অফবিট

সকলের প্রিয় ডার্ক চকলেটের তৈরি করতে প্রচুর শিশুর চোখের জল ঝরাতে হচ্ছে

নিউজ ডেস্ক –  ভারতবর্ষে তথা গোটা বিশ্বে চকলেট হলো এমন একটি খাদ্য যেটি সুখে-দুখে এমনকি মানভঞ্জনের  ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়। তবে এই চকলেট সবচেয়ে প্রিয় একাংশের কিছু শিশুদের। যারা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য তাদের একটু কষ্ট দায়ক হয়ে পড়ে। তবে অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রেই ডার্ক চকলেট কেনা এমন কোন ব্যাপার না। ভারতবর্ষে ডার্ক চকলেট তৈরির ফ্যাক্টরি থাকলেও এখানে খুব একটা কোকো উৎপাদন হয় না। কোকোর উৎপাদন স্থল মূলত বিদেশে। আর এই বিদেশী স্থানটি হল দক্ষিণ আফ্রিকা। এই দেশের মূলত  দুটি অঞ্চল ঘানা এবং আইভরি কোস্টে সারা বিশ্বের ৭০ শতাংশ কোকো উৎপাদন করা হয়। তবে এই কোকো থেকে ডার্ক চকলেট তৈরির কাহিনি নেপথ্যে লুকিয়ে রয়েছে বহু শিশুর আর্তনাদ। 

দক্ষিণ আফ্রিকায় ঢু দিলে দেখা যাবে যে শহর অঞ্চলে কোকো বাছাই করে চকলেট তৈরি হয় সেই সমস্ত অঞ্চলের শ্রমিকরা নিতান্তই শিশু। হ্যাঁ এই সকল শিশুদের জীবন কাহিনী দেখলে চোখে জল চলে আসবে সকল মানুষের। কারণ এখানে ১২-১৫ বছরের শিশুর পাশাপাশি ৫ বছরেরও শিশু রয়েছে যাদের উপর নৃশংস অত্যাচার করে কোকো গাছ থেকে বীজ বাছাই করার কাজ করা হয়। এবং তাদের দিন প্রতি মানুষের দেয়া হয় 2 ডলার , যা ভারতীয় কারেন্সিতে হিসাব করলে দেখা যায় ১৩৪.৭৫ টাকা মতো। সেই অঞ্চলের বাসিন্দা দরিদ্র পরিবারের হওয়ায় বড়দের পাশাপাশি ছোটদের কাজ করতে হয়। আবার অন্যভাবে বিচার করলে দেখা যায় এমন বহু শিশু রয়েছে যাদের অপহরণ করে এইসব কোকো ফার্মগুলিতে কাজ করার জন্য মালি, বুরকিনা ফাসোর মতো প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে প্রতি বছর অগণিত শিশু পাচার করা হয় ঘানা ও আইভরি কোস্টের চকোলেট ফার্মে। এই সকল শিশুদের মধ্যে ৪০ শতাংশ রয়েছে কন্যা। 

ফার্মে কাজ করা শিশুদের নিত্যদিনের রুটিন হলো সকাল সাতটায় উঠে সেই যে কোকো বীজ গাছ থেকে পাড়ার কাজে লেগে পরে রাতের আগে সেই কাজ বন্ধ হয় না। এমনকি সারা দিনে মাত্র এক বেলা সেদ্ধ ডিম ও ভুট্টা সেদ্ধ খাদ্য হিসেবে দেওয়া হয় তাদের।  তবে কোন সময় ভুলবশত যদি একটু বিশ্রাম নেয় তখনই তাদের পিঠে পরে বেতের ঘা। এমন নরকীয় জীবন থেকে বহু শিশুই মাঝেমধ্যে পালানোর ফন্দি এঁটেছিল। কিন্তু অপরিণত মস্তিষ্কে ওইটুকু বুদ্ধিতে পালানোর পরিকল্পনা সফল না হওয়ায় শিশুদেরকে জালনা বিহীন এক বদ্ধ ঘরে বন্ধ করে রাখা হয়। এমনকি কিছু কিছু শিশুর ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে তাদের পায়ে শিকলের বেড়ি বেঁধেও রেখে দেওয়া হয়েছে। 

কোন সময় সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করায়  ক্লান্তির জেরে কোকো বীজ গাছ থেকে কাটার ক্ষেত্রে অনেক সময় ধারালো অস্ত্রের (ম্যাশ) আঘাতে কচি হাত কেটে যায়। রক্তক্ষরণ হয় বহু। কিন্তু তারপরেও কোন বিশ্রাম ছাড়াই অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয় তাদের। পরবর্তীতে শুধু পরিশ্রমী নয় ছোট ছোট দুধের শিশুদের শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় সেই ফার্মের মালিক,পুরুষ শ্রমিক অথবা পুলিশ কর্মীদের। আজ এই সকল শিশুর রক্ত ঝরানো কান্নায় তৈরি হওয়ার ডার্ক চকলেট হাসি ফোটাচ্ছে অন্য দেশের শিশুদের। কি আজব তাই না! একই পৃথিবীতে থেকে প্রতিবেশী দেশগুলিতে এমন নির্মম অত্যাচার হয় সেটা জানা সত্ত্বেও আর্থিক মুনাফার লোভে সেরকম কোনো পদক্ষেপ নেয় না কোন সরকার। সকলেই প্রায় দেখেও না দেখার ভান করে শিশুদের নরকের ঠেলে দিয়ে নিজেরা এক আনন্দময় সচ্ছল জীবনযাপন করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *