সত্বেও একজন ধর্মপরায়ন নারী ছিলেন। তাই পিতার এই  ইচ্ছাকে তিনি পূর্ণ করার জন্য বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হলেন। এরপর কৈকষি তাঁর পিতার আজ্ঞা পেয়ে ঋষি বিশ্রবার উদ্দেশ্যে সেই স্থান থেকে প্রস্থান করলেন।কৈকষির অনেক সময় লেগে যায় পাতাললোক থেকে পৃথিবীলোকে যেতে।পৃথিবীলোকে পৌঁছে  কৈকষি যখন ঋষি বিশ্রবার  কাছে যান  তখন সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল এবং বজ্রপাতসহ বৃষ্টি হতে লাগলো। ঋষি বিশ্রবাকে সবার প্রথমে কৈকষি প্রণাম করলেন।এবং তারপর তিনি ঋষি বিশ্রবাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন ও তাঁর সাথে পুত্র লাভের কথা বলে।

কৈকষির এই সমস্ত কথা শুনে ঋষি বিশ্রবার কৈকষিকে বললেন যে তিনি তাঁর ইচ্ছা পূরণ করতে পারব ঠিকই কিন্তু সে বড় ভুল সময় এসে পড়েছে। তাই তাঁকে বলে যে তাঁর পুত্র রাক্ষস হয়ে জন্ম নেবে।এই শুনে কৈকষি বিশ্রবার চরন ধরলেন এবং কাঁদতে কাঁদতে বললেন যে সে এরকম দুরাচারী পুত্রকে নিয়ে কি করব? কারন তাঁর মতো তেজস্বী এবং জ্ঞানি পুত্র চায় সে।

কৈকষির বারবার আবেদন করার ফলে ঋষি  বিশ্রবার বললেন যে ঠিক আছে সে তাঁকে আরও একটি পুত্রসন্তান দেব যার মধ্যে তাঁর সমস্তগুন থাকবে। আর এরপরই কিছু সময় পর কৈকষি তাঁর তিন পুত্রের জন্ম দিলেন রাবন, কুম্ভকর্ণ এবং বিভীষণের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *