পৃথিবীর কোন দেশে প্রথম রুটির আবিস্কার হয়েছিল?
নিউজ ডেস্ক – নিম্ন হোক কিংবা মধ্যবিত্ত সকলেরই খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকে রুটি। বিভিন্নভাবে ও বিভিন্ন স্বাদের রান্না করে অনেকেই গমের রুটি খেয়ে থাকেন। কিন্তু সেই রুটি কবে, কোথায় এবং কিভাবে আবিষ্কার হয়েছিল সেটি এবার প্রকাশ্যে আনলেন বিশেষজ্ঞরা। গবেষকদের মতে আনুমানিক যীশুখ্রীষ্টের জন্ম সময় কিংবা তারও আগে থেকে শুরু হয়েছিল এই রুটির আবিষ্কার ও তার প্রচলন।
রুটি আবিষ্কারের ইতিহাস:- দীর্ঘ তথ্য ঘেঁটে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে আজ থেকে প্রায় ৬০০০ বছর পূর্বে অর্থাৎ ৮০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে যিশুখ্রিস্টের জন্মের আগে রুটির আবিষ্কার শুরু করেছিলেন মিশরীয়রা। যদিও বর্তমান যুগের মতো নব্য প্রস্তর যুগে সমাজ এত উন্নত না থাকায় মোটা শস্য দানা জলের সাথে মিশিয়ে ঠেস দিয়ে সেই শস্য দিয়ে প্রথমে তাল তৈরি করা হতো। তারপর গরম পাথরের উপর তাল রেখে সেই তালে উত্তপ্ত ছাই দিয়ে তা সেঁকা হতো। এইভাবেই প্রথম রুটি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল মিশর বাসিরা।
পরবর্তীকালে, সমাজ অল্প উন্নত হতে এবং খাদ্যের যোগান রাখতে আনুমানিক ২৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দুকুশ উপত্যকায় শস্যের চাষাবাদ শুরু করেন তারা। ১০০০ খ্রীস্টপূর্বাব্দে ইস্ট মিশ্রিত রুটি রোমে বেশ জনপ্রিয় ছিল। তবে ৪৫০ খ্রীস্টপূর্বব্দে গ্রীসে ওয়াটার মিল আবিষ্কৃত হয়। বেকিং রুটির কলাকৌশল প্রথম গ্রীসেই আবিষ্কৃত হয়।
নব্য প্রস্তর যুগ থেকে রুটির আবিষ্কার শুরু হওয়ায় এটি আজও মানুষের খাদ্য তালিকায় উপস্থিত রয়েছে। যেহেতু আগে মানুষের শিক্ষা না থাকায় এবং উন্নত মানের খাদ্য তৈরির জ্ঞানের অভাবে বহু অনুন্নত খাদ্য আহার করে থাকতেন সেই যুগের মানুষেরা। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে যুগের পরিবর্তন ঘটায় এখন শুধুমাত্র পূর্বে তৈরি রুটি নয়, গমের মাধ্যমে নানা ধরনের খাতা তৈরি করতে শিখে গেছেন বর্তমান যুগের মানুষেরা। নানা দেশে বিভিন্ন স্বাদের বিভিন্ন আকারের রুটি বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে শুধুমাত্র রুটি নয় চাপাটি সহ বাকরখানি, লুচি, পরোটা, নান ইত্যাদি বহু পদ্ধতিতে তৈরি রুটি বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ গুলতে খুবই জনপ্রিয় এক খাদ্য। তবে এই সকল জনপ্রিয় রুটির তালিকার মধ্যে বেশ কয়েকটি দেশের নাম উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
I) তালিকার প্রথমেই রয়েছে ইংল্যান্ড। মধ্যযুগ থেকে বর্তমান যুগের মধ্যে ইংল্যান্ডের রুটির প্রচলনে দেখা দিয়েছে বিস্তর তফাৎ। পূর্বে অর্থাৎ মধ্যযুগে ওই দেশে প্রচলন ছিল ব্রেকিং রুটির। কিন্তু বর্তমানে ব্রেকিং রুটির জায়গা দখল করে নিয়েছে ইংলিশ ম্যাফিনস এবং ক্রামপেট। যদিও ময়দা দিয়ে তৈরি করা এই দুই প্রকারের রুটি দীর্ঘদিন যাবত দেশের ঐতিহ্য বহন করে আসছে। যদিও ঐতিহ্য বহন করার মতোই স্বাদে ও সৌন্দর্যে অতুলনীয় এই রুটি। কারণ – ক্রামপেট তৈরিতে ইস্টের পরিবর্তে বেড বেকিং সোডার ব্যবহার করা হয়ে থাকে, এই রুটি জ্যাম বা মাখন দিয়ে খাওয়া যায় ।তবে ইংলিশ মাফিন সাধারণত ডিম, পনিরের সাথে খাওয়া হয়।
II) এরপরই রুটির জনপ্রিয়তায় তালিকার দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে ফ্রান্স। এই দেশের জনপ্রিয় রুটির নাম হল বাগুয়েত। এই রুটির স্বাদ গোটা পৃথিবীর জুড়ে জনপ্রিয়।
III) সচরাচর গম দিয়ে রুটি তৈরি হলেও জার্মানিতে মূলত রাই বা যব দিয়ে তৈরি করা হয় পৃথিবী বিখ্যাত কালো রঙের রুটি পামপারনিকেল।
IV) অন্যদিকে ব্রাজিলের মাটিতে তৈরি হওয়া একপ্রকার কন্দ কাসাভাকে কেন্দ্র করে সেই সেই দেশে তৈরি হয় রুটি এবং কেক। কন্দ দিয়ে তৈরি হওয়ার রুটি পছন্দ করেন ওই দেশের মানুষেরা।
V) আমেরিকার দক্ষিণে গমের বদলে ভুট্টা দিয়ে তৈরি হয় রুটি। ওই দেশের সিংহভাগ মানুষই সকালের প্রাতঃরাশে গরম রুটি খাওয়া পছন্দ করেন। ভুট্টা দিয়ে তৈরি এই রুটি গুলোর কোনোটির নাম বাকহুইট তো কোনোটি হোমিনি ও জনি কেক।
VI) প্রত্যেকটি দেশের মধ্যে ভিন্ন স্বাদের রুটি পাওয়া যায় ইতালিতে। ময়দা, লবন, জলপাই তেলের সাথে পিয়াজ মিশ্রিত করে উচ্চতাপমাত্রায় তৈরি করা হয় ওই দেশের জনপ্রিয় রুটি ফোকাক্সিয়া। এই রুটি যেমন কোন তরকারির সঙ্গে এমনি খাওয়া যায় ঠিক সেরকমই পিজ্জা কিংবা স্যান্ডউইচ তৈরিতে ব্যবহার করে থাকেন তারা।।
VII) এরপরই তালিকায় রয়েছে পোল্যান্ড। ওই দেশের জনপ্রিয় রুটি হল বাগেলস। দেশের মানুষের মধ্যে এই রুটির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে।
VIII) উল্লেখ্য দেশগুলি ছাড়াও এমন বহু দেশ রয়েছে যেখানে নানান নামে আকৃতিতে ও স্বাদে রুটের প্রচলন হয়ে থাকে। তাদের মধ্যে ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ার আরমেনিয়া পাতলা, আরিপা, সাদা ছেঁকা রুটি লাভাশ, ইসরায়েলের চাল্লার রুটির জনপ্রিয়তা পৃথিবীজুড়ে।