শরীরের রং নীল! কোন বিরল রোগে আক্রান্ত?
নিউজ ডেস্ক: ১৮২০ সালে মার্টিন ফুটেজ নামের এক ব্যক্তি পূর্ব কেন্টাকির প্রত্যন্ত অঞ্চলে ক্রিটে এসেছিলেন। তিনি ছিলেন একা পরিবার এবং নিজের মানুষ বলতে কেউ ছিলনা। নিজেদের মতো করে একটি বাড়ি তৈরি করেন এবং সেখানে সুখে বাস করছিলেন ।এই দম্পতি এখানে এসে তিনি এলিজাবেথ নামের একটি মেয়েকে ভালোবেসে বিয়ে করেন ।পৃথিবীতে ছিলেন তিনি একজন নীল মানব। এলিজাবেথের একটি বিরল জিনগত সমস্যা ছিল যার জন্য জন্মসূত্রে তার চার সন্তান ছিলো পুরোপুরি নীল। এলিজাবেথ সাদা চামড়ার মানুষ ছিলেন। ওনার ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন সাত সন্তান যার মধ্যে চার সন্তান ছিলেন নীল বর্ণের। এলিজাবেথের রয়েছে এক বিশেষ সমস্যা যদিও তিনি প্রথম অবস্থায় সাদা রঙের মানুষ ছিলেন কিন্তু কিছুদিন পর তার শরীর নীল রং হয়ে যায় ।
আপনারা হলিউডের অ্যাভাটার সিনেমাটি নিশ্চয় দেখেছেন। জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য বেশ কয়েক ভাবে তৈরি করা হয়েছিল সে সিনেমা । দেখা যায় ভিন্ন গ্রহের একদল মানুষ বেঁচে থাকার লড়াই। এই নীল রঙের মানুষের কাহানি ভিন্নগ্রহের এইসব মানুষ আমাদের কাছে এলেন নামে পরিচিত। সিনেমা একটি যুগলের প্রেম ও দর্শকদের আনন্দ আন্দোলিত করেছে বিভিন্ন গ্রহের মানুষ দের বেঁচে থাকার কাহিনী বিশেষ করে নিল রঙ্গের মানুষদের আমরা প্রায় সিনেমা দেখে থাকি।
এই দম্পতির একটি ছেলে জাকারি এলিজাবেথের এক বোনকে বিয়ে করেন। তারা সমাজে বর্ণবৈষম্যের শিকার হতেন প্রতিনিয়ত। না জেনে বিয়ে করেছিলেন তিনি জানতেননা এলিজাবেথ এমন একটি বিরল রোগ রয়েছে। এরপর এই পরিবারে বংশধররাও নীল রঙের চামড়া নিয়ে জন্মাতেন। তাদেরকে দেখে হাসাহাসি করত প্রতিবেশীরা।মনে করতো কোন অভিশাপ এর কারণে হয়েছে ।বলতে গেলে মায়ের সঙ্গে তাদের সন্তানদের নিয়ে এক ঘরে হয়ে থাকত ।তাদের এলাকার এক অঞ্চল ছিল যেখানকার খুব কম মানুষই সেখানে বসবাস করতে আসত।তাদের সাথে কেউই থাকতে চাইতো না। বর্ণবৈষম্যের শিকার হতেন প্রতিনিয়ত।
নীল চামড়া যুক্ত ওই নারী পরীক্ষা করতে এসেছিলেন । ডাক্তারবাবু অত্যন্ত অবাক হয়েছিলেন অস্বাভাবিক চেহারাটি দেখে। এর জন্য তিনি এর কারণ অনুসন্ধানে আগ্রহী ছিলেন এবং এই সিনড্রোম বেনজকেন এবং জাইলকেন এর মত কিছু রাসায়নিক সংস্পর্শে উত্তরাধিকারসূত্রে জিনগতভাবে পেয়ে থাকে। অনেকে গবেষণাটি করতে ডক্টরস নামে একজন নার্স নিয়োগ করেছিলেন । তিনি এই গবেষণার কাজ করতে আগ্রহী ছিলেন কারণ তিনি এর আগে হাসপাতালের একটি নীল রং এমন এক নারীকে দেখেছিলেন।
পরিবারের সদস্য এবং তৃতীয় পরীক্ষা করেন তিনি জানান এই পরিবারের সদস্যরা মেথেমোগ্লোবাইননেমিয়া নামে একটি রোগে ভুগছেন। যখন রক্ত কণিকার মেথেমোগ্লোবিনের মাত্রা এক শতাংশের বেশি হয়। তখন ত্বক নীল হয়ে যায়। আরো বেশি হলে ঠোঁট বেগুনি হয়ে যায় এবং এমনকি লাল রক্ত একটি চকোলেট বাদামি রং ধারণ করে।এই সিনড্রোমটি বেনজোকেন এবং জাইলোকেনের মতো কিছু রাসায়নিকের সংস্পর্শে বা উত্তরাধিকার সূত্রেও জিনগতভাবে পেয়ে থাকে অনেকে। গবেষণাটি করতে ডা. কেউইন রুথ পেন্ডারগ্রাস নামে একজন নার্স নিয়োগ করেছিলেন।
জন্ম থেকে অনেক প্রজন্ম পর্যন্ত এরা বিব্রতকর পরিস্থিতির পার করেছেন ।জানা যায় যে ফুগেট পরিবারে পরিচিত শেষ উত্তরসূরী ছিলেন বেঞ্জামিন বেঞ্জি স্টাসি । জন্মগ্রহণ করেছিলেন 1975সালে । গায়ের রং জন্মের থেকে নীল থাকার পরেও স্বাভাবিক চিকিৎসার মাধ্যমে ওনাদের রং স্বাভাবিক হয়ে ওঠে ।সাত বছর বয়সের মধ্যে বিরোধী মুক্ত হতে পেরেছেন তারা ।বর্তমানে পরিবারের কারো গায়ের রঙ নীল নয়। তাদের দৈনিক মিথাইলিন নীল রংয়ের ট্যাবলেট নির্দিষ্ট পরিমাণে খাওয়ানো হয় ।এবং তাদের মধ্যে নীলরং নষ্ট হয়ে যায়। তাদের পরিবার থেকে নীল রঙ্গের অভিশাপ মুক্ত হতে পেরেছিলেন। তাদের চিকিৎসা করেছিলেন ডা কেউইন।