ভারত-চীন-রাশিয়া এক হলে কতোটা বিপদ আমেরিকার?
ভারত এবং চীনের মধ্যে বৈরিতা কমাতে রাশিয়া মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। তবে বিষয়টি অসম্ভব নয়। বিশ্ব রাজনীতিতে নিজেদের স্বার্থে সবই সম্ভব। কাজেই ভারত এবং চীন নিজেদের বৈরিতা কমাতে যদি রাশিয়াকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বেছে নেয় তাহলে বিষয়টি অস্বাভাবিক হবে না।
ভারত-চীন বৈরিতা কমাতে ভারত যতটা আগ্রহী চীন ততটা নয়। চীনের ভবিষ্যত পরিকল্পনা বিশ্ব রাজনীতির মাথা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে। অর্থনৈতিক ভাবে তারা অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে গেছে। তাদের পরবর্তী লক্ষ্য সামরিকভাবে নিজেকে শক্তিশালী করে নিজের অবস্থান আরো সুসংহত করার। সামরিক দিক দিয়ে এশিয়ায় চীনের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত। এক্ষেত্রে জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার নামও উঠে আসে। কিন্তু জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর আকার চীনের সমান তো দূরের কথা তিন ভাগের এক ভাগও নয়। তাই চীন সবসময় সামরিকভাবে ভারতকে কাবু করে রাখতে চায়। এক্ষেত্রে, ভারতের অভ্যন্তরে বিদ্রোহীদের অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে এবং ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে সম্পর্ক উষ্ণ করে ভারতকে চাপে রাখতে চেয়েছে।
অন্য দিকে ভারতের সামরিক বাহিনী আকারে বড় হলেও অর্থনীতি চীনের মতো ততটা শক্তিশালী অবস্থানে এখনো পৌঁছায়নি। যেমন চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মতো বড় প্রজেক্ট হাতে নেওয়ার সক্ষমতা ভারত এখনো অর্জন করেনি। তার উপর ভারতের সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন হচ্ছে ধীরগতিতে। ভারত এখনও সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নে আমদানি নির্ভর। যদিও ভারত এখন এই নীতি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। নিজেদের তৈরি অর্জুন ট্যাংক, তেজস এর মত বিমান বানিয়ে নিজেদের সামরিক শিল্পকে উন্নত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই গতি চীনের গতির তুলনায় অনেক কম।
কারণ একসময়ের অস্ত্র আমদানিকারক চীন এখন বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ। ভারত সর্বদাই মনে করত সামরিকভাবে পাকিস্তান তাদের প্রতিপক্ষ। কিন্তু গালওয়ান সংঘর্ষের পর ভারত বুঝতে পেরেছে ভবিষ্যতে ভারতের সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বি হচ্ছে চীন। এতদিন চীনের প্রতি ভারতের সামরিক কৌশল ছিল রক্ষনাত্মক। কিন্তু এখন সেটা বদলাতে শুরু করেছে। ভারত নিজের সেনাবাহিনীকে এমনভাবে গড়ে তুলছে যেন সীমিত পরিসরের যুদ্ধে চীনকে শুধুমাত্র ঠেকানোর পাশাপাশি তাদের উপর প্রাধান্য স্থাপন করতে পারে।
তবে সত্য এটাই চীন ভারতের সাথে সমঝোতা করে এশিয়ায় নিজের শক্তি খর্ব করৈ দিতে চাইবে না। কারণ এশিয়ায় চীনের একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা না হলে বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করার যে স্বপ্ন চীনের রয়েছে তা চিরকালের মতো অপূর্ণ থেকে যাবে। তাই চীন ভারতের সাথে সমঝোতা করতে চাইবে না। আর তৃতীয় শক্তির(রাশিয়া) মাধ্যমে তো নয়ই।
তবে কখনো যদি রাশিয়ার মধ্যস্থতায় ভারত এবং চীনের মধ্যে বৈরিতা কমে যায় এবং ভারত- চীন-রাশিয়া মিলে একটি সামরিক এবং অর্থনৈতিক জোট গঠন করে তবে সেটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সুফল হবে না। তখন সেটা হবে মার্কিন সাম্রাজের শেষের শুরু।