অফবিট

শরীরের সৌন্দর্য বাড়াতে যক্ষা রোগ! ভিক্টোরিয়ান যুগে মহিলাদের রূপচর্চার পাগলামি জানলে অবাক হবেন

আদিম থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত বরাবরই মহিলারা নিজেদের সুন্দর দেখানোর জন্য নানারকম রূপচর্চা করে আসছেন। তবে ইংল্যান্ডের রানী ভিক্টোরিয়ার আমলে এতটাই পরিবর্তন ঘটেছিল যে দ্রুতগতিতে শিল্পায়ন এবং নগরায়ন বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মহিলাদের রূপচর্চায় এক বিরাট পরিবর্তনে এসেছিল। অর্থাৎ নিত্যদিনের সাংসারিক কাজকর্মের মধ্যে রূপচর্চা হয়ে উঠেছিল এক অন্যতম প্রধান কার্য। তবে সেই সময়ে নজর দিলে এটাও দেখা যায় যে তখন এক ধরনের কেমিক্যাল মিশ্রিত প্রোডাক্ট বেরিয়েছিল যেটা শরীরের পক্ষে ছিল বিষাক্ত। কিন্তু মহিলাদের ভেতরের রূপচর্চার পাগলামি এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে তারা সুন্দর দেখার জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি পর্যন্ত নিতে রাজি ছিলেন। এই প্রতিবেদনে সেরকমই কয়েকটা ঝুঁকিপূর্ণ রূপচর্চার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। 

I) শরীরের সৌন্দর্য বাড়ায় যক্ষা রোগ – ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে যক্ষা রোগের প্রাদুর্ভাগ ছড়িয়েছিল গোটা ইংল্যান্ডে। কারণ যক্ষা রোগে কোন ব্যক্তি আক্রান্ত হলে যদি সে ভাগ্যের জোরে বেঁচে যেত তাহলে তার রুপ ফ্যাকাসে হতো এবং রেশমি চুল, লাল ঠোঁট ও কোমর পাতলা হয়ে যেত। সেই কারণে তখনকার সময় যক্ষা রোগটা ফ্যাশনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। এরকম রুপ পেতে অনেক মহিলারাই স্বেচ্ছায় যক্ষা রোগে আক্রান্ত হতে শুরু করেছিলেন। উচ্চ এবং ধনী মহিলারা যক্ষা রোগে আক্রান্ত হওয়ার বদলে লাল ঠোঁট করে হালকা মেকআপ করে নিজেদের সুন্দর দেখাতে চাইতেন। সে সময়কার নারীরা মনে করতেন যক্ষা তাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে। তাই ওই সময়কালে নজর দিলে বোঝা যাবে ঝড়ের গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছিল যক্ষা আক্রান্তের সংখ্যা যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল মহিলা।

II) লেবু ও কমলার রসে ভালো থাকে চোখ – সেই সময় রূপচর্চার মধ্যে আরেকটি উল্লেখযোগ্য ছিল লেবু ও কমলার রস। কারণ মহিলারা মনে করতেন যে এই রসের মাধ্যমে চোখ পরিষ্কার হবে। তাই তারা অত্যাধিক পরিমাণে চোখে ব্যবহার করতেন লেবুর রস। যদিও এই পদ্ধতি খুবই বেদনাদায়ক ছিল। লেবুর রস চোখে গেলে অত্যন্ত জ্বালা করতো এবং চোখ লাল হয়ে যেত। কিন্তু চোখের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে মহিলারা নিজেদের সিদ্ধান্তে ছিলেন অটল। তাই তারা লেবুর রস অত্যাধিক পরিমাণে ব্যবহার করতেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখা যেত লেবুর রসে অ্যাসিটিক থাকার কারণে চোখের কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতো এবং অনেক মহিলারা সেই কারণে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।

III) আর্সেনিক ব্যবহারে ধবধবে হবেই চামড়া – ভিক্টোরিয়ান যুগে সৌন্দর্যতার অন্যতম প্রতীক ছিল ফ্যাকাশে ত্বক। সেই কারণে প্রত্যেকটি মহিলা নিজেদের আরও সুন্দর করে তুলতে আর্সেনিকের ব্যবহার শুরু করেছিলেন। তারা স্নানের সময় আর্সেনিক ব্যবহার করতেন এবং মাঝেমধ্যে ত্বকের কালো দাগ, ফোড়া দূর করতে সেই সমস্ত জায়গায় আর্সেনিক দিতেন। এমন কি দেখা গিয়েছিল যে অনেক মহিলারা আর্সেনিক খাবারে মিশিয়ে খেতেন পর্যন্ত। কিন্তু আর্সেনিকের সামান্য কনা ব্যবহারও ছিল জীবনের পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ। আর্সেনিক জলে হাত দেওয়া কিংবা যারা আর্সেনিক মেশানো জামা কাপড় সেলাই করতেন তাদেরও জীবন ঝুঁকিতে পড়ত। সকল মহিলারাই জানতেন আর্সেনিক ব্যবহার খুবই ভয়ানক এবং এটি ব্যবহার করলে ত্বক জ্বালা দেয়, কিন্তু তা সত্ত্বেও সৌন্দর্যের লোভে সবাই এটি ব্যবহার করতেন। যথারীতি দীর্ঘদিন ধরে আর্সেনিক ব্যবহার করার কারণে অনেক মহিলার শরীরে ঘা, মাথা ব্যাথা, বমি শুরু হয়ে গিয়েছিল। এবং একটা পর্যায়ে আর্সেনিক ব্যবহারের ফলে মহিলারা এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন যে সরকার আর্সেনিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন।

IV) টয়লেট মাস্ক ব্যবহার করা – ১৮৭৫ সাল নাগাদ ম্যাডাম হেলেন রোই দ্বারা ভিক্টোরিয়ান যুগে উদ্ভব ঘটেছিল টয়লেট মাস্কের। এটি একটি মুখের উপর নরম ফেস মাস্ক ছিল। মহিলারা নিজের মুখ স্লিম করতে এটি ব্যবহার করতেন। তবে টয়লেট মাস্ক সম্বন্ধে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে এটি কোন ক্ষতিকারক জিনিস নয়। মহিলারা সাধারণত রাতের বেলা নিজেদের মুখে এই দালতানাড়ি দিয়ে ঘুমাত, তাদের বিশ্বাস ছিল যে এই পদ্ধতিতে তারা আরো সৌন্দর্য হয়ে উঠবে।

V) ওজন কমাতে ফিতা কৃমি খাওয়া – ভিক্টোরিয়ান যুগে মহিলারা নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। তারা বরাবরই রোগা হতে চাইতেন, কারণ কোন ফ্যাশন উদ্ভব হলে যাতে তাদের শরীর সেই পোশাকে মানিয়ে নিতে পারে। তাই তারা রোগা হওয়ার চেষ্টা করতেন। এমনকি তখন একটি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়েছিল যে সকল মহিলারা রোগা হতে চায় তারা ফিতা কৃমি খাও। যদিও এই সম্প্রচার ছিল কৃমির ওষুধ তৈরির কোম্পানিগুলির যাতে তাদের ওষুধ রাতারাতি বিক্রি হয়ে যায়। তাই অনেক হেলদি মহিলারা রোগা হওয়ার জন্য নিজেরা নিজেদের কৃমি খেতেন। যদিও এই কৃমি খাওয়ার ব্যাপারটা অত সহজ ছিল না। অনেকে খেতে গিয়ে বমি করে দিতেন তো অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়তেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *