অফবিট

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুদ্ধ করা শতবর্ষের আমেরিকান সেনা দীর্ঘদিনের প্রেমিকা ৯৬ বছর বয়সীকে বিবাহ

সময়টা ১৯৪৪ সাল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখন চরমে রয়েছে। ইউরোপ জুড়ে হিটলারের নাজি সেনার আধিপত্য রয়েছে। ফ্রান্সের মতো সুপার পাওয়ার দেশও জার্মানির অধীনে চলে গেছে। ফ্রান্সকে জার্মানির হাত থেকে মুক্ত করতে মিত্রশক্তি ১৯৪৪ সালের ৬ জুন ফ্রান্সের নরম্যান্ডি উপকূলে পৌঁছায়। ইতিহাসে এই ৬ জুনকে ডি ডে বলা হয়৷  এই ডি ডের দিনেই হিটলারের নাজি সেনার সাথে নরম্যান্ডির যুদ্ধ হয় যাতে জার্মানি পরাজিত হয়। এই ডি ডে অভিযানে মিত্রশক্তির পক্ষে আমেরিকার বায়ুসেনার সদস্য হিসাবে হ্যারল্ড টেরেন্স নামে এক তরুনও নরম্যান্ডিতে ল্যান্ড করেছিল। হ্যারল্ড টেরেন্সকে সেসময় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল জার্মান বন্দীদের সহায়তা করার এবং বন্দী আমেরিকার সেনাদের মুক্ত করার। তারপর থেকে সুদীর্ঘ আশি বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। সেদিনের বছর কুড়ির তরুন হ্যারল্ড টেরেন্স আজ বয়সের ভারে বৃদ্ধ। কালের নিয়মে আজ তার তেমন কোনও বন্ধুই বেঁচে নেই আর। গত দুসপ্তাহ আগে নরম্যান্ডি উপকূলে ঝড়েও তার কিছু বন্ধুর মৃত্যু হয়। যুদ্ধের বিভীষিকাময় রাত হোক কিংবা প্রিয়জনদের হারানোর বেদনা, নরম্যান্ডি সবসময় হ্যারল্ড টেরেন্সের জীবনে দুঃখ এনে দিয়েছে। কিন্ত সেই নরম্যান্ডি হ্যারল্ড টেরেন্সের জীবনে সুখের স্মৃতি নিয়ে এল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে আমেরিকার বায়ুসেনাতে কাজ করা একশো বছর বয়সী হ্যারল্ড টেরেন্স গত শনিবার ফ্রান্সের নরম্যান্ডি উপকূলের কাছে ক্যারেন্টান লেস মারাইসে শহরে তার ৯৬ বছর বয়সী প্রেমিকার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন। গত ৬ জুন ছিল ডি ডের আশিতম বর্ষপূর্তি। সেই উপলক্ষেই নিজের প্রেমিকার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন হ্যারল্ড টেরেন্স। 

বলা হয় শরীরের বয়স বাড়লেও মানুষের মনের বয়স বাড়েনা। মানুষের মন চির যৌবনে আবদ্ধ থাকে। ভালবাসলে বয়স কোনও বাধাই নয় সেটাই প্রমান করলেন হ্যারল্ড টেরেন্স ও তার প্রেমিকা জিন সোয়ারলিন। নিজেদের মতো করে ছোট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আগামী দিনে একসাথে পথ চলার জন্য আবদ্ধ হলেন তারা দুজনে। ক্যারেন্টান শহরের মেয়র জিন পিয়েরে লোনিউর জানিয়েছেন হ্যারল্ড টেরেন্স তার শহরকেই বিবাহের জন্য বেছে নিয়েছেন সেজন্য তিনি খুবই সম্মানিত বোধ করছেন। তিনি বলেছেন এই শহরের সাথে টেরেন্সের স্মৃতি জড়িয়ে আছে কারন এখানের উতাহ এবং ওমাহা সমুদ্র সৈকতেই ল্যান্ড করেছিল মিত্রশক্তির সেনাবাহিনী। তিনি আরও বলেছেন তিনি হ্যারল্ড টেরেন্সকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন কারন তিনি ফ্রান্সের মুক্তিতে অংশ নিয়েছিলেন। বিবাহ অনুষ্ঠানের শেষে টেরেন্সের সম্মানে প্রবীনদের নিয়ে একটি কুচকাওয়াজেরও আয়োজন করা হয়। বিবাহ উপলক্ষে সন্ধ্যাবেলায় একটি বিশেষ অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয় যেখানে সবাই ১৯৪০ সালের মতো পোষাক পরে আসেন এবং নিকটবর্তী আমেরিকান বেস থেকে সেনারাও আসেন৷ নিউইয়র্কের বাসিন্দা হ্যারল্ড টেরেন্স বেশ কয়েকবছরই তার প্রেমিকা জিন সোয়ারলিনের সাথে ফ্লোরিডার বোকা রেটনে বসবাস করেন। 

২০১৯ সালে ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল ম্যাক্রোন হ্যারল্ড টেরেন্সকে লিজিয়ন অফ অনার সম্মান প্রদান করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হ্যরল্ড থেলমা নামে এক মহিলাকে বিবাহ করেছিলেন। প্রথম স্ত্রী থেলমার সাথে তিনি জীবনের সুদীর্ঘ ৭০ বছর সময় কাটান, উভয়ের তিন সন্তানও রয়েছে। ২০১৮ সালে থেলমার মৃত্যু হয়। ২০২১ সালে তার সাথে পরিচয় হয় জিন সোয়ারলিনের। জিনও বিধবা ছিলেন সেসময়৷ খুব দ্রুতই তাদের মধ্যে প্রনয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হ্যারল্ড জানিয়েছেন জিনের জন্যই তার জীবন নতুন করে সুন্দর হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *