লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুর পেছনে যে ষড়যন্ত্র ছিল। উত্তর আজও অজানা
ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যু নিয়েও রহস্য দানা বাঁধতে দেখা গেছিল। সে রহস্যের মীমাংসা আজ পর্যন্ত হয়নি।
১৯৬৫ সালের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের পরে লালবাহাদুর শাস্ত্রী তাসখন্দ গেছিলেন একটা চুক্তিপত্র সাক্ষর করতে। ১৯৬৬ সালের ১০ই জানুয়ারী এই চুক্তিপত্র সাক্ষর হওয়ার কথা ছিল। যাতে যুদ্ধের অফিসিয়াল সমাপ্তির ঘোষণা ছিল।
তাসখন্দ পৌছাবার ঠিক একদিন পরেই প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তিনি শারিরীক ভাবে সম্পুর্ন সুস্থ ছিলেন। কোনও মারণ ব্যাধিতে তিনি আক্রান্ত ছিলেননা। অফিসিয়ালি জানানো হয় তাঁর মৃত্যু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হয়েছে। কিন্তু তাঁর মৃত্যু ঘিরে পারিপার্শিক প্রমান, উচ্চ আধিকারিকদের আচরণ, ভারতীয়দের মনে প্রচন্ড সন্দেহ ও রহস্যের সৃস্টি করে।
সম্প্রতি লালবাহাদুর শাস্ত্রীর আত্মীয় পরিজনরা ওনার মৃত্যু সমন্ধনীয় সমস্ত ডকুমেন্ট এবং ফাইলের প্রতিলিপি চেয়েছিলেন ঠিক সুভাষ চন্দ্র বসুর মতো।
আমরা শুধু সেই রহস্যের সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে পারি এবং কি হতে পারে সেই রহস্যের উত্তর তা নিয়ে ভাবনার জগতে হারিয়ে যেতে পারি। আটটি ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনার প্রশ্ন সামনে আসে যেগুলোর উত্তর কখনই পাওয়া যায়নি।
কি সেই আটটি ষড়যন্ত্র চলুন দেখে নেওয়া যাক-
- লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুর প্রথম তদন্তের রিপোর্ট কেন ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল ? সেটি কখনই কেন সামনে আনা হয়নি ?
- লালবাহাদুর শাস্ত্রীর স্ত্রীর জবানবন্দী অনুযায়ী জানা যায় তার শরীর নীল হয়ে গেছিল এবং শরীরে কাটা দাগ ছিল। শরীর তখনই নীল হয় যখন শরীর সংরক্ষণ করার জন্য কোনো ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। যদি তাঁর পোস্টমর্টেম না হয়ে থাকে তাহলে সে দাগ কিসের? যদি হয়ে থাকে তাহলে সেই রিপোর্ট কোথায়? এই সব প্রশ্ন তিনি তুলেছিলেন যার উত্তর তিনি পাননি।
- লালবাহাদুর শাস্ত্রীর ব্যক্তিগত ডাক্তার আর এন চুঘ বলেছিলেন তাঁর স্বাস্থ্য ভালো ছিল এবং তাঁর কোনও হৃদরোগ ছিলনা। তাই অকস্মাৎ হার্টফেল হওয়ার ঘটনা খানিকটা অবাস্তব। যেহেতু কোনও পোস্টমর্টেম করা হয়নি বলে জানা যায়, তাঁর শরীরে সুঁচ জাতীয় কিছু দিয়ে বিদ্ধ করার দাগ তাঁকে বিষ প্রয়োগের সম্ভাবনা নির্দেশ করে।
- যে রাতে লালবাহাদুর শাস্ত্রী মারা যান সেখানে দুজন সাক্ষী ছিল। একজন ড: আর এন চুঘ যিনি ১৯৭৭ সালে পার্লামেন্ট নির্মিত কমিটির কাছে সাক্ষ্য দিতে যাওয়ার পথে ট্রাকের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়ে মারা যান এবং দ্বিতীয় সাক্ষী ছিলেন ভৃত্য রামনাথ।
যে প্রথমে লালবাহাদুর শাস্ত্রীর বাড়ি গিয়ে তাঁর পরিবারের লোকদের জানিয়েছিলেন যে তার মনে অনেক কথার বোঝা চাপা পড়ে আছে যা তিনি বলে দিতে চান। তিনিও অদ্ভূত ভাবে এক গাড়ি দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়। সেই দুর্ঘটনায় তাঁর একটা পা কেটে বাদ দিতে হয়। তারপর আশ্চর্যজনক ভাবে তাঁর সমস্ত স্মৃতিশক্তি লোপ পায় এবং তিনি কিছুই স্মরণ করতে পারেন না (যদিও সেটা ইচ্ছাকৃত স্মৃতিভ্রষ্ট না কারো চাপে পড়ে সে নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়)।
- একজন সাংবাদিক নাম গ্রেগরী ডগলাস যিনি একটা ইন্টারভিউতে বেশ দৃঢ়তার সাথে বলেছিলেন যে লালবাহাদুর শাস্ত্রী ও ভারতের পরমানু গবেষনার জনক ড: হোমি জাহাঙ্গীর ভাবা দুজনকেই আমেরিকার গুপ্তচর সংস্থা সি আই এ হত্যা করেছে। কেননা লালবাহাদুর শাস্ত্রী ভারতের পরমানু পরীক্ষাকে সবুজ সংকেত দিয়েছিলেন। ইউ এস এ ভারত এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মিত্রতা ও ভারতের পরমানু শক্তির উত্থানে আতঙ্কিত ও নিজেদের অসুরক্ষিত অনুভব করে। এই কথোপকতন ” কনভারশেসন উইথ দা ক্র ” বিলে প্রকাশিত হয়েছিল।
- একজন রাশিয়ান বাটলার যার লালবাহাদুর শাস্ত্রীর কাছে যাওয়ার অনুমতি ছিল এবং তাঁর দ্বারাই তাকে বিষ প্রয়োগ করার সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা ছিল। তাঁকে অজানা কোনো কারণে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসবাদ করা হয়নি। আধিকারিকরা লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুকে কার্ডিয়াকএরেস্ট হিসাবেই ধরে নেয়।
- তৎকালীন গৃহমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুর কেস দিল্লী পুলিসের হাতে দেন এবং সমস্ত কাগজপত্র জাতীয় সংগ্রহালয় কে সংরক্ষণ করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নিয়ে লালবাহাদুর শাস্ত্রীর ছেলে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন কেন একজন দেশের প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুর তদন্ত উচ্চপদস্থ তদন্তকারী অফিসার দ্বারা করানো হবেনা? জেলাস্থরের পুলিস দিয়ে কেন এই তদন্ত করানো হচ্ছে ?
- CIA’s eye on south asia বইয়ের লেখক অনুজ ধর আর টি আই এর মাধ্যমে লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যু সমন্ধনীয় তথ্য প্রমানের প্রতিলিপি চেয়েছিলেন।
- কিন্তু তাঁকে তা দেওয়া হয়নি। তাঁকে প্রধানমন্ত্রী অফিস থেকে জানানো হয় শুধু একটাই ডকুমেন্ট তাদের কাছে আছে যা তারা প্রকাশ করতে পারবে না কারণ তাতে বৈদেশিক সম্পর্কের অবনতি হতে পারে। কুলদীপ নায়ার নামে আরেকজন ও সেসব ডকুমেন্ট চেয়েছিলেন। তখন তাকে জানানো হয় যে শাস্ত্রীর মৃত্যু সমন্ধনীয় কোনো ডকুমেন্ট তাদের কাছে নেই।