নাচতে নাচতে মৃত্যু। কোন রোগের কারনে?
নিউজ ডেস্কঃ নাচ এক আমোদের বিষয়। যা মানুষ মূলত বিনোদন শিল্পের মধ্যেই রেখেছে। অন্যদিকে মৃত্যু, যা এক অবশ্যম্ভাবী প্রাকৃতিক বিষয়। প্রতিটি মৃত্যুর একটি মীমাংসিত কারণ থাকে। যখন মৃত্যুর কোনো মীমাংসিত কারণ থাকে না, তখন তা রহস্যময় হয়ে ওঠে। কিন্তু মানুষ তাদের অন্যতম প্রিয় বিনোদন নাচ করতে করতে ঢলে পড়ছে মৃত্যুর কোলে, যার রহস্য আজও অমীমাংসিত।
১৫১৮ সালের ফ্রান্সের স্ট্রাসবার্গ শহরের একটি দিন। অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিক ভাবে সময় বয়ে চললেও একটি সময় আমূল বদলে যায়। ফ্রাউ ত্রাফেয়া নামের এক মহিলা রাস্তায় নেমে নাচতে শুরু করেন। কিছু সময়ের মধ্যেই তার দল ভারী হয়ে যায়। সম্পূর্ণ বিরতিহীনভাবে নাচতে থাকেন তারা। ক্রমেই ৪০০ জনের এক অদ্ভুত নৃত্য মিছিল নামে শহরে।
পরিস্থিতি খারাপ হয়ে ওঠে যখন রাস্তায় নামতে নামতে ১২ জনেরও বেশি মানুষ মারা যান। যাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষেরই মৃত্যুর কারণ ছিল ডিহাইড্রেশন, ক্লান্তি ও স্ট্রোক। আশ্চর্যের বিষয় প্রথম রাস্তায় নেমে নাচ শুরু করা মহিলা ফ্রাউ ত্রাফেয়া তখনও বেঁচে ছিলেন। দীর্ঘ একমাস বিরামহীন নাচার পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।
এই স্বেচ্ছায় মৃত্যু মিছিলের কারণ আজও ধোঁয়াশা হয়ে থেকে গিয়েছে। পরিস্কার বিশ্লেষণ পাওয়া না গেলেও ইতিহাসবিদ জন ওয়ালার বলেছিলেন, মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল শহরটির মানুষ। রোগ, ক্ষিদে ইত্যাদির কারণে মানসিক ভাঙন নেমে আসে শহরে। যে কারণে এক জটিল মনোবৈকল্যের শিকার হন মানুষ। সেখান থেকেই উদ্দাম নাচতে নাচতে জ্ঞান, বুদ্ধি লোপ পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। যদিও মতভেদ দেখা দিয়েছে এই বিশ্লেষণেও।
অন্যদিকে, আরেকটি বিশ্লেষণ জনপ্রিয় হয়েছিল। যেখানে বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, এরগট ফাঙ্গাস নামে এক প্রজাতির ফাঙ্গাসের আক্রমণের ফলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন শত শত মানুষ। যদিও এই ফাঙ্গাসের আক্রমণে দিনের পর দিন নাচ করাটা অসম্ভব ছিল। যার ফলে এই মতামতকেও গ্রহন করতে পারেননি অনেকে। বিশেষজ্ঞরা এই ঘটনার নাম দিয়েছিলেন, ‘ড্যান্সিং প্লেগ’। অনুসন্ধিৎসু মানুষ একদিন এই ঘটনার রহস্যভেদ করবে বলেই মত একাংশের।