দৈনন্দিন জীবনের শুরু হত সূর্যোদয়ের আগেই। কেমন ছিল প্রাচীন রোমানদের জীবনযাপন?
আধুনিক যুগে সবচেয়ে বেশি চর্চিত প্রাচীন সভ্যতাগুলি মধ্যে অন্যতম ছিল প্রাচীন রোম। তাই সেই সভ্যতা নিয়ে আমাদের কৌতূহলের শেষ নেই। অনেকেরই মনের মধ্যে ওঠে নানা প্রশ্ন। সেখানকার মানুষরা কিভাবে জীবনযাপন করত? তারা সকাল থেকে রাত কিভাবে কাটাত? অবসর সময়ে কি কি করত তারা?
প্রাচীন রোমের সকাল
প্রাচীন রোমের নগরবাসীদের কেমন জীবন ছিল তার বর্ণনা পাওয়া যায় ইতিহাসবিদ জেরোম কার্সোপিনো তার ১৯৩৬ সালের বই ‘ডেইলি লাইফ ইন অ্যানশেন্ট রোম’ বইয়ের থেকে। সেই সময়ও নগর এবং গ্রামীণ জীবনের মধ্যে ছিল বিস্তর পার্থক্য। বর্তমান দিনের মতোই সেই সময়েও নগর জীবন ছিল গতিশীল এবং ব্যবসাকেন্দ্রিক অন্যদিকে গ্রামীণ জীবন অনেকটাই শান্ত এবং কৃষিকেন্দ্রিক।
কার্সোপিনো জানিয়েছিলেন যে, প্রাচীন রোমের বাসিন্দাদের দৈনন্দিন জীবনের শুরু হত সূর্যোদয়ের আগেই। এই কাক ভোরে অনেকে কাজে যাওয়ার জন্য উঠে যেত। আবার অনেকের রাস্তাঘাটের হই-হট্টগোলে কারনে উঠে পড়ত ঘুম থেকে। সূর্যোদয়ের আগেই রোমবাসীর স্কুলশিক্ষক, রুটিওয়ালা, গোয়ালাদের হই-হট্টগোলে কারনে ঘুম ভেঙে যেত।
রোমান নাগরিকরা দিনের আলো থাকতে থাকতে সব কাজকর্ম সেরে ফেলতে চাইত। কারন ওই সময় বৈদ্যুতিক বাতি ছিল না। সেই জন্যই সকালবেলায় পোশাক পরে তৈরি হওয়ার পিছনে সময় নষ্ট করত না এখানকার নাগরিকরা।
সকালের জল খাবারে প্রাচীন রোমের বাসিন্দাদের থাকত এক গ্লাস জল এছাড়াও অন্য কিছু খেত না এবং স্নান তারা বিকেলে করত। তাদের স্নান করার জন্য স্থানীয় স্নানাগার ছিল।
রোম এক দ্রুত বর্ধনশীল নগরী ছিল। এই শহরের রাস্তায় যাতায়াত করা ছিল এক ঝামেলার বিষয়। কারন এই শহরের রাস্তাঘাট মাকড়সার জালের মতো সর্বত্র এলোমেলোভাবে ছড়ানো ছিল। এখানকার অনেক রাস্তায় ছিল কাঁচা।
যানজট এড়ানোর জন্য বাইরের লোকেদের গাড়ি শহরের প্রবেশদ্বারের কাছে রাখতে হত। এরপর সেখান থেকে তাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে হত পায়ে হেঁটে। সিজারের আদেশ অনুযায়ী, শুধুমাত্র ভবনের ঠিকাদারদের রোমের রাস্তায় গাড়ি চলার অনুমতি ছিল।
বিকালের জীবন
এই নগরীর অধিকাংশ মানুষই কাকভোরে তাদের কাজ শুরু করতেন এবং দুপুরের দিকে তাদের সমস্ত কাজ গুছিয়ে আনতেন। আমোদ প্রমোদ করার জন্য তাদের কাছে থাকত গোটা বিকেলটা।
সেই সময় অবসর কাটানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের বন্দোবস্ত করা ছিল। বিভিন্ন উপায়ে নাগরিকরা তাদের অবসর সময় উপভোগ করতে পারত। যেমন- থিয়েটারে নাটক দেখতে যাওয়া, সার্কাস ম্যাক্সিমামে চলে যেতে গিয়ে রেস দেখা ইত্যাদি। এছাড়াও ছিল কলোসিয়াম যেখানে নানা রকমের অনুষ্ঠান হত। যেমন- গ্ল্যাডিয়েটরদের বিখ্যাত লড়াই, ঝানু শিকারিদের শিকার দেখানো ইত্যাদি। এই সমস্ত প্রাণী সাম্রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে ধরে নিয়ে আসা হত।
আবার মাঝে মধ্যে কলোসিয়ামের মেঝেতে মিছিমিছি জাহাজের ভাঙাচোরা টুকরো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ফেলা হতো।এরপর সেখানে কৃত্রিম নৌযুদ্ধ করত যোদ্ধারা। এছাড়াও ওখানে ছিল নানা ধরনের খাবার কিনে খাওয়ার ব্যবস্থাও। ওখানে বাদাম, বরই, খেজুর, ডালিম ইত্যাদি বিক্রি হত।
তবে যদি কোনোদিন থিয়েটারে কোনো নাটক বা কলোসিয়ামে কোনো শো না থাকত তখন সেই দিনটি তারা রাতের খাওয়ার আগ অবধি রাস্তায় ইতস্তত ঘুরে বেড়িয়ে অথবা জুয়া খেলায় তাদের সময় কাটাত। আবার কিছু কিছু রোমানরা শরীরচর্চা করে কিংবা গণস্নানাগারে গরম জল দিয়ে আরামদায়ক স্নান করতেন।
রোমান সমাজের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল গণস্নাগার। এই সমস্ত গণস্নানাগার এই শহরে খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতক থেকে তৈরি হয়েছে। প্লিনি দি এল্ডারের সময়কালে এই সাম্রাজ্যের কয়েক হাজার গণস্নাগার ছিল।
এই সমস্ত স্নানাগারে শিশুরা বিনামূল্যে স্নান করতে পারত। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের বর্তমানদিনের আধসেন্ট খরচ করতে হত। সেই সময়েও এইসমস্ত স্নানাগারগুলিতে ছিল অনেক সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি মনোরঞ্জন করার মতো ব্যবস্থা। যেমন- স্নানাগারগুলিতে গরম এবং ঠাণ্ডা জলের ব্যবস্থা, সুইমিং পুলে স্নান করার ব্যবস্থা ইত্যাদি। এছাড়াও বেশিরভাগ স্নানাগারের ভিতরে থাকত বাগান, ঘুরে বেড়াবার জায়গা, ব্যায়ামের জায়গা। সেখানকার লোকেরা কয়েক ধরনের খেলাধুলা করত। এই খেলাগুলির মধ্যে অন্যতম খেলা ছিল টেনিস এবং রাগবির মতো এক ধরনের বল খেলা।