অফবিট

ঠিক কত বছর আগে তৈরি হয়েছিল রকেট? রকেট তৈরির ইতিহাস

নিউজ ডেস্ক: মানুষের মহাকাশ অনুসন্ধানের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি কোনটি? এই প্রশ্নের উত্তরে আপনার মাথায় দুটো উত্তর আসতে পারে। এক, টেলিস্কোপ, ও দুই, রকেট। আসলে রকেটের সাহায্যেই মানুষের পৃথিবীর সীমানা পেরিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। রকেট যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা নিশ্চয়ই আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। মহাকাশযান থেকে নভোটেলিস্কোপ, পৃথিবীর সীমানার বাইরে যেকোনো কিছু পাঠানোর পেছনে এটি অপরিহার্য। এখন, এই ২০২৩ সালে এসে রকেট আমাদের কাছে খুবই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। নিয়মিত হারে একের পর এক রকেট উৎক্ষেপণ করছে মহাকাশ সংস্থাগুলো। রাশিয়ান মহাকাশ সংস্থা রসকসমস (ROSCOSMOS),  ইউরোপিয়ান মহাকাশ সংস্থা ইসা (ESA) এবং মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার (NASA) মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও স্পেস-এক্সের মতো বেসরকারি উদ্যোগেও রকেট উৎপাদন ও উৎক্ষেপণ করা হচ্ছে। বিশেষ করে স্পেস-এক্স তো রকেট প্রযুক্তিকে এক ধাক্কায় এগিয়ে নিয়ে গেছে অনেকদূর। কিন্তু এই সব কিছুর শুরুটা কীভাবে হয়েছিল? 

বিমান আবিষ্কার ও এর পেছনের গল্পটা আমরা মোটামুটি জানি। জানি রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের কর্মকাণ্ডের কথা। কিন্তু রকেট কে আবিষ্কার করলেন? কীভাবে মানুষ পৃথিবীর সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখল? সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নই বা করল কীভাবে? এই ইতিহাসটা এত চমৎকার ও প্রাচীন যে, বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই। নিশ্চয়ই ভাবছেন, কত প্রাচীন? এই দেড়-দু’শো বছর? কিন্তু তা মোটেই নয়। প্রথম সত্যিকারের রকেটের গল্প শুনতে চাইলে আমাদের ফিরে যেতে হবে ৮০০ বছর আগের চীনে। ঠিক ধরেছেন। দ্য ফার্স্ট রকেট ওয়াজ মেড বাই চায়না। তবে আদি-রকেটের আবির্ভাব আসলে আরো আগে। সেই প্রাচীন পৃথিবীতে। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ আকাশের দিকে তাকিয়ে বিস্মিত হয়েছে। কল্পনায় গ্রহ-নক্ষত্রদের ভেবে নিয়েছে স্বর্গীয় বস্তু। এসব স্বর্গীয় বস্তুরা আসলে কী এবং এরা ঠিক কীভাবে কাজ করে- এ ব্যাপারে মানুষের যথাযথ কোনো ধারণা ছিল না। তাই স্বর্গের পাশাপাশি আকাশের বুকে দেবতাদের আবাসের কথাও তারা ভেবেছিল। তবে মজার ব্যাপার হলো, দেবতারা নয়, তখনকার মানুষের হিসেবে মহাবিশ্বের কেন্দ্রে কিন্তু ছিল মানুষ। অর্থাৎ মানুষ দেবতাদেরকে নিয়ে যতটা না চিন্তিত, কিংবদন্তী ঘাটলে দেখা যায়, দেবতারা মানুষকে নিয়ে তার চেয়ে বেশি চিন্তিত! মানে, নিজেদেরকে মহান কিছু ভাবার এই ব্যাপারটা আমাদের সুপ্রাচীন অভ্যাস। 

রিচার্ড ফাইনম্যান প্রাচীন মানুষের এই ধারণার কথা লিখতে গিয়ে বলেছেন, তারা ভাবত, দেবদূতেরা এসব গ্রহ-নক্ষত্রকে কাঁধে নিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে উড়ে যায়। এছাড়াও, কিংবদন্তীতে সূর্যদেবের কথা এসেছে। রথে টানা গাড়িতে করে যিনি প্রতিদিন সকালে যাত্রা শুরু করেন। সেই যাত্রার শেষ হয় সাঁঝের বেলা। যাই হোক, সেই প্রাচীন পৃথিবীতেই মানুষ প্রথম আদি-রকেট বা রকেটের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিল। 

খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ সালের কথা। এই গল্পটা জানা যায় অলাস গিলিয়াস নামের এক রোমান লেখকের লেখা থেকে। আর্কিটাস নামের এক গ্রিকের কথা বলেছেন তিনি। ট্যারেন্টাম শহরে থাকতেন ভদ্রলোক। এই শহরটি বর্তমানে দক্ষিণ ইতালিতে পড়েছে। ভদ্রলোক প্রথমবারের মতো একটি কাঠের পাখীকে উড়িয়ে মেরেছিলেন। পাখীটা এমনিতে একটা দড়িতে বাঁধা ছিল। উড়িয়ে মারার সময় পাখীটির পেছন থেকে বাষ্প বেরিয়ে আসছিল, আর পাখীটি সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। খেয়াল করলে বোঝা যাবে, নিউটনের তৃতীয় সূত্র, মানে ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারটিই তিনি এখানে ব্যবহার করেছিলেন। এখানে একটা জিনিস একটু পরিষ্কার করে বলে দেওয়া দরকার, অক্সিজেন আবিষ্কৃত হওয়ার আগে মানুষ যেমন নিঃশ্বাস নিত, আর্কিটাসের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নীতির ব্যবহারও খানিকটা তেমনি। নিউটনের আগেই তিনি এই সূত্রের ব্যবহার করেছেন। কিন্তু এর পেছনের ব্যাপারটা বুঝতে পারেননি। আরো প্রায় ৩০০ বছর পরে আরেক গ্রিক, আলেক্সান্দ্রিয়ার ‘হিরো’ রকেটের মতো আরেকটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন। এই যন্ত্রটাও বাষ্প ব্যবহার করেই ঘুরত কিন্তু সামনে এগোত না। এর নাম ছিল ‘হিরো ইঞ্জিন’। একটা জল ভর্তি বলের নিচে আগুন জ্বলছে। ওপরে, দুটো নল গিয়ে ঢুকেছে একটা গোল বলের ভেতরে। আগুনের তাপে জল বাষ্প হয়ে গোলকটার ভেতরে ঢুকছে। এর দুই পাশে আবার দুটি এল-আকৃতির নল আছে। এই নল দিয়ে দুই পাশ একইসঙ্গে বাষ্প বেরিয়ে আসে। ফলে, বলটা ঘুরতে থাকে। কথা হচ্ছে, এটাকে তাহলে আদি রকেটের মধ্যে ফেলছি কেন আমরা? কারণ, আধুনিক রকেট যে নীতি মেনে কাজ করে, এখানেও আমরা সেই একই নীতির ব্যবহার দেখতে পাচ্ছি। এসব টুকরো জ্ঞান, অপূর্ণাঙ্গ ধ্যান-ধারণার হাত ধরেই ধীরে ধীরে সামনে এগিয়েছে মানুষ ও সভ্যতা। যা-ই হোক, আদি-রকেট নিয়ে অনেক তো হলো। এবারে চলুন, চীন থেকে ঘুরে আসা যাক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *