ভারতের সবচেয়ে ধনী রাজ্য হতে চলেছে উত্তরপ্রদেশ
একটা সময় উত্তরপ্রদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা খুবই খারাপ ছিল, উত্তরপ্রদেশের জিডিপিও কম ছিল। ২২ কোটি জনসংখ্যা বিশিষ্ট উত্তরপ্রদেশ একটা সময় মানব উন্নয়নের সূচকে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় নীচে ছিল এখন সেই উত্তরপ্রদেশেই উন্নয়ন ও সাফল্যের নতুন ইতিহাস লেখা হচ্ছে। বর্তমানে উত্তরপ্রদেশে প্রায় ৩৩.৫০ লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগে প্রচুর মেগা প্রজেক্ট চলছে। যে হারে উত্তরপ্রদেশে দেশীয় ও বিদেশী বিনিয়োগ আসছে তাতে আগামী কয়েক বছরে উত্তরপ্রদেশের জিডিপি ১ ট্রিলিয়ন ডলার হয়ে যাবে। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনুমান ২০৪৭ সালের মধ্যে উত্তরপ্রদেশ ভারতের সবচেয়ে ধনী রাজ্য হয়ে যাবে। উত্তরপ্রদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের প্রশাসনিক সুদক্ষতায় উত্তরপ্রদেশে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলছে।
রপ্তানি বানিজ্য যেকোনও রাজ্যের আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশটির অর্থনৈতিক পরিকাঠামোকেও মজবুত করে। আজ বিশ্বরাজনীতিতেও সেইসব দেশেরই প্রভাব রয়েছে যাদের বিশ্ব বাজারে রপ্তানি প্রচুর, যার সবচেয়ে বড় উদাহারন চীন। ভারতেও সেসব রাজ্যের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো মজবুত যাদের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি রপ্তানি বানিজ্য। উত্তরপ্রদেশে বিজেপি সরকার গঠনের পর মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ উত্তরপ্রদেশের রপ্তানি বৃদ্ধির দিকে নজর দেন। ২০১৮ সালে যেখানে উত্তরপ্রদেশের রপ্তানি ছিল ৮৮,০০০ কোটি টাকা সেখানে ২০২২ সালে উত্তরপ্রদেশের রপ্তানি বেড়ে হয় ১.৫৬ লাখ কোটি টাকা, আগামী তিন বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০২৫ এর মধ্যে এই সংখ্যা হবে তিন লাখ কোটি টাকা। উত্তরপ্রদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ মন্ত্রী সিদ্ধার্থ নাথ সিং জানিয়েছেন উত্তরপ্রদেশ সরকার এক জেলা একটি দ্রব্য প্রকল্পে কাজ করছে। এই নীতিতে উত্তরপ্রদেশের ৭৫ টি জেলা থেকে একটি করে দ্রব্যকে নির্বাচন করে তার প্রচার করবে স্বয়ং উত্তরপ্রদেশ সরকার এবং বিদেশী দূতাবাস গুলোতেও এসব দ্রব্য লঞ্চ করা হবে বানিজ্যের জন্য। বানিজ্যের জন্য এসব দ্রব্য সরাসরি ই কমার্স ওয়েবসাইট গুলোতে যুক্ত করবে উত্তরপ্রদেশ সরকার যাতে দেশের পাশপাশি সরাসরি বিদেশেও এসব দ্রব্য বিক্রি করা হবে। এছাড়া উত্তরপ্রদেশ সরকার নিজের খরচে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বিদেশে বিভিন্ন বানিজ্যিক মেলাতে নিয়ে গিয়ে স্থানীয় দ্রব্যের প্রচার করছে।
উত্তরপ্রদেশ সরকার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযুষ গোয়েলকে অনুরোধ করেছে উত্তরপ্রদেশে তৈরি দ্রব্যের উপর দশ শতাংশ অতিরিক্ত কর যেন তুলে নেওয়া হয় যাতে বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়ার দ্রব্যের সাথে বানিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে পারে উত্তরপ্রদেশের দ্রব্য। উত্তরপ্রেদেশে কাঁচামাল ও জনশক্তি দুটোই ভরপুর রয়েছে যা অদূর ভবিষ্যতে উত্তরপ্রদেশকে ভারতের ধনী রাজ্য তৈরিতে সাহায্য করবে। রপ্তানি বানিজ্য ছাড়াও পর্যটন শিল্প কোনও একটি দেশ বা রাজ্যের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ন ভিত্তি। বিশ্বের এমন অনেক দেশ রয়েছে যাদের জিডিপির সিংহভাগ নির্ভর করেই পর্যটনের উপর। উত্তরপ্রদেশ ভারতের এমন একটি রাজ্য যা পর্যটকদের জন্য বিশেষ হিন্দু ধর্মের মানুষদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। মথুরা, বৃন্দাবন, প্রয়াগরাজ, অযোধ্যা, বেনারসের মতোন প্রসিদ্ধ হিন্দু ধার্মিকস্থান উত্তরপ্রদেশে অবস্থিত হওয়ায় প্রতিবছর ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক লক্ষ মানুষ উত্তরপ্রদেশ ভ্রমনে আসে, সাথে সাথে বিশ্বের অনেক দেশ থেকে ভারতীয় সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হওয়ার জন্যও অনেক পর্যটক এখানে আসে। এসব পবিত্র স্থানকে পূর্ন সংস্কারের জন্য উত্তরপ্রদেশ সরকার বিপুল অর্থ ব্যয় করছে।
২০২৫ সালে প্রয়াগরাজে অনুষ্ঠিত হতে চলা মহাকুম্ভের জন্য উত্তরপ্রদেশ সরকার একশো কোটি টাকা বাজেট দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। অযোধ্যা নগরীর পূর্ন সংস্কারের জন্য ৩২,০০০ কোটি টাকার বিশাল মেগা প্রজেক্টে কাজ চলছে। আগামী ২২ জানুয়ারি শ্রীরাম মন্দির অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অযোধ্যায় নতুন রাস্তা, পরিকাঠামো নির্মানের পাশাপাশি অযোধ্যাতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংস্কারের কাজ চলছে। এছাড়া বেনারস, মথুরা, বৃন্দাবনের মতোন শহর সংস্কারের জন্যও একাধিক প্রজেক্টে কাজ চলছে। বিন্ধ্য ধাম তীর্থ উন্নয়ন সংস্থা, চিত্রকোট ধামের উন্নয়নের জন্য সাত কোটি টাকার বাজেট ঘোষনা করেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। বেনারসে গঙ্গা নদীর তীর থেকে কাশি বিশ্বনাথ মন্দির পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের জন্য ৭৭ কোটি টাকা খরচ করা হবে। কাশী বিশ্বনাথ মন্দির করিডর প্রজেক্টের জন্য সাতশো কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি বেনারসে গঙ্গা ভ্রমনের জন্য ক্রুজ ভ্রমনেরও ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশ সরকার মথুরা ও বৃন্দাবনকে তীর্থ নগরী ঘোষনা করা হয়েছে। এই দুটি শহরে পর্যটকদের জন্য একাধিক সুবিধার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বৃন্দাবনে যমুনা নদীর তীরে ভারতের সবচেয়ে বড় জঙ্গল শহর তৈরি করা হচ্ছে। ধার্মিক স্থান ছাড়াও উত্তরপ্রদেশে আগ্রার মতোন শহরও রয়েছে, আগ্রার তাজমহল পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের এক আশ্চর্য। আগ্রার উন্নয়নের জন্য উত্তরপ্রদেশ সরকার ৮৮ টি প্রজেক্ট শুরু করেছে যাতে ৪৮৮ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। এছাড়াও উত্তরপ্রদেশে পর্যটন শিল্পকে আরও বিস্তার করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী পর্যটন কেন্দ্র প্রকল্প শুরু করা হয়েছে যেখানে প্রত্যেক বিধানসভা এলাকায় একটি নতুন পর্যটন কেন্দ্র তৈরি করার জন্য ২৫০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষনা করা হয়েছে। বলা হচ্ছে ভবিষ্যতে পর্যটক খাতে উত্তরপ্রদেশ যা আয় করবে তা ভারতের অন্য কোনও রাজ্য পারবেনা। ভারতবর্ষের অর্থনীতির একটি বড় স্তম্ভ হচ্ছে ভারতের আইটি ইন্ডাস্ট্রি। হরিয়ানার যেমন গুরুগ্রাম, কর্নাটকের ব্যাঙ্গালোর, পশ্চিমবঙ্গের সল্টলেক সেক্টর ৫ রয়েছে আইটি কেন্দ্র হিসাবে ঠিক তেমনই উত্তরপ্রদেশ সরকারও বেনারস, কানপুর, লখনৌ ও প্রয়াগরাজে আইটি কেন্দ্র তৈরি করছে, যদিও উত্তরপ্রদেশে নয়ডা, গ্রেটার নয়ডার মতোন আইটি কেন্দ্র আগে থেকেই আছে কিন্তু উত্তরপ্রদেশের ২২ কোটি জনসংখ্যার জন্য তা যথেষ্ট নয়, সেই জন্য উত্তরপ্রদেশ সরকার চার জায়গায় নতুন আইটি কেন্দ্র তৈরির পাশাপাশি গোরখপুর, আগ্রা, বারেলি, মিরাট, প্রয়াগরাজ, কানপুর ও বেনারসে আইটি পার্ক তৈরিও শুরু করেছে যাতে উত্তরপ্রদেশে বিদেশ থেকেও বিনিয়োগ আসে।
২০১৭ থেকে এখনও পর্যন্ত আইটি কেন্দ্র ও আইটি পার্ক তৈরিতে উত্তরপ্রদেশ সরকার ৫,৬৪২.৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে যাতে ৪৩,৭৮০ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এছাড়া লখনৌকে ভারতের প্রথম আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই শহর হিসাবে তৈরি করা হচ্ছে এবং কানপুরকে রোবটিকস ও ড্রোন প্রযুক্তির কেন্দ্র হিসাবে তৈরি করা হচ্ছে। বুন্দেলখন্ডকেও আইটি কেন্দ্র তৈরি করবার কাজ চলছে। আইআইটি কানপুর, এনআইটি, ট্রিপিল আইটির মতোন সংস্থাও উত্তরপ্রদেশ সরকারকে উত্তরপ্রদেশকে আইটি কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য সহয়তা করছে। আইটি বা ইনফরমেশন টেকনোলজিই ভবিষ্যত, বিশ্বের অর্থনীতি আইটির উপর অনেকাংশ নির্ভর করে। যার কারনে উত্তরপ্রদেশ সরকার উত্তরপ্রদেশকে ভবিষ্যতে আইটির বড় কেন্দ্র হিসাবে তৈরি করছে। গত ১০-১২ ফেব্রুয়ারী উত্তরপ্রদেশ গ্লোবাল ইনভেস্টর সামিটে উত্তরপ্রদেশে ৩৩.৫০ লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে যা উত্তরপ্রদেশের ৯৩ লাখ লোককে রোজগারের ব্যবস্থা করে দেবে।
উত্তরপ্রদেশের হওয়া এই সম্মলনে ডেনমার্ক, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, নেদারল্যান্ডস, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিন কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইউনাইটেড কিংডম, ইতালি, মরিশাস সহ ৪০ টি দেশের এক হাজার প্রতিনিধি সহ মোট ২৫,০০০ সংস্থার প্রতিনিধি অংশ নিয়েছিল। আদিত্য বিড়লা সংস্থা ২৫,০০০ কোটি টাকা, রিলায়েন্স সংস্থা ৭৫,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা জানিয়েছে উত্তরপ্রদেশে। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যালেক্স চাল্ক উত্তরপ্রদেশে সামরিক অস্ত্র তৈরির জন্য বিনিয়োগের কথা জানিয়েছে। যেকোনও জায়গার অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য সেই অঞ্চলে উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা ও সড়ক ব্যাবস্থার প্রয়োজন।
গত ছয় বছর ধরে ভারত সরকার ও উত্তরপ্রদেশ সরকার যৌথভাবে একাধিক সড়ক নির্মান প্রজেক্ট শুরু করেছে যার মধ্যে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ন প্রজেক্ট হল গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে, লখনৌ কানপুর এক্সপ্রেসওয়ে, কানপুর আউটার রিংরোড, বেনারস কলকাতা এক্সপ্রেসওয়ে, গোরখপুর শিলিগুড়ি এক্সপ্রেসওয়ে। উত্তরপ্রদেশের পূর্বাঞ্চল এলাকার বিকাশের জন্য ১০,০০০ কোটি টাকা ঘোষনা করেছে রাজ্যসরকার, এছাড়া ৮১০ কোটি টাকায় ছয়টি জাতীয় সড়ক নির্মান প্রজেক্ট শুরু হয়েছে এবং ৯,২০০ কোটি টাকায় আরও ১২ টি জাতীয় সড়ক নির্মানের প্রস্তাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এক্সপ্রেসওয়ের পাশপাশি রপ্তানি ও পরিবহনের জন্য আরও একটি গুরুত্বপূর্ন পথ হচ্ছে আকাশ পরিবহন ব্যবস্থা। ২০১৭ সালের আগে উত্তরপ্রদেশে মাত্র দুটি বিমানবন্দর ছিল, সেখানে উত্তরপ্রদেশে বর্তমানে নয়টি বিমানবন্দর রয়েছে, আরও আটটি বিমানবন্দরের কাজ প্রায় শেষ এবং চারটি আরও বিমানবন্দরের কাজ চলছে। উত্তরপ্রদেশ ভারতের প্রথম রাজ্য হতে চলেছে যেখানে পাঁচটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সহ মোট ২১ টি বিমানবন্দর থাকবে। ভারতের মোট এক্সপ্রেসওয়ের ৩৭.৭ শতাংশ উত্তরপ্রদেশেই রয়েছে। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে উত্তরপ্রদেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হচ্ছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে উত্তরপ্রদেশ ভারতের বাকী রাজ্যগুলোর জন্য রোল মডেল হতে চলেছে।