সত্যিই কি গঙ্গাতে স্নান করলে সব পাপ চলে যায়?
নিউজ ডেস্কঃ প্রচলিত কথা অনুযায়ী বলা হয় যে গঙ্গা স্নান করলে নাকি সব পাপ ধুয়ে যায়। কারন এই গঙ্গা নদীকে আমাদের হিন্দুধর্মে খুব পবিত্র বলে মনে করা হয়।এই গঙ্গা নদীর মাহাত্ম্য মহাভারত এবং পুরানে একাধিক গ্রন্থে উল্লেখিত আছে। এছাড়াও স্কন্দপুরাণেও এই নদীর মাহাত্ম্য সম্পর্কে অনেক কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অনেকের মনের এই প্রশ্নটি উঠে যে সত্যিই কি গঙ্গা স্নান করলে সব পাপ ধুয়ে যায়?
পুরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, গঙ্গা তীরে একবার ভগবান শিব ও মাতা পার্বতী বিচরণ করছিলেন। সেখানে বিচরণ করতে করতে মাতা পার্বতী দেখেন যে গঙ্গা নদীতে হাজারো মানুষ স্নান করছেন এবং সেখান থেকে উঠের সময় শিবের নাম নিয়ে উঠছেন।তবে তারা গঙ্গা নদীতে স্নান করেও তাদের কারোর মুখে এক ফোঁটা হাসি নেই। এই বিষয়টি লক্ষ্য করেন মাতা পার্বতী এবং তাতে অবাক হন। তখন মাতা পার্বতী শিবকে প্রশ্ন করেন যে গঙ্গা তো পাপ নাশ করে তাহলে কেন এরকম মনে হচ্ছে আমার যে এই গঙ্গা স্নান করা মানুষগুলি তার পাপের কবল থেকে মুক্ত হয়নি। তাহলে কি গঙ্গা আর আগের মতো পবিত্র নেই।মাতা পার্বতীর এই প্রশ্ন শুনে ভগবান-শিব তাকে বলেন যে গঙ্গা আগের মতোই পবিত্র আছে তবে যেসব ব্যাক্তিরা এই গঙ্গায় ডুব দিয়ে স্নান করছেন তারা আসলে গঙ্গায় স্নানই করেনি। ভগবান শিবের কাছ থেকে মাতা পার্বতী এমন কথা শুনে কিছুই বুঝতে পারলেন না। তখন মাতা পার্বতী ভগবান শিবকে জিজ্ঞাসা করলেন যে এটা কি করে সম্ভব হয়? আপনার চোখের সামনেই কত মানুষ গঙ্গা স্নান করছেন এবং তাদের বস্ত্র এখনো ভেজা এটা কি আপনি দেখতে পাচ্ছেন না? তখন শিব বললেন যে এইসব ব্যাক্তিরা শুধুমাত্র গঙ্গায় ডুব দিয়ে স্নান করছেন কিন্তু এরা প্রকৃতপক্ষে কেউই পবিত্র জলে স্নান করছেন না। আর তাঁর সাথে ভগাবান শিব বলেন যে এই রহস্য আজ নয় আগামী কাল তোমাকে বলব। এরপর ভগবান শিব ও মাতা পার্বতী সেই স্থান থেকে প্রস্থান করেন।তারপর পরের দিন খুব বৃষ্টি নামলো।
বৃষ্টির জন্য কাদায় ভরে গেল রাস্তাঘাট। এই সময় ভগবান-শিব একজন বৃদ্ধ মানুষের রূপ ধারণ করেন এবং একটি কাদায় ভর্তি গর্তে গিয়ে বসে পড়লেন। বৃদ্ধের বেশে থাকা ভগবান-শিব ওই কাদায় ভর্তি গর্তে থেকে বেরোনোর প্রচেষ্টা করতে লাগলেন ।তখন মাতা পার্বতীকে ভগবান শিব বলেন যে মাতা পার্বতী যাতে জোরে জোরে চিৎকার করে বলে যে হঠাৎ করে তাঁর বৃদ্ধ স্বামী গর্তে পড়ে গিয়েছে তাঁকে দয়া করে কেউ সাহায্য করুন প্রাণ রক্ষা করুন।এবং এর সাথে এটাও বলতে বলেন ভগবান শিব যে যেই ব্যাক্তি তাঁকে বাঁচাতে আসবে সেই ব্যাক্তি যেন অবশ্য পুরোপুরিভাবে পাপমুক্ত হয় তাহলেই তাঁকে যেন হাত লাগায়।তা না হলে সেই ব্যাক্তি পুড়ে ভস্ম হয়ে যাবে। শিবের কথা শুনে মাতা পার্বতীও একজন সুন্দর নারীর রূপ ধারন করে বৃদ্ধের বেশে থাকা শিবের পাশে গিয়ে বসে জোরে জোরে চিৎকার করতে থাকে তাদেরকে সাহায্য করার জন্য।এর কিছুক্ষণ পর কয়েকজন মানুষ গঙ্গা থেকে স্নান করে ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন সবাই ওই মহিলার কথা তো শুনছিলেন কিন্তু মহিলাকে দেখেই তাদের মধ্যে পাপের সঞ্চার হয় কিন্তু লোকলজ্জা ও ধর্মের ভয় তারা কেউ ওই মহিলার কাছে যান না।
এছাড়াও অনেকে এটাও বলেন যে সে কেন ওই বৃদ্ধকে ছেড়ে দিচ্ছেন না।তারপর আরও কয়েকটি মানুষ সেখানে এলেন তাঁরা তাদেরকে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত তো ছিলেন কিন্তু যখন তাঁরা ওই পাপ মুক্ত হওয়ার কথা শোনেন তখন তারা থমকে যান এবং ভাবতে থাকেন যে তারা গঙ্গায় স্নান করলেও তারা তো পাপী। এইরকম অনেক মানুষই এলেন কিন্তু তারা পাপ মুক্ত হওয়ার কথা শুনে তাদেরকে কেউ আর সাহায্য করলেন না।এভাবে সন্ধ্যে হতে চলল তখন ভগবান শিব মাতা পার্বতীকে বলেন যে দেখলে অনেকেই তো গঙ্গায় স্নান করছে কিন্তু তারা কেউই বাঁচাতে এলো না।ওই সময় হরিনাম জপ করতে করতে একটি যুবক ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে সময় ওই যুবকটিকে সব কথা বলেন মাতা পার্বতী এবং তার কাছে সাহায্য চাইলেন।এইসব কথা শুনে ওই যুবকটির মন করুণায় ভরে যায়।তখন সে সাথে সাথে ওই বৃদ্ধকে ওই গর্ত থেকে থেকে টেনে তোলার জন্য প্রস্তুত হলেন।ওই যুবকটি যখন সাহায্য করতে যায় তখন মাতা পার্বতী তাকে বাধা দিয়ে তাকে বলেন যে যদি সে জীবনে কোন পাপ না করে থাকে তাহলেই সে যেন তার স্বামীকে সাহায্য করে।তা না হলে সে পুরে ভষ্ম হয়ে যাবে।মাতা পার্বতীর বেশে থাকা মহিলাটির কথা শুনে যুবকটি পুরো আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বললেন যে মাতা আমি তো এইমাত্র গঙ্গা স্নান করে এলাম। আর গঙ্গা স্নান করলে কি কোন পাপ আর থাকে। এই বলে যুবকটি ওই বৃদ্ধের বেশে থাকা ভগবান শিবকে সেই কাদা ভর্তি গর্ত থেকে টেনে তোলেন।
যুবকের এই সততার দেখে ভগবান শিব এবং মাতা পার্বতী অত্যন্ত প্রসন্ন হলেন।এবং তাঁরা ওই যুবকটির সামনে তাদের আসল রূপ ধারণ করে প্রকট হলেন।এবং তাঁকে আশীর্বাদ করেন শিব ও পার্বতী।তারপর সেই স্থান থেকে প্রস্থান করেন ভগবান শিব ও মাতা পার্বতী।যাওয়ার পথে শিব পার্বতীকে বলেন যে দেখলে এতগুলো লোকের মধ্যে শুধুমাত্র এই যুবকটিই পবিত্র গঙ্গায় স্নান করেছে।এরপর ভগবান শিব মাতা পার্বতীকে বলেন যে কেবলমাত্র গঙ্গায় মানুষ স্নান করছে তার তাদের শরীরকে পরিষ্কার করতে মনকে নয়।এই কারনে যেসমস্ত মানুষ বিনা শ্রদ্ধায় শুধুমাত্র মজার করার জন্য ও লোক দেখানোর জন্য গঙ্গা স্নান করছে তারা কোন ফলই পায় না।তবে তার মানে এটা নয় যে গঙ্গা স্নান করা ব্যর্থ।কেউ যদি ভক্তি এবং বিশ্বাসের সঙ্গে গঙ্গা স্নান করে তাহলে সে অবশ্য ফল পাবে।কিন্তু অনেকে বিশ্বাসই করে না যে গঙ্গায় স্নান করলে মনের পাপ কম হয়ে যায়।তাই যদি গঙ্গা মায়ের ওপর নিজেদের বিশ্বাস না থাকে তাহলে সেই গঙ্গাস্নান করা পুরোপুরিভাবে ব্যর্থ হয়।