মানব দেহে ১ গ্যালন রক্ত থাকে। রক্ত সম্পর্কে অজানা কিছু বিষয়
জল ছাড়া যেমন মানুষের জীবন চালানো কঠিন হয়ে ওঠে ঠিক সেরকমই রক্ত ছাড়া একটি প্রাণীর বেঁচে থাকাও অসম্ভব। রক্ত হল মানব এবং উচ্চ শ্রেণীর মেরুদন্ডী প্রাণীদের একপ্রকার সংবহন তন্ত্র যা শরীরের সমস্ত কোষের প্রয়োজনীয় পদার্থ যেমন প্রোটিন, অক্সিজেন পৌঁছে দেয় ঠিক সেরকমই কোষ থেকে বর্জ্য পদার্থ দূরীভূত করতে সাহায্য করে। কিন্তু এই প্রতিবেদনে আলোচনা করা হয়েছে কোন মানুষের শরীরে কোন রক্তের বেশি দরকার আছে। কারণ একজন সাধারন মানুষের শরীরের যে রক্তের প্রয়োজন হয় তার তুলনায় একজন গর্ভবতী মহিলার শরীরে বেশি রক্তের প্রয়োজন হয়। সেরকমই প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
I)মানব দেহে ১ গ্যালন রক্ত থাকে :- সঠিকভাবে বিচার হলে বলা যায় যে একজন মানুষের শরীরে ১.২ থেকে ১.৫ গ্যালন রক্ত থাকে। অর্থাৎ লিটার অনুযায়ী প্রায় পাঁচ থেকে ছয় লিটার। তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে এই রক্তের পরিমাণ বাড়তে কিংবা কমতেও পারে। যেমন একজন গর্ভবতী মহিলার শরীরে স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ লিটার বেশি রক্ত থাকে। আবার একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে তার ওজনের উপর ভিত্তি করে ১০ শতাংশ রক্ত থাকে।
II)গর্ভাবস্থার জন্য শ্বেত রক্তকণিকা অপরিহার্য:- একজন মহিলাকে গর্ভবতী হওয়ার জন্য সবচেয়ে অপরিহার্য রক্ত হল শ্বেত রক্তকণিকা। কারণ ম্যাক্রোফেজ নামক বিশেষ শ্বেত রক্তকণিকাগুলি ডিম্বাশয় রক্তনালীর নেটওয়ার্ক গঠনে সহায়তা করে। এছাড়াও প্রজননের সময় টিস্যুতে এই রক্তকণিকা গুলি পাওয়া যায়। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ হল মহিলার প্রোজেস্টেরন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ম্যাক্রোফেজ শ্বেত কণিকা গুলি। যেহেতু জরায়ুতে ভ্রূণ রোপনের জন্য প্রোজেস্টেরন প্রয়োজন আর এই প্রোজেস্টেরনকে তৈরি করতে সহায়তা করে এই শ্বেত রক্তকণিকা।
III)রক্তে সোনা আছে :- মানব শরীরে বিভিন্ন ধাতব ও উপাদানের সাথে রয়েছে সোনাও। বিষয়টা শুনতে আজব লাগতে পারে ঠিকই কিন্তু বাস্তবে সত্য। যেমন একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের শরীরে ধাতব উপাদান হিসেবে আয়রন, ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, দস্তা, তামা এবং সীসা রয়েছে ঠিক সেরকমই একজন ৭০ কিলো ওজনের মানুষের শরীরে সোনার পরিমাণ 0.2। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে এই সোনা গুলি মানুষের শরীরের জয়েন্টের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
IV)মশাদের পছন্দ O গ্রুপের রক্ত :- বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে মশারা কোন মানুষের শরীরের রক্ত খাওয়ার আগে তাদের শরীরের ঘ্রান দ্বারা আসক্ত হয়। সেই কারণে গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয়েছে যে মশারা অন্যান্য ব্লাড গ্রুপের থেকে বেশি o গ্রুপের ব্লাডকে পছন্দ করে।
V) রক্তকণিকা স্টেম সেল থেকে আসে :- মানুষের শরীরে মূলত রক্তকণিকা তৈরি হয় হেমাটোপয়েটিক স্টেম সেল থেকে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে ৯৫ শতাংশ রক্তকণিকা মানুষের অস্থি মজ্জাতে তৈরি হয়। এছাড়াও বাদ বাকি গুলো আসে স্তনের হাড়, মেরুদন্ড এবং শ্রেণী অঞ্চলের হাড়ের মধ্য দিয়ে। এছাড়াও বিশেষ বিশেষ কিছু অঙ্গ রয়েছে যেগুলো শরীরে রক্তকণিকা তৈরি করতে সহায়তা করা।
VI)রক্ত কণিকার ভিন্ন জীবনকাল:- সমস্ত কিছুরই একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে। সেই নির্দিষ্ট সময়কালের পর একটা পর্যায়ে গিয়ে সেই বস্তুটি ধ্বংস হয়ে যায়। সেরকমই মানুষের শরীরের রক্তকণিকা গুলো একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। মানুষের শরীরের লোহিত রক্তকণিকার সময়সীমা মাত্র চার মাস। এছাড়াও অনুচক্রিকা ৯ দিন বাঁচতে পারে এবং শ্বেত রক্তকণিকা কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকতে পারে।
VII)রক্তের প্রোটিন কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে :- প্রথমেই বলে রাখা ভালো কার্বন-মনোক্সাইড হলো একটি বর্ণহীন বিষাক্ত গ্যাস। এটি জ্বালানী-বার্নিং ডিভাইস সহ সেলুলার প্রক্রিয়াগুলির একটি উপ-পণ্য হিসাবে উৎপাদিত হয়। তবে স্বাভাবিক ভাবে কোষের কার্যকর প্রক্রিয়া দ্বারা উৎপন্ন কার্বন-মনোক্সাইড অন্যান্য কার্বন-মনোক্সাইডের তুলনায় কম বিষাক্ত হয়। তবে কার্বন-মনোঅক্সাইড কোন মানুষের শ্বাসক্রিয়ার মধ্যে গেলে সেটি হিমোগ্লোবিনের সঙ্গে আবদ্ধ হয়ে রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ করে। সেই কারণে কার্বন মনোক্সাইডের মাধ্যমে অক্সিজেন থেরাপিও করা হয়ে থাকে।
VIII)শ্বেত রক্তকণিকা আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষায় সবার প্রথমে থাকে :- মানুষের শরীরে প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে শ্বেত রক্ত কণিকা। যদি কোন মানুষের শরীরে অবাধিত উপাদান প্রবেশ করে যেমন ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া এই শ্বেত রক্তকণিকা ওগুলোকে নষ্ট করে দেয়। এছাড়াও ক্যান্সার কোষ সহ অবাঞ্ছিত উপাদান ধ্বংস করতে এবং মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অনবদ্য ভূমিকা রাখে শ্বেত রক্ত কণিকা।
IX)রক্তচাপের পিছনে বিজ্ঞান :- মানুষের শরীরে গড় রক্তচাপ হয় সাধারণত 112/64 mmHg। তবে সোজা কথা বলতে গেলে রক্তনালীর দেওয়ালে রক্তের চাপকেই বলা হয় রক্তচাপ। তবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ সার্বিক দিক থেকে নিয়ম মেনে চললে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
X)সকল প্রাণীর লাল রক্ত নয়:- মূলত হিমোগ্লোবিনে আয়রনের উপস্থিতির কারণেই রক্তের বর্ণ লাল হয়। কিন্তু এটা সব প্রাণীর ক্ষেত্রে সমান নয়। একজন মানুষের রক্তের বর্ণ লাল হলেও মাকড়সা সহ অন্যান্য আর্থ্রোপডদের রক্তের বর্ণ নীল হয়। কারণ তাদের হিমোগ্লোবিনে আয়রনের পরিবর্তে অধিক পরিমাণে উপস্থিত থাকে তামা। তবে এখানে বিশেষভাবে বলে রাখার প্রয়োজন ওসিলেটেড আইসফিশের রক্তের কোনো বর্ণই হয় না।