সিকিমের কাছে চিনের জে ২০ যুদ্ধবিমান মোতায়েন। প্রস্তত ভারতীয় বায়ুসেনাও
চীন একটি এমন দেশ যার লক্ষ্যই প্রতিবেশী দেশ গুলোর জমি অধিগ্রহন করা। সম্প্রতি ভারত চীন সীমান্ত এলএসি বা লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলের আশেপাশে চীন তাদের গতিবিধি বৃদ্ধি করেছে। এই জন্য ভারতও এলএসির কাছে সীমান্তবর্তী এলাকায় পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দিয়েছে। যার সবচেয়ে বড় উদাহারন অরুনাচল প্রদেশের তাওয়াংএ সেলা টানেল নির্মান করা হয়েছে। তাওয়াং অঞ্চলের দিকে চীনের বহুদিন ধরেই নজর রয়েছে যার জন্য ভারত ওখানে সেলা টানেল তৈরি করেছে। উপগ্রহ চিত্র থেকে দেখা গেছে চীন জে ২০ যুদ্ধবিমান এলএসির কাছে তিব্বতের সিগাটসে এলাকায় মোতায়েন করেছে। চীনের সবচেয়ে আধুনিক পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান জে ২০ বা মাইটি ড্রাগনকে আমেরিকার এফ ৩৫ যুদ্ধবিমানের সাথে তুলনা করে চীন। সিকিম থেকে মাত্র ১৫০ কিলোমিটার দূরে সিগাটসে এলাকায় জে ২০ মোতায়েন করেছে চীন ভারতকে চাপে রাখার জন্য। যদিও এলএসিতে সবরকম পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৈরি রয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
ভারত ও চীনের মধ্যে সীমানাকে এলএসি বলে। ৩,৪৪০ কিলোমিটার লম্বা এই সীমানা তিনভাগে বিভক্ত, পশ্চিম ভাগ যার দৈর্ঘ্য ১৫৭০ কিলোমিটার, মধ্য ভাগ যার দৈর্ঘ্য ৫৪৫ কিলোমিটার এবং পূর্ব ভাগ যার দৈর্ঘ্য ১৩২৫ কিলোমিটার। পশ্চিম ভাগেই রয়েছে আকসাই চীন অঞ্চল। পূর্ব এলএসিতে অবস্থিত অরুনাচল প্রদেশকে চীন সবসময়ই তাদের অংশ বলে দাবী করে। চীন মাঝে মধ্যেই অরুনাচল প্রদেশকে তাদের মানচিত্রে যুক্ত করে এখানকার বিভিন্ন জায়গার নাম পরিবর্তন করে প্রদর্শন করে। ভারতের সাথে চীনের সীমান্ত কোনওদিন থাকতোইনা যদিনা চীন অবৈধ ভাবে তিব্বত দখল করতো। তিব্বতের সাথেই ভারতের সীমানা রয়েছে, প্রাচীনকাল থেকেই বিশেষ করে মঙ্গোলিয়ান সময় থেকেই তিব্বত একটি স্বাধীন দেশ ছিল কিন্তু ১৯৫০ এর দশকে চীন জোরপূর্বক তিব্বত দখল করে নেয়। এলএসির নীচে নেপাল ও ভুটানের ঠিক মাঝে রয়েছে সিকিম, এই সিকিমের ঠিক পাশেই তিব্বতের সিগাটসে ঘাঁটি রয়েছে যেখানে চীন তাদের জি ২০ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে। উপগ্রহ চিত্রে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সিগাটসে ঘাঁটিতে চোদ্দটি যুদ্ধবিমান রয়েছে যার মধ্যে ছয়টি জে ২০ যুদ্ধবিমান। যদিও এই ব্যাপারে বেজিং কিছু বলেনি। গত কয়েক বছরে পূর্ব এলএসিতে অর্থাৎ অরুনাচল প্রদেশ ও সিকিমের কাছে চীনের গতিবিধি বৃদ্ধি পেয়েছে যার জন্য ভূরাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারনা চীন ভারতকে চাপে রাখতে চাইছে জে ২০ এর মাধ্যমে।
জে ২০ যুদ্ধবিমানকে নিয়ে এত আলোচনা চলছে তার প্রধান কারন এটি পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমান। বিশ্বের খুব কম দেশের কাছেই পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান রয়েছে। জে ২০ এয়ার টু এয়ার যুদ্ধে সবচেয়ে বেশী পারদর্শী। জে ২০তে পিএল ১৫ মিসাইল রয়েছে যার রেঞ্জ ৩০০ কিলোমিটার। তবে ভারতীয় বায়ুসেনা এই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেনি কারন ভারত আগে থেকেই এরকম পরিস্থিতির জন্য তৈরি রয়েছে। চীনের জে ২০কে প্রতিরোধের জন্য ভারতের কাছে রাফায়েল যুদ্ধবিমান রয়েছে। জে ২০কে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান বলা হলেও ইঞ্জিন প্রযুক্তি সহ একাধিক দুর্বলতা রয়েছে এই বিমানের। তাছাড়া অনেক সামরিক বিশেষজ্ঞগন মনে করেন চীন জে ২০ নিয়ে অতিরিক্ত প্রচার করেন। তাই জে ২০কে মোকাবিলায় রাফায়েল যথেষ্ট। সিগাটসে থেকে ২৯০ কিলোমিটার দূরে পশ্চিমবঙ্গের হাসিমারাতে ১৬টি রাফায়েল ইতিমধ্যেই মোতায়েন রেখেছে ভারতীয় বায়ুসেনা যাতে এলএসিতে চীনের যেকোনও গতিবিধির জবাব দেওয়া যায়।