ত্বকের আসল রঙ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। দুধকে কিভাবে ব্যবহার করবেন রূপচর্চার জন্য?
প্রাচীনকাল থেকেই রূপচর্চায় দুধের ব্যবহারের কথা শুনে এসেছি আমরা। প্রাচীনকালে অনেক রানী নিজেদের যৌবন ধরে রাখার জন্য কাঁচা দুধে স্নান করতেন বলেও শোনা যায়। প্রাচীনকালে রূপচর্চার এক অবিচ্ছিন্ন অংশ হিসাবে দুধ ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে বিভিন্ন নামিদামি কোম্পানির কৃত্রিম স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট এর দাপটে রূপচর্চায় দুধের ব্যবহার বেশ কমে এসেছে । তবে জানলে অবাক হবেন দুধ কিন্তু এই সমস্ত দামি প্রোডাক্ট এর চেয়ে কোনো অংশে কম যায়না এমনকি স্কিন যে রকমই হোক না কেন দুধ ব্যবহার করলে স্কিনের পুরাতন গ্লো ফিরে আসবেই। আসুন দেখে নেই দুধ কি কিভাবে ব্যবহার করা যায় রূপচর্চার জন্য ।
(১) ত্বক পরিষ্কার করার জন্য
ত্বকের যত্নে ক্লিনজার হিসেবে অন্যান্য প্রোডাক্ট এর বদলে ব্যবহার করা যেতে পারে কাঁচা দুধ ।মেকআপ করার আগে বা মুখ পরিষ্কারের জন্য কাঁচা দুধে তুলো ডুবিয়ে সেই ভেজা তুলো দিয়ে গোটা মুখটা ভালোভাবে মুছে ফেলুন। দেখবেন মুখের সমস্ত নোংরা উঠে এসেছে ।
(২) ত্বকের আসল রঙ ফিরিয়ে আনতে
অত্যাধিক দূষণ ও সূর্যের তাপে আমাদের অনেকেরই শরীরে ট্যান পড়ে ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জলতা টাই যায় হারিয়ে ।এক্ষেত্রে অল্প কাঁচা দুধে ১টেবিল স্পুন লেবুর রস মিশিয়ে তা ভালো করে ট্যান পড়া অংশে লাগিয়ে আধ ঘন্টার মতো রেখে দিন ।দেখবেন নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে নিমেষেই ।তবে এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন ত্বক ওয়েলি হলে উষ্ণ জলে মুখ ধুতে হবে এবং ত্বক শুষ্ক হলে ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুতে হবে এই প্যাক রিমুভ করার জন্য ।
(৩) শুষ্ক ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখার জন্য
স্কিন যদি আপনার খুব বেশি ড্রাই হয়ে থাকে তাহলে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে গোটা মুখে তুলো দিয়ে ভালো করে দুধ লাগিয়ে রাখুন ।এরপর কুড়ি মিনিট অপেক্ষা করে ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন । এবার পছন্দের ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে রাতে নিশ্চিন্তে ঘুম দিন সকালে উঠে দেখবেন নিজের নিজের শুষ্ক ত্বক কিভাবে কোমল ও দীপ্তিময় হয়ে উঠেছে ।
(৪) রোদে পোড়া ভাব ও জ্বালা কমাতে
রোদে বেরোলেই অনেকেরই মুখ লাল হয়ে ওঠে কখনোবা গোটা মুখ জ্বালা করতে থাকে ।এক্ষেত্রে একটা পাতলা কাপড় দুধে ডুবিয়ে তা ত্বকে দিয়ে রাখলে আরাম মেলে ।
(৫) স্ক্রাব হিসেবে
ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলতে দুধ কিন্তু স্ক্রাব হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে ।সপ্তাহে দু-তিনবার চালের গুঁড়োর সাথে কাঁচা দুধ ও মধু মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে তা 10 মিনিটের জন্য ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। কদিন ব্যবহারেই দেখতে পাবেন ত্বকের পরিবর্তন
(৬) ত্বকের কালো ভাব দূর করা
বয়সের সাথে সাথে মুখের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা হারিয়ে মুখ হয়ে ওঠে কালো ।এক্ষেত্রে নিয়মিতভাবে কাঁচা হলুদ, দুধ ও বেসন মিশিয়ে তৈরি করে ফেলতে পারেন ফেসপ্যাক । এটি ত্বকের কালো ভাব দূর করে দেবে সহজেই ।
(৭) ব্রণের দাগ দূর করতে
অয়েলি স্কিনের এক প্রধান সমস্যা হল ব্রন।অনেক সময় ব্রন দূর হয় ঠিকই কিন্তু এই ব্রণের দাগ থেকেই যায় ত্বকে ।ত্বক থেকে ব্রণ ও দাগ দূর করার জন্য দুধ ও মধু একসাথে মিশিয়ে নিয়মিত আধঘন্টার জন্য মুখে লাগিয়ে রাখতে হবে ।নিয়মিত ব্যবহারে এর ফলে সহজেই ব্রণের দাগ দূর হয়ে যায় ।
(৮)দাগহীন ত্বক
দাগহীন ত্বক পেতেদুধ যে কেবল ব্রণের দাগ দুর করে তাই নয় ত্বকের যেকোনো দাগ এর ওপরই দুধ খুবই ভালো কাজ করে।দাগমুক্ত ত্বক পাওয়ার জন্য কয়েকটি কাঠ বাদাম ও দুধ একসাথে পেস্ট করে একটি ফেস প্যাক বানিয়ে নিতে পারেন ।নিয়মিত আধঘন্টা এটি মুখে লাগিয়ে নিয়ে জল দিয়ে ধুয়ে ফেললে ধীরে ধীরে সমস্ত দাগ নির্মূল হয়ে ত্বক হয়ে ওঠে দীপ্তিময়।
(৯) ঠোঁটের কালচেভাব দূর করতে
শুধু ত্বকের নয় এমনকি ঠোঁটের কালচে ভাব ও দূর করে কাঁচা দুধ ।কাঁচা দুধ নিয়মিত ঠোঁটে ম্যাসেজ করলে ঠোঁটের কালো ভাব দূর হয় এছাড়াও দুধের সর ও চিনি একসাথে মিশিয়ে তা প্যাক হিসাবে ঠোঁটে ব্যবহার করতে পারেন ।এর ফলে ঠোঁট হয়ে ওঠে গোলাপি ও কোমল
(১০) বলিরেখা কমানো
বয়সের সাথে সাথে ত্বকে দেখা যায় বলিরেখা ।তবে এখন দূষণের বাড়বাড়ান্তের জন্য অল্প বয়সেই বলিরেখা দেখা যায় অনেকেরই ।এক্ষেত্রে তারুণ্যময় ত্বক ধরে রাখতে মুলতানি মাটির সাথে দুধ মিশিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে নিতে পারেন ।একদিন পরপর এই ফেসপ্যাক তোকে আধঘন্টার জন্য এপ্লাই করলে বলিরেখা ক্রমশ কমবে ।
কাঁচা দুধে ভিটামিন এ ভিটামিন ডি ভিটামিন b6 প্রোটিন বায়োটিন ল্যাকটিক অ্যাসিড পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম সহ নানা পুষ্টিগুণ বর্তমান ।এগুলি ত্বককে উজ্জল আদ্র ও সুস্থ রাখার জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজনীয় সুতরাং এবার থেকে হাজার হাজার টাকা কৃত্রিম প্রোডাক্টের উপর খরচ না করে বরং দুধ ব্যবহার করে দেখুন