অফবিট

অযোধ্যা নগরীর উন্নয়নে বিশ্বমানের প্রজেক্ট শুরু মোদী সরকারের

ত্রেতা যুগে ভগবান শ্রীরামের অযোধ্যাতে ন্যায়, সমান অধিকার, সুখ শান্তি এবং আর্থিক সমৃদ্ধি ছিল যার কারনে প্রত্যেক প্রজাই অত্যন্ত সুখী ছিল সেসময়। ভগবান শ্রীরাম রাজা হিসাবে এতটাই দক্ষ ও করুনাময় ছিলেন যে আজও মানুষ রাম রাজ্যের কথা আলোচনা করে। ভগবান শ্রীরামের সময়ের পবিত্র অযোধ্যা নগরীর বৈভব ও আদর্শ বর্তমানে সম্ভব নয় কিন্তু বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারত সরকার ও মাননীয় যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে উত্তর প্রদেশ সরকার ভগবান শ্রীরামের অযোধ্যা নগরীকে ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ২২ জানুয়ারি অযোধ্যাতে শ্রীরাম মন্দিরের দরজা সর্বসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। অনুমান করা হচ্ছে প্রতিদিন অন্তত দুই লাখের বেশী পুন্যার্থী শ্রীরাম মন্দির দর্শনে আসবেন। যার ফলে অযোধ্যার পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে। যার কারনে অযোধ্যা শহরের আরও উন্নয়নের জন্য অনেক প্রজেক্ট শুরু করেছে ভারত সরকার ও উত্তর প্রদেশ সরকার। অযোধ্যা শহরে বিশ্বমানের পরিকাঠামো ব্যবস্থা তৈরি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, সাধারন মানুষের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা, গনপরিবহনের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য একাধিক প্রজেক্টে কাজ চলছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত ৩০ ডিসেম্বর অযোধ্যা যান এবং সেখানে অযোধ্যা নগরীর জন্য অনেক বড় বড় প্রজেক্টের ঘোষনা করেন যা অযোধ্যা শহরকে ভারতের অন্যতম সুন্দর ও সমৃদ্ধ শহরে পরিনত করবে। 

অযোধ্যা শহরের উন্নয়নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১.৩ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১১১ বিলিয়ন রূপির প্রজেক্ট ঘোষনা করেছেন। এসব প্রজেক্টের মধ্যে রয়েছে অযোধ্যা শহরে একটি নতুন বিমানবন্দর নির্মান, অযোধ্যা ধাম রেলওয়ে স্টেশনের উন্নয়ন, দুটি অমৃত ভারত ট্রেন, ছয়টি বন্দে ভারত ট্রেন, চারটি বিশেষ রাস্তা এবং গ্রীনফিল্ড শহর অর্থাৎ একদম নতুন শহর নির্মান। একদম প্রথম থেকে নতুন শহর নির্মানকে গ্রীনফিল্ড শহর বলে। অযোধ্যা সহ উত্তর প্রদেশের আরও কিছু শহরের উন্নয়নও করার জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। 

অযোধ্যা বিমানবন্দর বিশ্বের একমাত্র বিমানবন্দর যাতে আধুনিকতার সাথে সাথে ভারতের ঐতিহ্যকেও বিশেষ করে ভগবান শ্রীরাম ও তার জীবনীকে  দেখানো হয়েছে। অযোধ্যা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম রাখা হয়েছে মহর্ষি বাল্মীকি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বিশ্বে এরকম অনন্য বিমানবন্দর এর আগে কোথাও তৈরি করা হয়নি এবং হয়ত ভবিষ্যতেও কোথাও হবেনা। অযোধ্যা এবং ফৈজাবাদ দুটি শহরের মানুষদের জন্যই অত্যন্ত সুবিধাজনক জায়গায় রয়েছে এই বিমানবন্দর। ফৈজাবাদের এনএইচ ২৭ এবং এনএইচ ৩৩০ এর পাশেই এই বিমানবন্দরটি তৈরি করা হচ্ছে। 

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারী মাস থেকে এই বিমানবন্দরের কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই ১৪৫০ কোটি টাকা মূল্যে অযোধ্যা বিমানবন্দরের প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয়ে গেছে। গত ৩০ ডিসেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই বিমানবন্দরের উদ্ভোদন করেন। আগামী ১০ জানুয়ারি, ২০২৪ থেকে এই বিমানবন্দরে বিমান চলাচল শুরু হবে। প্রথমে অযোধ্যা বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ছিল ১,৫০০ মিটার লম্বা ও ৩০ মিটার চওড়া ছিল। যার কারনে সেসময় নয় আসন বিশিষ্ট ডর্নিয়ার ২২৮ এর মতো বিমানই এখানে নামতে পারতো। এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বা এএআই ২০১৮ সালে রানওয়ে বৃদ্ধির জন্য ২৮৪ একর জমি অধিগ্রহন করে যাতে দুইশো আসন বিশিষ্ট এয়ারবাস ৩২১ এর মতোন বিমান চলাচল করতে পারে অযোধ্যা থেকে। অযোধ্যার মহর্ষি বাল্মীকি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পুরো কাজ তিন ধাপে করা হবে। প্রথম ধাপে রানওয়ের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে ২,২৫০ মিটার করা হবে, দ্বিতীয় ধাপে রানওয়ে বাড়িয়ে ৩,১২৫ মিটার এবং তৃতীয় ধাপে রানওয়ের দৈর্ঘ্য আরও ৬২৫ মিটার বাড়িয়ে ৩,৭৫০ মিটার করা হবে। তখন এই বিমানবন্দরে এয়ারবাস এ ৩৮০ এর মতোন বড় বিমান আসতে পারবে। এই বিমানবন্দরের টার্মিনাল এলাকার আয়তন ৬,৫০০ বর্গমিটার এবং প্রতিবছর দশ লাখ যাত্রীর ধারন ক্ষমতা রয়েছে। টার্মিনাল ভবন ভগবান শ্রীরামের জীবনী, ও স্থানীয় শিল্প দিয়ে সাজানো হয়েছে। অযোধ্যা বিমানবন্দর এমন ভাবেই নির্মান করা হচ্ছে যাতে সামনে থেকে দেখতে অনেকটা ভগবান শ্রীরামের মন্দিরের মতো মনে হয়। অযোধ্যা বিমান বন্দরের টার্মিনাল ভবন নির্মানে সম্পূর্ন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন টার্মিনাল ভবনে রয়েছে ইনসুলেটেড রুফিং সিস্টেম অর্থাৎ রোদের সময় টার্মিনালের নীচে থাকা যাত্রীর বেশী গরম লাগবেনা এবং শীতের সময় বেশী ঠান্ডা লাগবেনা। এছাড়া অযোধ্যা বিমান বন্দরে বৃষ্টির জল সংগ্রহ করার ব্যবস্থা রয়েছে এবং সৌর বিদ্যুৎ এর ব্যবস্থা থাকছে। টার্মিনালের প্রবেশপথেই রয়েছে ধনুক ও তীর সহ ভগবান শ্রীরামের ছবি। 

সাতটি স্তম্ভ যুক্ত টার্মিনালের ছাদ ৬৫,০০০ বর্গফুটের যা রামায়নের সাত কান্ডের প্রতীক। আগামী ১০ জানুয়ারি অযোধ্যা বিমানবন্দর থেকে ব্যাঙ্গালোর, মুম্বাই, আমেদাবাদ, কলকাতা, দিল্লি, গোয়ালিয়রের উদ্দেশ্যে বিমান চলাচল শুরু করবে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ও ইন্ডিগো। অযোধ্যা রেলওয়ে স্টেশনের উন্নয়নে ২৪০ কোটি টাকা ব্যায় করা হচ্ছে। অযোধ্যা ধাম রেলওয়ে স্টেশনে আধুনিক ব্যবস্থার সাথে পুরোনো ঐতিহ্যের মেলবন্ধন করা হচ্ছে, এছাড়াও অযোধ্যা বিমানবন্দরের মতোনই ভগবান শ্রীরামের ছবি ও তার জীবনী ফুটিয়ে তোলা হবে এখানে। নতুন দিল্লি রেলওয়ে স্টশনে যাত্রীদের জন্য আইআরসিটির বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে যেখানে স্বল্পমূল্যে ওয়াইফাই, আরমদায়ক বসার জায়গা, খাবার পাওয়া যায় ঠিক তেমনি ব্যবস্থা অযোধ্যা ধাম রেলওয়ে স্টেশনেও থাকবে। 

মাস্টারপ্ল্যান ২০৩১ এর লক্ষ্যে অযোধ্যাতে আরও অসংখ্য প্রজেক্ট চলছে। মাস্টারপ্ল্যান ২০৩১ এর আওতায় দশ বছরে অযোধ্যা নগরীর পুনঃ উন্নয়নে বিভিন্ন প্রজেক্টে অন্তত ৮৫,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। যেমন লক্ষন পথ প্রজেক্ট। গুপ্তার ঘাট থেকে রাজ ঘাট পর্যন্ত ১২ থেকে ১৩ কিলোমিটার লম্বা, আঠারো মিটার চওড়া, চার লেনের এই সড়ক তৈরি করা হবে। দুইশো কোটি টাকার এই সড়ক অযোধ্যাতে যোগাযোগ ব্যবস্থার মান আরও উন্নত করবে যাতে দেশ বিদেশ থেকে আগত অগনিত ভক্তদের সুবিধা হবে। প্রভু শ্রীরামের অযোধ্যা শহরের শোভা বৃদ্ধি করতে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয় যোগী আদিত্যনাথ একটি বিশাল পদ্মফুল আকৃতির ফোয়ারা তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে অযোধ্যায়। প্রায় ২০ একর জায়গার উপর একশো কোটি টাকা ব্যায়ে এই পদ্মফুল আকৃতির ফোয়ারা তৈরি করা হবে যা একসাথে ২৫,০০০ মানুষ দেখতে পারবে। এর কারনে অযোধ্যাতে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে। উত্তর প্রদেশ সরকার অযোধ্যাতে একটি বিশাল মন্দির মিউজিয়ামও তৈরি করবে। ২৫ একর জায়গার উপর ভারতের অন্যতম বড় ও সুন্দর মিউজিয়াম তৈরি করা হবে যাতে প্রভু শ্রীরামের পুরো জীবন, আদর্শ, সনাতন সংস্কৃতি ও রাম মন্দিরের ঘটনা আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সংরক্ষিত করে রাখা হবে যাতে ভারতের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারে। খুব শ্রীঘই এর কাজ শুরু হবে। অযোধ্যাতে রামায়ন বিশ্ববিদ্যালয়ও তৈরিও করা হবে।

মহর্ষি মহেশ যোগী ইনস্টিটিউট নামক সংস্থা ২০১৯ সালেই মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে রামায়ন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিল। এবার যোগী সরকার সেই প্রস্তাবে সবুজ সংকেত দিয়ে দিয়েছে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপি মডেলে এই বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হবে। রামায়ন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির জন্য ৪০ একর জায়গা চিহ্নিত করা হয়ে গেছে। ভারতীয় সংস্কৃতি থেকে শুরু করে আধুনিক বিজ্ঞান সমস্ত কীছুই পড়ানো হবে এখানে। প্রভু শ্রীরামের পবিত্র অযোধ্যা নগরী ভারতের বাকী সমস্ত ধর্মীয় স্থানের পুনঃ উন্নয়নের জন্য একটি রোল মডেল হবে। সব মিলিয়ে অযোধ্যা শহরের ব্যাপক পরিকাঠামো উন্নয়ন চলছে। ভারত সরকার অযোধ্যা শহরকে এমনভাবে গড়ে তুলছে যাতে বাকী বিশ্বের সামনে ভারতের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সর্বোপরি ভগবান শ্রীরামের আদর্শ প্রচারিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *