হিন্দুকুস পর্বতমালা আক্রমণ করেছিলেন দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত। ভারতবর্ষের ইতিহাসে যে রাজারা বিদেশে জয় করেছিলেন
ভারতের ইতিহাসে নজর দিলে দেখা যাবে সবুজে ভরপুর এই দেশ বহু দেশের রাজারা দখল করার চেষ্টা করলেও ভারত কোনদিন অন্য দেশ দখল করতে যায়নি। যদিও তার পেছনে রয়েছে বেশ কিছু কারণ। আমরা তখনই অন্যের ব্যাপারে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করি যখন আমাদের সাধারণ জীবন যাপন স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু ১০ বছরের ইতিহাস দেখলে বোঝা যাবে যে ভারতের ক্ষেত্রে নিজেদের ঘরে শান্তি বজায় রাখা ছিল প্রধান লক্ষ্য।
সাধারণ ভাষায় বলতে গেলে এটা বোঝায় যে। প্রতিবেশীদের আটকাতে গিয়ে পরদেশ দখল করা হয়নি ভারতের রাজাদের। অর্থাৎ, ভারতবর্ষ বহু দিক থেকে বিভক্ত। উদহারণ হল ভারতবর্ষের দক্ষিণ পূর্বে বঙ্গোপসাগর, দক্ষিণে ভারত মহাসাগর এবং দক্ষিণ পশ্চিমে আরব সাগর, উত্তরে বিশাল হিমালয় পর্বতমালা যেটা চীন থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন, এই কয়েকটি দিক মিলিয়েই তৈরি হয়েছে আমাদের ভারত। সেক্ষেত্রে কোন রাজার পক্ষেই সম্পূর্ণটা নিয়ে অখন্ড ভারত তৈরি করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া ভারত কোন ছোট জায়গা নয়, তাই কোন রাজ্যের রাজারা অপর রাজ্য যাতে তাদের রাজত্ব ছিনিয়ে নিতে পা না পারে সে নিয়েই মোশগুল থাকতো। নিজের রাজ্যকে বাঁচাতে গিয়ে সাত সমুদ্র তেরো নদী পার করে অন্য দেশ দখল করা তাদের আর হয়ে ওঠেনি।
অন্যদিকে , ভারতের রাজাদের কাছে আক্রমণ করার যে সুযোগ ছিল না সেটা সত্য নয়। কারণ ভারতের দক্ষিণ পূর্বে ছিল এশিয়া যেটা সম্পূর্ণ জঙ্গল ও পাহাড় পর্বতে ঘেরা ছিল। সৈন্যদের চলাচলের জন্য এই দুর্গম রাস্তা অনুপযুক্ত হলেও নৌপথে শক্তিশালী নেভিকে বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করাই যেতে পারতো। তবে ভারতীয় রাজারা যে একদম অন্য দেশ দখল করেননি সেটা বলা ভুল হবে। ভারতের এক রাজাকে নৌবাহিনীর সাহায্য নিয়ে এশিয়া দখল করতে দেখা গিয়েছিল। উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত পর্বত শঙ্কুল আফগানিস্তান ও পারস্যের কিছু অংশ দখল করতে দেখা গিয়েছিল ভারতীয় রাজাদের। আফগানিস্তান সীমানার বেশ কয়েকটি অঞ্চল বাদে অন্য প্রান্তে আর যেতে পারেননি রাজারা, কারণ সেখানে দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছিল সাপ্লাই লাইন। এমনকি পারস্যের পথ দুর্গম ও সেখানকার সাম্রাজ্য প্রবল পরাক্রান্ত থাকার কারণে সেখানে পৌঁছাতে পারেননি ভারতীয় রাজারা।
দশ বছরের ভারতের ইতিহাসে যে সকল রাজারা অন্য দেশ আক্রমণ করতে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে তুলে ধরা হলো বেশ কয়েকজন বীর রাজার বীরত্বের কাহিনী। যেমন –
I) দক্ষিণ – পূর্বে এশিয়া সহ মায়ানমার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া দখল করেছিলেন চোল রাজা।
II) আফগানিস্তান দখল করেছিল মৌর্য সাম্রাজ্য।
III) সেন্ট্রাল এশিয়ায় রাজ্য বিস্তার করতে গিয়ে অসফল হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর।
IV) ইউফ্রেটিস নদী পর্যন্ত অভিযান চালিয়েছিলেন মেওয়ারের বাপ্পা রাওয়াল।
V) ব্রিলিয়ান্ট ক্যাম্পেনের মাধ্যমে তিব্বত থেকে কাস্পিয়ান সাগর পর্যন্ত নিজের ছাপ রেখেছিলেন কাশ্মীরের রাজা ললিত দত্ত।
VI) অক্সাস বেসিন সহ হিন্দুকুস পর্বতমালা আক্রমণ করেছিলেন দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত।
VI) কনিষ্কের সাম্রাজ্য বিস্তার ছিল সেন্ট্রাল এশিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায়। যদিও কনিষ্ককে অনেকে ভিনদেশী রাজা বলে মনে করেন।