সন্তান জন্ম দিয়ে ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করেছিলেন। কত গুলি সন্তানের জন্ম একসাথে দিয়েছিলেন?
একটি সন্তানের জন্ম দেওয়ার একজন নারীর পক্ষে যেমন যন্ত্রণাদায়ক ঠিক সেরকমই সুখের। তবে এমন অনেক ঘটনা দেখা গিয়েছে যে এই সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মৃত্যুর মুখে ঢলে পরেছেন বহু নবজাতকের মা। অথচ গোটা পৃথিবীর মধ্যে এমন দুজন মহিলা রয়েছেন যারা প্রায় ৪০-এর উপরে সন্তানের জন্ম নিয়ে এখনো দিব্যি বেঁচে রয়েছেন। এমনকি বর্তমানে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ডয়ে নামও তুলেছেন তারা।
রাশিয়ার মস্কোর সুইয়া নামের একটি গ্রামে বাসিন্দা মিসেস ভাসিলিয়েভ। তার স্বামী গ্রামেরই এক কৃষক ফেদেরাও ভাসিলিয়েভের সঙ্গে বসবাস করতেন তিনি। সেখানেই নিজের ৬৯টি সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন মহিলা। তবে ৬৭ জন সন্তান জীবিত থাকলেও দূর্ভাগ্য জনকভাবে ২টি সন্তান মারা গিয়েছিল।
জানা যায় মিসেস ভাসিলিয়েভ নামের মহিলাটি নিজের জীবনে প্রায় ২৭ বার সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। মূলত ১৭২৫ থেকে ১৭৬৫ সাল পর্যন্ত লাগা তার ৪০ বছর ধরে সন্তানের জন্ম দিয়ে গিয়েছিলেন এই মহিলা। প্রথমে একবারে ৪ সন্তান এবং তারপরে ৭বার ৩ সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে ১৬ বার যমজ সন্তানের জন্ম দিয়ে ৬৯ জন সন্তানের জননী হয়েছিলেন তিনি। তবে ৬৯ জন সন্তানের মধ্যে দুজন বাদে ৬৭ জন সন্তান বেঁচে ছিল।
১৭৮৩ সাল নাগাদ এক বণিক সেন্ট পিটার্সবার্গে বানিজ্য করতে যাওয়ার সময় হঠাৎ এই মহিলার সম্বন্ধে জানতে পেরেছিলেন। এরপরই সেখানকার এক লোকাল ম্যাগাজিন জেন্টলম্যানস ম্যাগাজিনে এই মহিলার প্রসবের সকল কাহিনী তুলে ধরতেই গোটা পশ্চিমা দেশে হইচই পড়ে গিয়েছিল। মিসেস ভাসিলিয়েভের সম্বন্ধে সেই বণিক প্রকাশ করার আগে ১৭৮২ সাল নাগাদ এক সন্ন্যাসী এই ঘটনাকে সকলের সামনে তুলে এনেছিলেন, যে কিভাবে একজন মহিলা সকল যন্ত্রণা সহ্য করে এতগুলি সন্তানের জন্ম দিতে পারে।
পরবর্তীকালে মিসেস ভাসিলিয়েভের ব্যাপারে গোটা বিশ্ব জ্ঞান হওয়ার পরপরই তাকে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে তোলা হয়েছিল। তবে শুধুমাত্র ভাসিলিয়েভ নয় আরো একজন মহিলা প্রায় তার কাছাকাছি সন্তানের প্রসব করেছিলেন। উগান্ডা গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দা মরিয়ম নাবাতানজি। তিনি নিজের ২৩ বছর বয়সে ২৫ জন সন্তানের মা হয়ে গিয়েছিলেন। এরপর আস্তে আস্তে মোট ৪৪ জন সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি। তবে সেই সময়কালে এতগুলি সন্তানের জন্ম দেওয়া কোন মুখের কথা ছিল না।। কারণ আজকের দিনের মত তখন না ছিল চিকিৎসা ক্ষেত্রে এত উন্নত আর নাই ছিল গর্ভবতী মহিলাদের জন্য কোন বিশেষ ব্যবস্থা।
এমনকি সেই সময়কার মেডিকেল সাইন্স ঘাটলে দেখা যাবে যে শিশুদের জন্ম দিয়ে মায়েদের মৃত্যু সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল অধিক। এমনকি তখন সেই দেশগুলির আর্থিক অবস্থা উন্নত ছিল না যে এত গুলি সন্তান লালন পালন করবে।
আমেরিকার ‘ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার’-এর তথ্য অনুসারে, আমেরিকার একটা পরিবার একজন সন্তানের লালন পালন করতে খরচ পরত প্রায় ২ লক্ষ ৩৩ হাজার ৬১০ ডলার। এই গবেষণা সংস্থাটি ১৯৬০ সাল থেকে এই বিষয়ে গবেষণা করে তথ্য প্রদান করে আসছে। সেই হিসেবে বেঁচে থাকা শিশুরা বর্তমানে জন্মালে খরচ লাগতো প্রায় ১.৫ কোটি ডলারের বেশি টাকা, সেই সংখ্যা যদিও বিশাল।
আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি রেকর্ড অনুযায়ী ১ লাখ শিশুর জন্মালে মায়েদের মৃত্যু হতো প্রায় ২৩.৮ শতাংশ। এই মৃত্যুর শতাংশের মধ্যে শ্বেতাঙ্গ ও হিস্পানিক নারীদের তুলনায় বেশি মৃত্যু হতো প্রায় ২.৯ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গদের। অর্থাৎ এক কথায় বলতে গেলে গোটা বিশ্বে প্রসবকালীন অবস্থায় মায়েদের মৃত্যু হত প্রায় ৩ লক্ষ।
মিসেস ভাসিলিয়েভ ও মারিয়াম দীর্ঘ সময় গর্ভবতী থাকার কারণে তারা সুখে স্বাচ্ছন্দে জীবন যাপন করতে পারেননি। তারা গিনেস বুকে নাম তুলে গোটা বিশ্বের কাছে এক নতুনত্ব কায়েম করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু তার জন্য যথেষ্ট যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছিল তাদের।