অফবিট

মাকড়শাকে ভয়! অ্যারাকনো ফোবিয়া সম্পর্কে জানা আছে!

বড় হোক কিংবা ছোট সামান্য তুচ্ছ প্রাণী কেউ ভয় পেয়ে থাকেন অনেকেই। উদাহরণ হিসেবে বলাই যায় যে একটা মাকড়শাকে শুধুমাত্র মেয়েরাই নয় বরং অধিকাংশ ছেলেরাও ভয় পায়। কিন্তু এর পেছনে কারণ কি! যদিও সাধারণ মানুষেরা এই বিষয়টাকে মজার ছলে নিলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন অন্য কথা। যারা মাকড়শাকে ভয় পায় তারা মূলত অ্যারাকনো ফোবিয়া নামক রোগে আক্রান্ত। গোটা পৃথিবীতে ১০ জনের মধ্যে একজন এই রোগে ভুগছেন। এবার আসা যাক অ্যারাকনো ফোবিয়া হওয়ার কারণ কি!

চিকিৎসকদের মতে, যারা মাকড়শাকে ভয় পায় তারা অন্যান্য সরীসৃপ প্রাণী যেমন সাপ, বাদুড় সহ বেশ কয়েকটি পোকামাকড়কে দেখলেও ভয় পেয়ে যান। এই সকল ব্যক্তিদেরকেই বলা হয় অ্যারাকনো ফোবিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি। শুধুমাত্র যে এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি মাকড়শাকে দেখলেই ভয় পাবেন সেটা নয়, মাকড়শার জাল দেখলেও এরা অনুমান করতে থাকেন যে আশেপাশে হয়তো কোথাও মাকড়শা রয়েছে। সুতরাং মাকড়শাকে ভয় পাওয়া এবং মাকড়শার জালকে ভয় পাওয়া একই রোগের মধ্যেই ধরা হয়। অন্যান্য রোগ কিংবা ফোবিয়ার থেকে এই অ্যারাকনো ফোবিয়া অধিক বেশি এক কেন্দ্রিক এবং এটি যে কোন মানুষের ক্ষেত্রেই হতে পারে। এই ফোবিয়া শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ অ্যারাকনে’ আর ‘ফোবোস’ থেকে। কিছু ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে ফোবিয়ার তৈরি হয় জন্মগতভাবে। যেমন সকলেই জানেন যে সাপ বিষাক্ত এবং সে মানুষের ক্ষতি করতে পারে। সে ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তির পাশে যদি বিষহীন সাপকে রেখে দেওয়া হয় তাহলেও আমাদের মনে ভয় আসে যে ওই সাপ আমাদের ক্ষতি করে দিতে পারে। এই ফোবিয়া অনেকটা সেরকমই। চিকিৎসকদের ভাষায় বলতে গেলে মানুষের শরীরের ডিএনএ ইঙ্গিত দিয়ে দেয় যে কোন জিনিসটা ক্ষতিকর। যদিও এটা সহজাত প্রক্রিয়া। 

সাপের ক্ষেত্রে যেমন মানুষ ভয় পায় সেরকম মাকড়শার ক্ষেত্রে একইভাবে ভীতি পেতে থাকে তারা। কারণ মাকড়শার কামড়ে থাকে বিষ এবং সেই বিষ দিয়েই শরীরের বিষক্রিয়া তৈরি হলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে তাই এই চিন্তাধারা থেকেই যেকোনো ব্যক্তি অ্যারাকনো ফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এটা অনেকটা প্রাকৃতিক ঘটনা। মাকড়শাকে ভয় পেতে গেলে যে মাকড়শার কামড় খেতে হবে সেটা নয়। মাকড়শা যে ভয়ের কারণ সেটা ফোবিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির মাথায় আগে থেকেই গেথে থাকে।

উদাহরণ হিসাবে আরও একটা কথা বলা যায় যে এই থিওরিকে সামনে রেখে জার্মানিতে একটি গবেষণা করা হয়েছিল। শিশুদের সামনে মাছ, ফুল, মাকড়শা এবং সাপ রেখে পরীক্ষা চালিয়ে ছিলেন বিজ্ঞানীরা। সেই পরীক্ষার ফলস্বরূপ তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে শিশুরা ফুল এবং মাছ দেখলে যে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে তার থেকে বেশি ভয় পাচ্ছে সাপ এবং মাকড়শার বেলায়। অথচ তারা কিন্তু আগে থেকে সাপ কিংবা মাকড়শা কোন প্রাণীকেই দেখেনি। সুতরাং এই দুই প্রাণীকে দেখে তাদের চোখের মণির যেমন পরিবর্তন ঘটছে ঠিক সেরকমই তাদের শরীরের ভাবভঙ্গিরও পরিবর্তন হচ্ছে। 

বর্তমান দিনে এই ফোবিয়াকে অনেকে মজার ছলে নিলেও পূর্বে এই মাকড়শার জন্যই টিকে গিয়েছিল গোটা একটা প্রজাতি। অনেকে মাকড়শা দেখলে সরে যান কিংবা মাকড়শাকে তাড়িয়ে দেন অনেকে আবার বাড়ি থেকে পর্যন্ত বেরিয়ে যান। আবার কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ভয়ের পরিবর্তে অস্বস্তি এবং বিরক্তি দেখা যায়। যদিও এটাও অ্যারাকনো ফোবিয়ার মধ্যেই পরে। বর্তমান দিনে অনেক মাকড়শার মধ্যে কোন মানুষকে আঘাত করার ক্ষমতা থাকলেও সে আঘাত করার জন্য পর্যাপ্ত সূচালো হূল নেই। গণনা করে দেখা গিয়েছে যে গোটা পৃথিবীতে ৬৩,০০০ প্রজাতির মাকড়শার মধ্যেও শুধু ২ শতাংশ মাকড়শা মানুষের জন্য ক্ষতিকর। তবে ১০ জন মানুষের মধ্যে যদি নয় জন মানুষ মাকশাকে ভয় পেয়ে থাকেন তাহলে আপনিও বাধ্য হবেন সেই প্রাণীটিকে ভয় পেতে। অনেকটাই পদ্ধতির মাধ্যমেও অনেকে অ্যারাকনো ফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন।

এবার তাহলে আপনি অ্যারাকনো ফোবিয়ায় আক্রান্ত কিনা সেটা বুঝবেন কি করে! মাঝেসাজে বড় মাকড়শা দেখলে যে কোন মানুষ ভয় পাবে এটা প্রাকৃতিক বিষয়। কিন্তু যারা ফোবিয়ায় আক্রান্ত তাদের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি শারীরিক লক্ষণ প্রকাশ্যে দেখা যায়। যেমন – 

  • কান্না পাওয়া
  • হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি
  • হঠাৎই মাথা ঘোরানো
  • হজমের সমস্যা
  • গা ঘেমে যাওয়া
  • বমি ভাব
  • শ্বাসকষ্ট
  • হাত ও পায়ে কাঁপুনি 

এছাড়াও মাকড়শা যে স্থানে থাকতে পারে সেই স্থান এড়িয়ে চলেন ফোবিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি। পাশাপাশি সামাজিক নানা অনুষ্ঠান থেকে দূরত্ব বেড়ে যায় এবং সচরাচর কোন কাজে মনোযোগ দিতে পারেন না। যদি আপনার কিংবা আপনার পরিবারের কোনো ব্যক্তির মধ্যে এই ধরনের জিনিসগুলি লক্ষ্য করা যায় তাহলেই বুঝতে হবে যে সেই ব্যক্তি অ্যারাকনো ফোবিয়ায় আক্রান্ত। তবে এই ফোবিয়ার থেকে মুক্তির পথ রয়েছে বেশ।

যদি কোন ব্যক্তি অ্যারাকনো ফোবিয়ায় আক্রান্ত থাকার কারণে কোনো কাজে ঠিকভাবে মন দিতে পারছেন না, এছাড়াও রাতে ভালোভাবে ঘুম হচ্ছে না কিংবা আচমটাই কোন চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়ছেন তাদের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সহজ উপায় মেনে চললেই এই ফোবিয়া থেকে মুক্তি পেতে পারেন। যেমন – 

  • স্পাইডারম্যান সিনেমা দেখে অনেকেই এই ফোবিয়া থেকে মুক্তি পেয়েছেন। সেক্ষেত্রে আপনি মাকড়শাকে কোন নজরে দেখছেন তার উপর ভিত্তি করে আপনি এই প্রবিয়া থেকে মুক্তি পাবেন কিনা। যদিও কাউন্সিলিং কিংবা থেরাপির মাধ্যমে এই ফোবিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 
  • অনেক ভয় থেকে মানুষকে মুক্ত করতে যেমন থেরাপির প্রয়োজন হয় ঠিক সেরকমই এই ফোবিয়া থেকে মুক্তি পেতেও থেরাপি যথেষ্ট উপযুক্ত। ভার্চুয়াল রিয়ালিটি থেরাপি এই ফোবিয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ একটি প্রক্রিয়া। অনেক সময় বারংবার নিজের চোখের সামনে মাকড়সাকে দেখলেও অনেকের মন থেকে ভয় চলে যায়। 
  • একান্তই যদি এই সমস্ত পদ্ধতি অবলম্বন করে ভয় থেকে মুক্তি পাওয়া না যায় তাহলে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলা বাঞ্ছনীয়। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকরা এই ভয় দূর করার জন্য কোন ওষুধ না দিলেও বারংবার কাউন্সিলিংয়ের মধ্যে দিয়েও এই ফোবিয়া থেকে মুক্তি পাওয়ার পরামর্শ দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *