লাইফস্টাইল

পূর্ণবয়স্করা দিনে কটি করে ডিম খাওয়া উচিৎ?

নিউজ ডেস্ক  –  ডিম নিয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে। কেউ বলে ডিম খেলে ফ্যাট হয় তো কেউ বলে ডিম খেলে কোলেস্ট্রল বৃদ্ধি পায় এবং স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এইসব তথ্য যে একদম মিথ্যে সেটা গবেষণা করে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। 

দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চীনে প্রায় ৫ লাখ লোকের উপর গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞানীরা বলেছেন ডিমে কোন রকম হৃদরোগ  কিংবা স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে না। এছাড়াও ডিম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দিয়েছেন খোদ ব্রিটিশ ডায়েটিং অ্যাসোসিয়েশনের ডক্টর ফ্রাঙ্কি ফিলিপস।  

অন্যদিকে আবার ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিটা  ফরুহি  পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানিয়েছেন একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে দিনে একটি গোটা ডিম খাওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে হৃদযন্ত্র কিংবা শরীরে রক্ত সঞ্চালনে কোন সমস্যা দেখা দেবে না।

ব্রিটিশ ডায়েটিং অ্যাসোসিয়েশনের ডক্টর ফ্রাঙ্কি ফিলিপস বলেছেন,’পুষ্টিকর খাদ্য উপাদানের মধ্যে অন্যতম হলো ডিম।  এছাড়াও ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন এ, বি, ডি এবং ভিটামিন বি টুয়েলভ। এমনকি ডিমে রয়েছে লুটেইন ও 

যিয়াস্যানথিন নামে দুটি   প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান যা চোখের দৃষ্টি খুব ভালো রাখে ও বৃদ্ধ বয়সে চোখের ক্ষতি ঠেকাতে সহায়তা করে। সেক্ষেত্রে একদিনে দুটো ডিম খাওয়া যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে ডিমে প্রোটিন থাকলেও অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার বাদ দেওয়া চলবে না। তবে এসব খাবার গুলো বুঝে খেতে হবে কারণ ডিম খাওয়ার পাশাপাশি বেশি প্রোটিন যুক্ত খাবার খেলে সেটা শরীরে দৈনিক প্রয়োজনের তুলনায় দুই থেকে তিনগুণ বৃদ্ধি পায়। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত প্রোটিন কিডনির উপর চাপ ফেলতে পারে। 

ব্রিটেনের চিকিৎসক আরো বলেছেন,’ ডিমে সামান্য পরিমাণ কোলেস্ট্রল থাকলেও সেটা খুব একটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। যদি না তেল-ঘি কিংবা মাখন দিয়ে ডিম রান্না করে খাওয়া হয়।  এক্ষেত্রে তেল কিংবা মাখন দিয়ে ডিম রান্না করলে ডিমের সঙ্গে ক্ষতিকর চর্বি বা স্যাচুরেটেড ফ্যাট অতিরিক্ত তৈরি হয়।  এটা শরীরের পক্ষে অনুপোযোগী।  সেক্ষেত্রে এই ফ্যাট জিনিস গুলি এড়িয়ে চলা প্রয়োজন’। 

গবেষণা অনুযায়ী প্রমাণিত হয়েছে যে একটি মিডিয়াম সাইজের ডিমে ৪.৬ গ্রাম চর্বি থাকে। যেটা প্রায় এক চামচের সমান। এছাড়াও ডিমে স্যালমোনেলা জীবাণু রয়েছে বলেও আশির দশকে তথ্য দিয়েছিলেন ব্রিটেনের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী। 

১৯৮৮ সালের ডিসেম্বর মাসে মন্ত্রী এডউইনা কারি বলেছিলেন’ ব্রিটেনে যেসব ডিম বাজারে পাওয়া যায় সেগুলোর বেশিরভাগের মধ্যেই স্যালমোনেলা জীবাণু রয়েছে। এরপরেই একজন মন্ত্রীর এমন তথ্য প্রকাশ করায় ডিমের চাহিদা যখন অনেকাংশে কমে গিয়েছিল। যদিও পরে ভুল তথ্য প্রকাশ করার জন্য পদত্যাগ করতে হয়েছিল মন্ত্রীকে। কিন্তু সেই জীবাণুর তথ্য প্রকাশ করার পরেই নব্বইয়ের দশকে খামারিরা টিকা কর্মসূচি চালু করেন যার কারণে বর্তমানে সেই জীবাণুর উপস্থিতি নেই বললেই চলে।  

অন্যদিকে চিকিৎসাবিজ্ঞান বলেছে ডিম কিভাবে রান্না করা উচিত!  

যেহেতু ডিম অধিক প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার তাই  রান্না করার সময় খুব একটা বেগ পেতে হয়না। সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর ভাবে ডিম খাওয়া যায় ডিম সিদ্ধ করে বা পোচ করে। কিন্তু অনেকে ডিম সিদ্ধ খেতে পারেন না তাই ডিম ভাজা করে খায়। কিন্তু অধিকাংশ চিকিৎসকরা বলেছেন ডিম যেকোনোভাবে রান্না করে খাওয়া গেলেও ভাজা করে খাওয়া উচিত নয়। তাই কাঁচা ডিম বা হালকা করে রান্না ডিমও পুষ্টিকর। এছাড়াও ডিম বাড়িতে মজুদ রাখতে হবে ফ্রিজে যে নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে অর্থাৎ ট্রে রয়েছে সেখানে। 

বিবিসির খাদ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ডিম বরফের মধ্যে তিন মাস পর্যন্ত রাখা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ডিমের সাদা অংশ তিন সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে কিন্তু ডিমের কুসুম ভালো থাকে মাত্র তিন দিন। তবে কোন ডিম ভালো রয়েছে এবং কোনটি খারাপ তা যাচাই করতে হলে একটি পাত্রে ঠান্ডা জল নিয়ে তার মধ্যে ডিম দিয়ে দিতে হবে। যদি ভারী হওয়ার কারণে ডিম জলের তলে পরে যায় তাহলে সেটি ভালো রয়েছে এবং সেটি যদি জলের উপর ভাসমান হয় তাহলে ডিম নষ্ট হয়ে গিয়েছেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে উল্লেখ করা থাকে কোন তারিখের মধ্যে ডিম ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে মুরগি ডিম পাড়ার পর ২৮ দিন সেই ডিম  ভালো  এবং ব্যবহারের যোগ্য থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *