অফবিট

কোন মানুষ ডানহাতি নাকি বামহাতি হবে তা কিভাবে নির্ভর করে জানা আছে?

আপনি কি ডানহাতি নাকি বামহাতি? এই প্রশ্নের বেশিভাগ সংখ্যক মানুষই উত্তর দেবে ডানহাতি। কিন্তু কিছু সংখ্যক মানুষ আছে যারা বামহাতি। পরিসংখ্যান দিক থেকে বিচার করলে প্রায় ৮৫-৯০ শতাংশ মানুষই ডানহাতি এবং বাকি ১০-১৫ শতাংশ বামহাতি হতে পারে। এছাড়াও আরেক ধরনের মানুষ দেখতে পাওয়া যায় যারা উভয়হাতি অর্থাৎ Ambidextrous বা সব্যসাচী। যদিও তাদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। এই বৈশিষ্ট্য ১ শতাংশেরও কম মানুষের মধ্যে পাওয়া যায়। কিন্তু মানুষের মধ্যে এই ভেদাভেদ কেন সৃষ্টি?  কোন মানুষ ডানহাতি বা বামহাতি কিংবা উভয়হাতি হবে তা আসলে কিসের উপর নির্ভর করে? এই নিয়ে কি বলছে গবেষকরা? 

বিজ্ঞানী ও গবেষক মহলে মানুষের ডানহাতি এবং বামহাতি হওয়ার পেছনে প্রধানত দুইটি তত্ত্ব প্রচলিত রয়েছে। একটি হল প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব এবং আরেকটি হল জিন-তত্ত্ব। এই দুটি তত্ত্বই কিছুটা আলাদা আলাদা ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে এই বিষয়ে। তবে তার মানের এই নয় যে এই দুইটি তত্ত্বের মধ্যে কোনো একটি ভুল, কারন এই দুইটি তত্ত্ব প্রমাণ করার মতো তথ্য-উপাত্ত এখনও পর্যন্ত পাওয়া সম্ভব হয়নি। সেই জন্য এই দুইটি তত্ত্বই নিজেদের ‘পয়েন্ট অফ ভিউ’ থেকে সঠিক। তাই এই  দুইটি তত্ত্বকে একে অপরের পরিপূরকও বলা চলে। 

প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব অনুসারে, মানুষ ডানহাতি হবে নাকি বামহাতি হবে সেটা নির্ভর করে মূলত মানুষের ভাষা ও কথা বলার ক্ষমতার উপর। নিশ্চয় মনে প্রশ্ন উঠছে যে মানুষের ডানহাতি বা বামহাতি হওয়ার সাথে ভাষা কিংবা সেই ভাষায় কথা বলার মধ্যে কী সম্পর্ক রয়েছে? সম্পর্ক রয়েছে, ভাষা এবং সেই ভাষায় কথা বলা ছাড়াও লেখার ক্ষমতার কারণে এই ডানহাতি-বামহাতি স্বভাব সম্পূর্ণ হয়। তবে কীভাবে?

প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব অনুযায়ী,      

আদিমকাল থেকে মানুষ একে অপরের সাথে যোগাযোগের স্থাপন করার জন্য ব্যবহার করেছিল  সংকেতের। কালের পরিবর্তনের সাথে সাথে সংকেত রুপান্তরিত হয়েছিল ভাষায়। আসলে মানুষের ভাষা হল কিছু ধ্বনি বা সংকেত ছাড়া অন্য কিছুই নয়। প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদ অনুযায়ী, ভাষা বা সংকেত প্রক্রিয়াকরণ অধিকাংশ মানুষের  মস্তিষ্কের বাম অংশ হয়। আর এই বাম মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করে ডান হাতের পেশীকে। ডান হাতের পেশীর পাশাপাশি বাম মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করে ডান চোখ, ডান কান, ডান পা-ও। 

যার ফলস্বরূপ হচ্ছে যে, ভাষা বলার সময় প্রথমে মস্তিষ্কে প্রক্রিয়াকরণ হয়, তারপর আমাদের মুখে আসে। ঠিক তেমনি লেখার সময়ও ভাষা প্রথমে মস্তিষ্কে প্রক্রিয়াকরণ হয় তারপর হাতে আসে। তাই যাদের বাম মস্তিষ্কে ভাষার প্রক্রিয়াকরণ হয় তাদের  কার্যকরী হাত হবে ডানহাত। যার ফলে লেখার সময় লেখার ভার থাকবে ডান হাতের উপরই।

আনুমানিক হিসাবে অনুযায়ী বলা হয় যে , ৮৫-৯০ শতাংশ মানুষ ডানহাতি হয়। অর্থাৎ এই ৮৫-৯০ শতাংশ মানুষের ভাষার প্রক্রিয়াকরণ বাম মস্তিষ্কে হয়। আর বাকি ১০-১৫ শতাংশ মানুষের ভাষার প্রক্রিয়াকরণ হয় ডান মস্তিষ্কে। ডান মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করে বাম হাতের পেশীকে। যাদের ডান মস্তিষ্কে ভাষার প্রক্রিয়াকরণ হয় তাদের  কার্যকরী হাত হয় বামহাত। অর্থাৎ প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব অনুযায়ী, মানুষ  ডানহাতি হবে নাকি বামহাতি হবে তা নির্ভর করে মস্তিষ্কে ভাষার প্রক্রিয়াকরণের উপরই। 

আবার জিন তত্ত্ব অনুসারে, জিন হচ্ছে মানুষের শারীরিক এবং মানসিক সকল প্রকার বৈশিষ্ট্যের ধারক এবং বাহক। যেমন ধরুন কারোর চোখের রং কালো, কারো বাদামী, কারোর আবার সাদা এবং চুলের রং কালো, কারো লাল, আবার কারো সোনালী এছাড়াও পছন্দদের রং হিসাবে কেউ বলতে নীল আবার কেউ বলবে সবুজ- এই সমস্ত শারীরিক এবং মানসিক বৈশিষ্ট্যের মূল কারণ হচ্ছে পৃথক পৃথক জিন।

তাই  বিজ্ঞানী এবং গবেষকরা মনে করেন যে মানুষ ডানহাতি হবে নাকি বাম হাতি সেটার হওয়ার পিছনেও এই রকমই কোনো জিনের অবদান রয়েছে। এই বিষয়ে অন্যতম ভূমিকা পালন করে জেনেটিক মিউটেশন বা জিনগত পরিবর্তন।

মূলত একটি লোকেশনে একটি জিনের দুইটি অনুলিপি থাকে। আর এই অনুলিপিদ্বয়ের একটিকে অপরটির বলা হয় ‘অ্যালীল’ (allele)।  ডান-বাম অসমতার ক্ষেত্রে একটি অ্যালীলকে D জিন বলা হয় এবং অপর  অ্যালীলটিকে C জিন বলা হয়। ‘Dextral’ শব্দ থেকে এসেছে এই D যার অর্থাৎ হচ্ছে ‘Right’ এবং ‘Chance’ শব্দ থেকে এসেছে এই C।  কিন্তু প্রশ্ন হল কিভাবে কাজ করে অ্যালীল জিন?

একটি উদাহরণের সাহায্যে বর্ণনা করা হল এই বিষয়টি। 

ধরুন, কোন মানুষের চোখের মনির রং বাদামি। এই বাদামি রং হওয়ার জন্য  একটি জিন কাজ করে। ধরুন এর জিনোটাইপ হচ্ছে  (Bb)। এই  B জিনটি হল  বাদামী বর্ণের জন্য দায়ী যা এসেছে পিতার জনন কোষ থেকে এবং এই b জিনটি কালো বর্ণের জন্য দায়ী যা এসেছে মাতার জনন কোষ থেকে। এক্ষেত্রে বাদামী বর্ণের B জিনটি কালো বর্ণের b জিনের উপর প্রকট অর্থাৎ B জিনটি প্রকট এবং b জিনটি প্রচ্ছন্ন। যার কারনে এই সন্তানটির চোখের মণির বর্ণ বাদামী হয়েছে।

এই ডানহাতি এবং বামহাতি হওয়ার ক্ষেত্রেও এই একই ব্যাখ্যায় প্রযোজ্য। অর্থাৎ ডানহাতি হওয়ার জন্য  D জিনটি হচ্ছে প্রকট জিন। আর এই D জিনের কারনেই অধিকাংশ মানুষ ডানহাতি  হয়। আবার বামহাতিদের জন্য দায়ী জিন হচ্ছে C জিন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে D জিনের প্রকটতা বেশি থাকে যার কারনে ডানহাতি মানুষের সংখ্যা বেশি থাকে। কিন্তু আধুনিক গবেষণা জানিয়েছে যে কেবল C জিন প্রকট থাকলেও সেক্ষেত্রে ৫০-৫০ সম্ভাবনা থাকে বামহাতি হওয়ার।    

এছাড়াও এক্ষেত্রে আরো একটি হাইপোথিসিস রয়েছে।  প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব অনুযায়ী বলা হয় যে মানুষের ভাষা প্রক্রিয়াকরণ মস্তিষ্কের যে অংশ হয় তার ঠিক বিপরীত হাত হয় সেই মানুষের কার্যকরী হাত। অর্থাৎ ভাষা প্রক্রিয়াকরণ যদি  বাম মস্তিষ্কে হয় তাহলে মানুষ ডানহাতি হয়। এখানে কিছু জেনেটিক মিউটেশনের বিষয় রয়েছে।

দ্বিতীয় খণ্ড খুব শীঘ্রই প্রকাশিত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *