অফবিট

জাপানিদের কেন এতদিন বাঁচতে পারে জানেন?

নিউজ ডেস্ক – ভোটার দেশে জনগণনা উপর বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে ৭০ কিংবা ৮০ বছর বয়স হলে অর্থাৎ বার্ধক্য চলে আসলেই দেহের সিংহভাগ শক্তি হারিয়ে ফেলে মানুষেরা। নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে ওঠে বৃদ্ধ বৃদ্ধারা। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই কালের নিয়মকে এক প্রকার চ্যালেঞ্জ জানালো জাপানের বাসিন্দারা।  ৭০ হোক কিংবা ৯০, বার্ধক্য চলে আসলেও যেনো শরীরে তার কোন প্রভাব পড়ে না। আর পাঁচজন জোয়ান মানুষের মতোই সমস্ত কাজকর্ম করে নিজেদের দিন যাপন করে জাপানের বৃদ্ধ বৃদ্ধারা। কিন্তু এর পেছনে কি রহস্য লুকিয়ে রয়েছে তা নিয়ে কৌতূহল বহু মানুষের।  কি এমন মন্ত্র জানেন জাপানের বাসিন্দারা! যে বয়সের সংখ্যা বেড়ে গেলেও শরীরের উপর কোন প্রভাব পড়ে না তার। বহুবার বহু মানুষের মনে এই প্রশ্ন জন্ম নিতেই এর কারণ খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে কোন মন্ত্র কিংবা রহস্য নয় স্বাস্থ্যকর খাবার এবং হাসিখুশি থাকাই হলো এদের প্রধান কারণ। যে কোন দেশের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাসিখুশি থাকলে এবং মন ভালো রাখলে নানান রোগব্যাধি থেকে দূরে থাকা যায় এবং আয়ু দীর্ঘ হয়। আর চিকিৎসকদের এই পরামর্শ পেয়ে  বীজ মন্ত্র করে অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছে জাপানিরা। এছাড়াও রয়েছে খাদ্য তালিকায় পুষ্টিতে ভরপুর খাদ্যের সমারোহ।  ফ্যাট ও চর্বি জাতীয় খাবার বর্জন করে শাকসবজিকেই বেছে নিয়েছেন ওই দেশের নাগরিকেরা। এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে জাপানিদের খাদ্য তালিকায় থাকা বেশ কয়েকটি খাবারের নাম ও তার বিবরণ।

I) জিঞ্জার রাইস :- সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে জাপানিদের খাবারে ফ্যাটের পরিবর্তে থাকি অধিক পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট।  যার কারণে বিভিন্ন রোগ যেমন ডায়াবেটিস, বাত, ক্যান্সার এবং আলঝেইমারসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা কম থাকে।  এছাড়াও জাপানিরা একপ্রকার জিঞ্জার রাইস খেয়ে থাকেন। শষ্যদানা, এবং শাক সবজি সাথে মোটামুটি পরিমানে প্রানীজ দ্রব্য এবং সয় সেই সাথে সামান্য ডিম ও দুধ আর ফল দিয়ে তৈরি হয় এই খাবার। এই খাবারে ফ্যাটের পরিমাণ কম এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং ফ্ল্যাভনয়েডের  পরিমাণ বেশি থাকায় এদের আয়ুর বৃদ্ধি পায়।  এছাড়াও জাপানিরা অত্যাধিক পরিমাণে সবুজ শাকসবজি ও ফল গ্রহণ করে থাকেন। যার কারণে গোটা পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র জাপানের বাসিন্দাদের গড় আয়ু বেশি।

II) চা’য়ে আসক্ত :- জাপানিদের ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে অন্যতম হলো গ্রিন টি। এবং এই গ্রিন টি থেকে তৈরি করা মাচা চা  হল ওই দেশের জনপ্রিয় এবং বাসিন্দাদের অন্যতম পছন্দের পানীয়। শুধুমাত্র চায় আসক্তির জন্যই জাপানিরা চা পান করেন না। বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্রিন টি থেকে মাচা চা প্রস্তুত করা হয়। এই চাঁদ যেমন স্বাদে অতুলনীয় ঠিক তেমনি আন্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর। এই দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে অন্যতম হল চা। সে কারণেই তারা গ্রিন টি থেকে তৈরি জনপ্রিয় এবং ঐতিহ্যবাহী চা পান করার সাথে সাথে তাদের শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বৃদ্ধি করে।

III) কম মিষ্টান্ন খাওয়া :-  গোটা পৃথিবীর ঘুরলে মিষ্টি অপছন্দ করা মানুষের সংখ্যা খুব কমই পাওয়া যাবে। বিশেষ করে জাপানের মতো দেশে যেখানে বিভিন্ন ধরনের অতুলনীয় স্বাদের মিষ্টি পাওয়া যায়। তবে ওই দেশে মিষ্টির তা অতুলনীয় হলেও সেখানকার বাসিন্দারা খুব কম পরিমাণের  খেয়ে থাকেন। কারণ মিষ্টিতে বেশি পরিমাণে শর্করা থাকায় সেটি দেহের পক্ষে ক্ষতিকর। সে কারণেই তারা অল্প পরিমাণে মিষ্টি গ্রহণ করেন এবং বেশি পরিমাণে শাকসবজি, ফল এবং পুষ্টিগুণ খাবার খেয়ে থাকেন।

IV) সকালের খাবার খুব গুরুত্বপূর্ণ :-  জাপানিদের কাছে সকালের প্রাতঃ রাশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সারা রাত ঘুমানোর পর একপ্রকার রাতের খাবার হজম হয়ে যাওয়ায় ভোর বেলা উঠে তারা আগে কিছু স্বাস্থ্যবান খাবার গ্রহণ করে। তারা প্রাতভোজনের মধ্যে চালের পরিজ এবং ভাপানো ভাত সাথে সিদ্ধ মাছ খেতে ভালোবাসে। দিনের শুরুতে শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়ায় তারা সারা দিনের শক্তি এবং পুষ্টি গ্রহণ করেন।

V) ডায়েট না করা :-  জাপানিরা যেরকম পুষ্টিকর খাবার খায় ঠিক সেরকমই অক্লান্ত পরিশ্রম করে। এছাড়াও তাদের খাবারে কোনরকম ফ্যাট কিংবা চর্বি না থাকায় তারা আলাদা করে ডায়েট করে না।

VI) পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সংস্কার :- পুষ্টিকর খাদ্যকে শরীর ভালো রাখার পাশাপাশি নিজেদের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতেও কোন অংশে কম যান না জাপানের বাসিন্দারা। এমনকি শিশুদের স্কুল থেকে শেখানো হয় কিভাবে নিজের চারিপাশ পরিস্কার এবং পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। প্রত্যহ আহার করার মতোই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নের বিষয়টা জাপানিদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

VII) রুটির ওপরে ভাতকে গুরুত্ব দেওয়া :- জাপানে গম থেকে তৈরি আটার বদলে ময়দা দিয়ে রুটি করার প্রচলন রয়েছে। সে কারণেই ময়দার রুটি খেলে প্রায় সময় বদহজম কিংবা অম্বল হয়ে থাকে। তাই জাপানীরা রুটির বদলে ভাতকে বেশি গুরুত্ব দেয়।

VIII) খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা :- জাপানের ওকানিয়া শহরের বাসিন্দাদের মধ্যেই দীর্ঘ আয়ু বেশি নজর কাড়ে। কারণ সেখানকার বাসিন্দারা কখনোই বিনা কারণে অবসর সময় যাপন করেন না। তারা ভোর বেলা উঠে কঠোর পরিশ্রম করা শুরু করে দেন। সে কারণে তাতে আলাদা করে শরীর চর্চা করার প্রয়োজন পড়ে না। ওকানিয়ার সবচেয়ে বৃদ্ধ ব্যক্তির বয়স ১০১ কিংবা ১০২ বছর।

IX) ঐক্য ও টেকসইপ্রবনতা :- নিজের চারপাশে থাকা লোকদের সঙ্গে অনবরত সংগ্রাম চালাতে হলে আপনি আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন না। গোষ্ঠীবদ্ধতার চর্চ্চা এবং তা চালিয়ে যাওয়া জীবনের চ্যালেঞ্জিং মুহূর্তগুলোতে আপনাকে শক্তি যোগাবে। জাপানীরা এই গোষ্ঠীবদ্ধতার চর্চ্চা করে।

X) অল্প কিছুতে আনন্দ লাভ :- নিজেকে খুশি রাখতে খুব একটা কষ্ট করেন না জাপানিরা। তোরা ছোট ছোট জিনিস থেকেই নিজেদের খুশির ঠিকানা খুঁজে নেয়। যেমন সকালের শিশির ধরা, সূর্যের তাপ গায়ে উপভোগ করা ইত্যাদির মত এমন অনেক ছোট ছোট জিনিস রয়েছে যেগুলিকে জাপানিরা প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।

XI)  খাবার খাওয়ার ধরন :- জাপানীরা অতিভোজন করে না। তারা ছোট প্লেটে খাবার খায় যাতে তারা তৃপ্ত অনুভব করে। তারা ধীরে খাবার খায়। এবং খাবারের অংশ নিয়ন্ত্রণে বিশ্বাস করে। তবে শুধুমাত্র খাবার গ্রহণ করার পদ্ধতি নয় তারা খাবার রান্না করার দিকেও বিশেষ মনোযোগী।  তারা সবচেয়ে কম তেল দিয়ে রান্না করে আর বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে যেমন: ধীরে রান্না করা, সিদ্ধ করে, ভাপে রান্না করে, গাঁজাইয়া রান্না করে ও হালকা ভাজি করে। এই ধরণের রান্না করার কারণ খাবারের পুষ্টি মূল্য যাতে বজায় থাকে। জাপানিরা খাবারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় হয় স্যুপকে এরপরে রয়েছে শাক সবজি ও ভাত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *