অফবিট

পৃথিবীর প্রচুর দেশের অর্থ আমেরিকাতেই আছে

আমেরিকার কারেন্সি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে সব দেশের রিজার্ভ রয়েছে আমেরিকাতে। বিনিয়োগের এত প্রশস্ত উৎস আমেরিকার মতো আর কোথাও নেই। কারণ আমেরিকান গভর্নমেন্টের দেশে-বিদেশে তাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। সে অর্থ ট্যাক্স হিসেবে আদায় করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ঘাটতি পূরণের জন্য ধার দেনা করতে হয়। এ জন্য ইস্যু করা হয় ট্রেজারি বিল এবং অন্যান্য বিনিয়োগ মাধ্যম। মহাশূন্যের ব্ল্যাক হোলের সাথে তুলনা করা যায়। সে কৃষ্ণগহ্বর শোষণ করে নেয় দুনিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ ও ব্যালেন্স। অন্যান্য দেশে একাধিক সমস্যা থাকার কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক এবং অন্যান্য লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য দুনিয়াব্যাপী আমেরিকান ডলারের আকাশচুম্বী চাহিদা রয়েছে। 

অন্য একটি কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে আমেরিকার কারেন্সিতে ডলারের গুরুত্বের কারণে দুনিয়ার সব সেন্ট্রাল ব্যাংক সেই কারেন্সিতে তাদের সিংহভাগ রিজার্ভ, প্রায় ৬০ শতাংশ সংরক্ষণ করে। অনেক পিছনে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অভিন্ন কারেন্সি ইউরো। সেই কারেন্সিতে সংরক্ষিত রিজার্ভের পরিমাণ ২০ শতাংশ। এছাড়াও ২০২০ সালে আমেরিকার অর্থনীতির অনুমিত আকার প্রায় ২২ ট্রিলিয়ন ডলার ছিল। দুনিয়ার প্রায় এক চতুর্থাংশ উৎপাদনের সমপরিমাণ। তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ, উন্নত অবকাঠামো এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কারণে তারা অর্থনৈতিক পরাশক্তিতে পরিণত হয়েছে।

আমেরিকার অর্থনৈতিক পরিকাঠামো শক্তিশালী বলে প্রায় ১৬৭০ বিলিয়ান আমেরিকান ডলার কারেন্সি নোট সার্কুলেশনের রয়েছে। তার অর্ধেকই বিভিন্ন দেশের। অনেক দেশে নিজস্ব কারেন্সি নেই। তারা আমেরিকান ডলার দিয়ে কাজ চালিয়ে নেয়। পূর্ব ইউরোপ ও ল্যাটিন আমেরিকায় দৈনন্দিন লেনদেনের জন্যও মার্কিন ডলার ব্যবহার করা হয়। কম্বোডিয়াতে নিজস্ব কারেন্সির পাশাপাশি মার্কিন ডলারে লেনদেন করা হয়। অল্প কিছুদিন আগে জিম্বাবুয়ের আকাশছোঁয়া মুদ্রাস্ফীতি সামাল দিতে ডলারকে লেনদেনের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করেছিল তারা। 

সারা দুনিয়ায় প্রায় ১৮৫টি কারেন্সি চালু আছে। তার বেশির ভাগই অভ্যন্তরীণ লেনদেনের জন্য ব্যবহার করা হয়। ইউরো সহ উন্নত বিশ্বের অধিকাংশের দেশগুলোর কারেন্সি অবাধে রূপান্তরযোগ্য অর্থাৎ কনভার্টিবল কারেন্সি। সবচেয়ে শীর্ষে রয়েছে মার্কিন ডলার। আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারের ভূমিকা ৯০ শতাংশ। যেমন, বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। সে সব দেশের কারেন্সির পরিবর্তে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমেরিকান ডলারে মূল্য পরিশোধের জন্য লেটার অব ক্রেডিট খোলা হয়। আমেরিকান ডলারের প্রতি আস্থা এর প্রধান কারণ।

পৃথিবী ব্যাপী ধার-দেনার বেশির ভাগই সংঘটিত হয় মার্কিন ডলারে। ২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী ফাইনান্সিয়াল সংকটের সময় আমেরিকার বাইরের দেশগুলির ব্যাংকের দেনার পরিমান ছিল ২৭ বিলিয়ন ডলার তার মধ্যে একমাত্র আমেরিকান ডলারের পরিমাণ ছিল ১৮ বিলিয়ন ডলার। দেশের বাইরে আমেরিকান ডলারে যে সব ধার দেনা হয় তার একটা আলাদা নাম আছে ইউরো ডলার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *