অফবিট

কাশ্মীরি পণ্ডিত ও হিন্দুদের উপর হামলা। কাশ্মীরকে ঘিরে এক নতুন ধরনের সন্ত্রাসী পরিকল্পনা পাকিস্তানের

জন্মলগ্নের পর থেকে ভারতের বিরুদ্ধে একের পর এক জঘন্য ষড়যন্ত্র করে চলেছে পাকিস্তান। দীর্ঘ কয়েকদশক ধরে কাশ্মীরে পাকিস্তান সন্ত্রাসী কাজকর্ম চালিয়ে আসছে, পাঞ্জাবে খালিস্তানিদেরও সহয়তা করে পাকিস্তান। ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতিরোধে আজ কাশ্মীরে পাকিস্তানের সন্ত্রাসীদের গতিবিধি প্রায় নেই বললেই চলে। আন্তর্জাতিক স্তরে সন্ত্রাসবাদের সমর্থনে অভিযুক্ত পাকিস্তান এবারে কাশ্মীরে নতুন ধরনের ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। সর্বদা সন্ত্রাসী সংগঠনের মাধ্যমে কাশ্মীরে ছায়াযুদ্ধ চালানো পাকিস্তান কাশ্মীরে এক নতুন ধরনের জঙ্গিগোষ্ঠকে মদত দিচ্ছে। 

আগস্ট, ২০১৯ এ ভারত সরকার কাশ্মীরে আর্টিকেল ৩৭০কে তুলে নেয়। এই ঘটনার কিছুদিন পরেই অনলাইনে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন তৈরি শুরু হয়ে যায় যার নাম টিআরএফ বা দি রেসিটেন্স ফ্রন্ট। ছয়মাস ধরে অনলাইনে কাশ্মীরের মানুষকে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায় এই সংগঠন। কিছুদিনের মধ্যেই এই সংগঠনে যুক্ত হয় পাকিস্তানের সন্ত্রাসী সংগঠন লস্কর ই তৈবার বহু সদস্য। এরপরেই টিআরএফ অনলাইনের পাশাপাশি একটি সংগঠন হিসাবেও কাজ শুরু করে। এইসময় পিপলস অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট ফ্রন্ট বা টিএএফএফ নামে আরও একটি জঙ্গি সংগঠন তৈরি হয় যাকে জইশ ই মহম্মদ নামক সন্ত্রাসী সংগঠন সমর্থন করতো। টিআরএফ ও টিএএফএফকে পাকিস্তানের ইনটেলিজেন্স সংস্থা আইএসআই তৈরি করেছিল। পাকিস্তানের উপর আন্তর্জাতিক স্তরে সন্ত্রাসী সংগঠনকে মদত দেওয়ার অভিযোগ বহু দশক ধরেই রয়েছে যার জন্য পাকিস্তানকে এফএটিএফের ধূসর তালিকাভুক্তও করা হয়েছে। তাই পাকিস্তান টিআরএফ ও টিএএফএফকে এমনভাবে তৈরি করেছে পাকিস্তান যাতে তাদের কেউ সন্দেহ না করে। যার জন্য অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের মতো এই দুই সংগঠনের নাম ধর্মীয় ভাষায় রাখা হয়নি। 

২০১৯ সালে টিআরএফের পাঁচ, ছয়জন সন্ত্রাসী জম্মু ও কাশ্মীরের কিরনে এলওসি পার করে আসার সময় ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের ঘিরে ফেলে। উভয়ের মধ্যে গুলি যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এই ঘটনায় টিআরএফের সমস্ত সদস্য মারা যায় কিন্তু আমাদের সেনাবাহিনী পাঁচজন সদস্যও বীরগতি প্রাপ্ত হন। এরপর সিআরপিএফের উপরও দুবার আক্রমন করে টিআরএফ। যার পরেই জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ এই নতুন সংগঠনের ব্যাপারে তদন্ত শুরু করে। তদন্তে জানা যায় কুলগামের এক ব্যক্তি মহম্মদ আব্বাস শেখ টিআরএফের প্রধান। মহম্মদ আব্বাস শেখ ১৯৯৬ সালে হিজবুল মুজাহিদীন নামক জঙ্গি সংগঠনের হয়ে কাজ করা শুরু করে। ২০১৬ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনী হিজবুল মুজাহিদীনের অন্যতম প্রধান কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানীকে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ভারতীয় সেনাবাহিনী হত্যা করে, এরপরেই মহম্মদ আব্বাস শেখ দক্ষিন কাশ্মীরের দিকে পালিয়ে যায় ভয়ে। টিআরএফ জম্মু কাশ্মীরে এমনভাবে সন্ত্রাসী কাজকর্ম শুরু করে যাতে লস্কর ই তৈবা ও পাকিস্তানের উপর কোনও অভিযোগ না হয়, কিন্তু পাকিস্তানই গোপনে টিআরএফকে অর্থায়ন করে। 

২০২১ সালের ২৩ আগস্ট জম্মু কাশ্মীর পুলিশের দশ সদস্যের বিশেষ দল আলোচি বাগ নামক এলাকায় মহম্মদ আব্বাস শেখ ও তার এক সাথীকে ঘিরে ফেলে এবং গুলিযুদ্ধে উভয়েরই মৃত্যু হয়। এরপর শেখ সাজ্জাদ গুল নামে এক ব্যক্তিকে টিআরএফের প্রধান নিযুক্ত করা হয়। শেখ সাজ্জাদ গুল শ্রীনগরে থাকতো, তার উপর অভিযোগ ছিল ২০১৮ সালে শ্রীনগরে সুজ্জাদ বুখারি নামে একজন বড় সাংবাদিককে হত্যা করার। টিআরএফ স্থানীয় কাশ্মীরি যুবকদের ভারত সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে মগজ ধোলাইয়ের কাজ করতো। ২০১৯ সালের পর থেকে টিআরএফের বিরুদ্ধে জম্মু কাশ্মীরে অন্তত বারোটি সন্ত্রাসী কাজকর্মের অভিযোগ ছিল। টিআরএফ বেশীরভাগ আক্রমনই করতো কাশ্মীরি পন্ডিতদের বিরুদ্ধে। একরকমই একটি ঘটনা ঘটে ২০২৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী। ওইদিন পুলওয়ামার স্থানীয় বাজারে যাবার সময় সঞ্জয় শর্মা নামে এক কাশ্মীরি পন্ডিতের উপর গুলি চালায় দুজন টিআরএফ সন্ত্রাসী, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সঞ্জয় শর্মার। এই ঘটনায় জড়িত থাকা দুজনের একজন হচ্ছে আকিব মুস্তাক ভাট। দুইদিন পর ২৮ ফেব্রুয়ারী অবন্তীপুরা ভারতীয় সেনাবাহিনী এই দুইজন সন্ত্রাসীকে একাউন্টারে হত্যা করে। 

২০২৩ সালের জানুয়ারীর মাসেই ভারত সরকার টিআরএফকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষনা করে এবং এর প্রধান শেখ সাজ্জাদ গুলকেও সন্ত্রাসী ঘোষনা করে। ২০২২ সালে জম্মু কাশ্মীর পুলিশ জানায় নব্বইটি অপারেশনে ১৭২টি সন্ত্রাসীকে হত্যা করা হয়েছে যার মধ্যে ১০৮ জনই টিআরএফের।

জুলাই, ২০১৭ সালে কাশ্মীরের অনন্তনাগে অমরনাথ যাত্রার সময়ে তীর্থযাত্রীদের বাসে হামলা করে সন্ত্রাসীরা যাতে আটজন তীর্থযাত্রীর মৃত্যু হয় ও উনিশজন আহত হয়। ঠিক এধরনেরই আরও একটি আক্রমনের পরিকল্পনা করে টিআরএফ। কাশ্মীরের রাজৌরি, পুঞ্চ, রিয়াসি এই তিনটি জেলাতে ১৯৯০ এর দশকে সন্ত্রাসী গতিবিধি সবচেয়ে বেশী ছিল। তবে ২০০০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত রিয়াসিতে সন্ত্রাসী গতিবিধি অনেকটাই কম হয়ে যায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রিয়াসিতে পাকিস্তানি সন্ত্রাসীদের গতিবিধি লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। ২০২২ সালের জুলাই মাসে রিয়াসির স্থানীয় বসিন্দারা দুজন সন্ত্রাসীকে ধরে ফেলে যারা এলওসি পেরিয়ে গোপনে কাশ্মীর উপত্যকাকে প্রবেশ করেছিল। এদের জম্মু কাশ্মীর পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এই দুজনেই লস্কর ই তৈবার সদস্য ছিল এবং এদের কাছে প্রচুর পরিমানে অস্ত্র, গোলাবারুদ পাওয়া যায়। ভারতীয় সেনাবাহিনী নিয়মিত কাশ্মীরে অভিযান করে সন্ত্রাসী গতিবিধি রোধ করতে। গত ৭মে কাশ্মীরে একটি অভিযানে দুজন টিআরএফ সন্ত্রাসীকে হত্যা করে সেনাবাহিনী। এই দুজন সন্ত্রাসীর মধ্যে একজন ছিল বাসির দার যার উপর এনআইএ দশ লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষনা করেছিল। এই ঘটনার বদলা নিতে টিআরএফ ঠিক একমাস পর একটি কাপুরোষিত কাজ করে। গত ৯ জুন রাষ্ট্রপতি পদে প্রধানমন্ত্রী পদে তৃতীয়বারের মতো শপথ গ্রহনকরে মাননীয় নরেন্দ্র মোদী। মোদীর শপথগ্রহন অনুষ্ঠান ছিল সন্ধ্যা ৭:৩০তে, এর ঠিক একঘন্টা আগে ৬:১৫ নাগাদ রিয়াসি জেলায় শিব খোরি মন্দির থেকে মাতা বৈষ্ণোদেবী মন্দিরের উদ্দেশ্যে যাওয়া একটি বাসে তীর্থযাত্রীদের উপর গুলি চালায় সন্ত্রাসীরা। ওইবাসে রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লির তীর্থযাত্রীরা ছিল। এই মর্মান্তিক ঘটনায় দশজন মারা যায় এবং ৩৩ জন আহত হয়। দুই থেকে তিনজন টিআরএফ সন্ত্রাসী এই ঘটনায় যুক্ত ছিল। পরে টিআরএফ এই মর্মান্তিক ঘটনার দায় স্বীকার করে। টিআরএফ লস্কর ই তৈবারই আরেকটি রূপ, পাকিস্তান টিআরএফের মাধ্যমে এটা প্রচার করার চেষ্টা করছে ভারতের মধ্যেই ভারত সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সংগঠন গড়ে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অল আইস অন রিয়াসি ট্রেন্ড চলছে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *