অফবিট

ফ্রান্স এবং ভারতবর্ষের মধ্যে সম্পর্ক এতো ভাল হওয়ার পেছনে কি কারন রয়েছে?

রাজেশ রায়:- আজ আমরা আলোচনা করব ভারত ও ফ্রান্সের পারস্পরিক সম্পর্কের ব্যাপারে। আর এটাও জানব ফ্রান্স কী ধীরে ধীরে রাশিয়ার জায়গা নিচ্ছে। ফ্রান্স ও ভারতের সম্পর্ক অনেক পুরোনো, আগে স্থলপথেই যোগাযোগ ছিল দুই দেশের কিন্তু ধীরে ধীরে ইসলামের উদয় হওয়া এবং অটোমান সাম্রাজ্যোর  প্রতিষ্ঠার ফলে ফ্রান্স ও ভারতের মধ্যে জলপথেই যোগাযোগ থাকে। ভারতের রাজস্থান রাজ্যের মত আয়তনের ফ্রান্স ১৬৬৪ সালে প্রথম ভারতে আসে। ভারতে সর্বপ্রথম আসে ভাস্কো ডা গামা ও পর্তুগাল, এরপর ফ্রান্স, ব্রিটেন, নেদারল্যান্ডস ও ডেনমার্ক। এই সময় ক্ষমতার আধিপত্যের জন্য ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে রেষারেষি ছিল, তবে শেষ পর্যন্ত ব্রিটেন জয়ী হয় কারন ব্রিটিশ নেভি সেইসময় বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ছিল। আবার নেপোলিয়ানের উত্থানের সময় ফ্রান্স শক্তিশালী হয় কিন্তু ১৮২৩ আসতে আসতে নেপোলিয়ানের পরাজয়ের পর ফ্রান্স আবার একটু দুর্বল হয়ে যায়। আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ, সাত বছরের যুদ্ধ অনেক যুদ্ধ হয় ফ্রান্স ও ব্রিটেনের মধ্যে। ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তার নিয়েও লড়াই হয় ফ্রান্স ও ব্রিটেনের। ভারতে সরাসরি ফ্রান্স যুদ্ধ করেনি। ভারতের বাংলা ভূমি ও মুম্বাইয়ে নিয়ন্ত্রন রাখে ব্রিটিশরা কিন্তু দক্ষিণ ভারতে নিয়ন্ত্রণ থাকে ফ্রান্সের। মহীশূরে হায়দার আলির ছেলে টিপু সুলতান ক্ষমতায় থাকা কালীন চারবার অ্যাংলো-মহীশূর যুদ্ধ হয় যাতে টিপু সুলতানকে ব্রিটিশদের পূর্ণ সমর্থন করে ফ্রান্স। তবে ১৭৯৯ সালে মাদ্রাজ চুক্তির মাধ্যমে মাদ্রাজ ব্রিটিশদের অধীনে আসে, এই ভাবে গোটা ভারতে ব্রিটিশ রাজ প্রতিষ্ঠিত হয়।

ফ্রান্সের নিয়ন্ত্রনে থাকে শুধু পন্ডিচেরি এলাকা। যদি একটু ইতিহাসে পেছেনো যায় দেখা যাবে ১৬২৫ সালে ফ্রান্সের ফিজিসিয়ান ফ্রাঙ্কওয়েজ বার্নিয়ার ভারতে আসে। ফ্রাঙ্কওয়েজ বার্নিয়ার মুঘল সম্রাট ঔরাঙ্গজেবের ব্যাক্তিগত ডাক্তার ছিলেন বারো বছর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হয়। এই সময় ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে চুক্তি হয় ১৯৫৬ সালের মে মাসে, চুক্তি অনুযায়ী পন্ডিচেরী সহ ভারতের সমস্ত জায়গা ফিরিয়ে দেয় ফ্রান্স। ১৯৬২ সালে ফ্রান্সের সংসদে এই চুক্তিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ১৯৬৩ সালে পন্ডিচেরীকে কেন্দ্রশাসিত প্রদেশ বলে ঘোষনা করা হয়। ভারতে থাকা সমস্ত বিদেশী শক্তিদের মধ্যে ফ্রান্সই সবার লাস্টে যায়। ১৯৬১ সালে পর্তুগাল যায়, তবে পর্তুগালকে জোর করে তাড়ানো হয় কারন পর্তুগাল মনে করত গোয়া তাদের। সেজন্য ভারতীয় সেনাবাহিনী গিয়ে মাত্র এক দিনেই গোয়া পুনরুদ্ধার করে। ফ্রান্স ও ভারতের রাষ্ট্রনেতারা অনেকবারই উভয় দেশে সফরে গেছে। ১৯৯৮ এ ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি জ্যাক চিরাখ ভারত সফরে আসেন। আসলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক তখন বেশী বৃদ্ধি পায় যখন উভয় দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বারবার সফরে আসেন। ২০০৮ সাল থেকে ভারত ও ফ্রান্সের সম্পর্ক সবচেয়ে মজবুত হয়। ২০০৮ সালে তৎকালীন ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি নিকোলাস সারকোজি ভারতে আসেন প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি হিসাবে, ওই বছর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং আবার ফ্রান্স সফরে যান। ২০০৯ সালে আবারও মনমোহন সিং ফ্রান্সে যান বাস্তিল ডে উদযাপনের জন্য। বাস্তিল ডে মিলিটারি প্যারেডে ভারতীয় নেভি,এয়ারফোর্স ও সেনাবাহিনী অংশ নেয়। ২০১০ সালে নিকোলাস সারকোজি ভারত সফরে আসেন। ২০১৩ সালে ফ্রাঙ্কওয়িজ হল্যান্ড ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন ভারতে আসেন। ২০১৫ সালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী  নরেন্দ্র মোদী ফ্রান্সে যান। ২০১৬ সালে ফ্রাঙ্কওয়িজ হল্যান্ড তার পুরো ডেলিগেশন নিয়ে ভারতে আসেন। ২০১৬ এর ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি ছিলেন ফ্রাঙ্কওয়িজ হল্যান্ড। ফ্রান্সের ১২৪ সেনা প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে অংশ নেয়। ফ্রান্স একমাত্র দেশ যাদের ভারত জাতীয় বিভিন্ন উদযাপনে পাঁচবার ডেকেছে। ২০১৮ সালে ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোন ভারত সফরে আসেন।

ফ্রান্স ভারতের গুরুত্বপূর্ণ স্ট্রাটেজিক পার্টনার। প্রতিরক্ষা থেকে শুরু করে সায়েন্স, টেকনোলজি ফিল্ডে ফ্রান্স ভারতকে যথেষ্ট সাহায্য করে। ভারতের যত স্ট্রাটেজিক পার্টনার আছে সেই ব্যাপরে একটি সমীক্ষা করা হয়েছিল যাতে মোট ৯০ পয়েন্ট ছিল। সমীক্ষার রেজাল্টে দেখা গেছে ৬২ পয়েন্ট পেয়ে রাশিয়া সবার উপরে রয়েছে, এরপর দ্বিতীয় স্থানে আছে আমেরিকা ৫৮ পয়েন্ট, তৃতীয় স্থানে ফ্রান্স ৫১ পয়েন্ট তারপর ব্রিটেন ৪১ পয়েন্ট, জার্মানি ৩৭ ও জাপান ৩৪ পয়েন্ট পেয়েছে। ভারতকে জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্য পদ করার ক্ষেত্রেও ভারতের পক্ষে ভোট দেয় ফ্রান্স, এমনকী নিউক্লিয়ার সাপ্লাই গ্রুপে ভারতের অন্তর্ভুক্তি থেকে শুরু করে ১৯৯৮ এ পোখরানে পরমানু পরীক্ষাতেও ফ্রান্স ভারতকে সহায়তা করে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধেও ফ্রান্স ভারতকে সহায়তা করে। ইন্দো প্যাসিফিক এলাকায় ফ্রান্স ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পার্টনার। ভারত মহাসাগর, প্রশান্ত মহাসাগর, আটলান্টিক মহাসাগর তিন জায়গায়ই ফ্রান্সের বেস আছে। যদি ভারত মহাসাগরের কথা বলা হয় তাহলে মায়োটি দ্বীপ, রিইউনিয়ন দ্বীপ, গ্লোরিয়াস দ্বীপ, ট্রোমিলিন, জুয়ান ডে নোভা, ইউরোপা দ্বীপ ও ব্যাসা ডা ইন্ডিয়া অটলে ফ্রান্সের বেস আছে। ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে আলোচনা চলছে রিইউনিয়ন দ্বীপে ভারতীয় মিলিটারি বেস তৈরির ব্যাপারে। প্রশান্ত মহাসাগরে ১০০ এর বেশী ছোট ছোট দ্বীপ ফ্রান্সের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে যাদের ফ্রেঞ্চ পলিনেসিয়া বলা হয়, এছাড়াও সোশাইটি দ্বীপ, উইন্ডওয়ার্ড, অস্ট্রাল দ্বীপ সহ আরও বেশ কীছু দ্বীপ ফ্রান্সের অধীনে আছে। তাহলে বুঝতেই পারছেন ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকায় ফ্রান্সের উপস্থিতি কতটা মজবুত। এই অঞ্চলে ফ্রান্সের প্রায় ৮০০০ সেনা রয়েছে। ২০১৮ সালে ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে লজিস্টিক চুক্তি হয় যাতে ফ্রান্সের মিলিটারি বেসে ভারতকে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়।

২০১৮ সালের ৩ মে ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল ম্যাক্রোন প্রথমবার ইন্দো-প্যাসিফিককে তাদের বিদেশনীতি তে অন্তর্ভুক্ত করেন। যা নিয়ে সমালোচনা করেছিল চীন। ফ্রান্সই প্রথম কোন ইউরোপীয়ান দেশ যারা ইন্দো প্যাসিফিক নিয়ে কোন স্ট্রাটেজি তৈরি করে। ফ্রান্স তো এককদম এগিয়ে শুধু ইন্দো প্যাসিফিক এলাকার জন্য বিশেষ রাষ্ট্রদূত ও নিয়োগ করে। ফ্রান্সের পাশাপাশি ব্রিটেন, জার্মানিও এখানে আসে। অলরেডি ভারত, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও জামানের যৌথ জোট কোয়াড রয়েইছে এই এলাকায়। রিইউনিয়ন দ্বীপে ভারত ও ফ্রান্স যৌথভাবে কোঅরডিনেট পেট্রোলিং করে। এটা খুবই তাতপর্যপূর্ন কারন ভারত এধরনের পেট্রোলিং শুধুমাত্র  প্রতিবেশী দেশ গুলোর সাথে করে। ফ্রান্স ভারতের কোন প্রতিবেশী দেশ না তা সত্বেও ভারতের এই পদক্ষেপ প্রমান করে ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে সম্পর্ক কতটা গভীর। ভারত ও ফ্রান্সের বায়ুসেনার মধ্যে গরুডা এক্সারসাইজ, নৌবাহিনীর মধ্যে বরুনা এক্সারসাইজ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে এক্সারসাইজ শক্তি নিয়মিত হয়। ভারত ফ্রান্সের থেকে বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কেনে। ভারতীয় নৌবাহিনী ফ্রান্সের ডিসিএনএস কোম্পানি থেকে ছয়টি স্করপিয়ন ক্লাস সাবমেরিন কেনে যেগুলো মুম্বাইয়ের মাইজগাঁও ডকে টেকনোলজি ট্রান্সফারের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে। আইএনএস কালভেরী, খান্ডেরী, করনৌজ, ভেলা, ভাগির ও ভাগশির নামে এই ছয়টি স্করপিয়ান ক্লাস সাবমেরিন ভারতীয় নৌবাহিনীতে যুক্ত হতে চলেছে। এইসব নাম করন করা হয়েছে ভারত মহাসাগরে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির হাঙরের নামের উপর।

ভবিষ্যতে ভারতীয় নেভির আরও একটি সাবমেরিন প্রজেক্ট, পি-৭৫ আই যাতো আরও ছয়টি পরবর্তী প্রজন্মের সাবমেরিন কেনা হবে, এটিও ফ্রান্সের থেকে নেওয়ার সম্ভবনাই সবচেয়ে বেশী, যাতে প্রায় ৫.৬ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে। তাছাড়া ভারতীয় নৌবাহিনীর ছয়টি নিউক্লিয়ার পাওয়ার এসএসএন সাবমেরিন প্রজেক্টও ফ্রান্স সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে। সম্ভবত ফ্রান্সের বারকুডা ক্লাস সাবমেরিনের উপর বেসস করে এগুলো তৈরি হবে। ভারতীয় বায়ুসেনার জন্য ফ্রান্সের ড্যাসল্ট অ্যাভিয়েশন থেকে ভারত ৩৬ টি রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনে, ভবিষ্যতে আরও রাফায়েল কেনা হবে। ভারতের গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধবিমান মিরাজ-২০০ ও ফ্রান্স থেকেই কেনা। এই মিরাজ-২০০০ পাকিস্তানের বালকোটে এয়ারস্ট্রাইক করেছিল। ভারতের হেলিকপ্টার, নিজস্ব যুদ্ধবিমান প্রজেক্টেও ফ্রান্স সহায়তা করে ভারতকে। সম্প্রতি ভারতের ডিআরডিও ও ফ্রান্সের স্যাফরনের মধ্যে চুক্তি হয়েছে যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরির ব্যাপারে। সুইডেনের স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের তথ্য অনুযায়ী ২০১০ থেকে ২০১৪ এর মধ্যে ফ্রান্স ভারতের অষ্টম বৃহত্তম অস্ত্র সাপ্লায়ার ছিল, সেসময় মোটামুটি ২০০ মিলিয়ন ডলারের মতন অস্ত্র কেনা হত ফ্রান্স থেকে। কিন্তু ২০১৪ থেকে ২০১৯ এ ফ্রান্স তিন নম্বরে উঠে আসে, এই সময় বছরে গড়ে ১.৬ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কেনা হয় ফ্রান্স থেকে। ফ্রান্স আফ্রিকায় তাদের গুরুত্বপূর্ণ মিলিটারি বেস জীবুতিতে ভারতকে প্রবেশাধিকার দিয়েছে। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে ফ্রান্স ভারতের গুরুত্বপূর্ণ স্ট্রাটেজিক পার্টনার। 

ফ্রান্স ভারতে নবম বৃহত্তম বিদেশী বিনিয়োগকারী দেশ। প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে ফ্রান্স যার মধ্যে কেমিক্যাল, ইলেকট্রনিক, সিমেন্ট উল্লেখযোগ্য। ২০১১ এর তথ্য অনুযায়ী ভারতও ফ্রান্সের ১৩ বৃহত্তম বিদেশী বিনিয়োগকারী। শিক্ষাখাতেও ফ্রান্স ভারতকে সহায়তা করে। পন্ডিচেরীতে ফ্রেঞ্চ ইন্সটিটিউট রয়েছে। প্রতিবছর ভারত থেকে প্রায় ৪০০০ স্টুডেন্ট ফ্রান্সে যায় উচ্চ শিক্ষার জন্য যাদের পূর্ণ স্কলারশিপ দেয় ফ্রান্স। তবে ফ্রান্স থেকেও স্কলারশিপে ভারতে অনেকে পড়তে আসে। প্রায় এক লক্ষ ফ্রেঞ্চ নাগরিক ভারতে থাকে, অন্যদিকে প্রায় ৩০,০০০ ভারতীয় ফ্রান্সে থাকে। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হবার পর প্রায় চারবার ফ্রান্স সফরে গেছেন যা একটা রেকর্ড। ভারত ও ফ্রান্সের ট্রেড প্রায় ১০.৭ বিলিয়ন ইউরো। ১০০০ এর বেশী ফ্রান্সের কোম্পানি ভারতে রয়েছে বর্তমানে এবং ১২০ টির মতন ভারতীয় কোম্পানি ফ্রান্সে আছে। সত্যি কথা বলতে কী এই মহূর্তে ফ্রান্স রাশিয়ার থেকে ভারতের ভাল বন্ধু। রাশিয়ার সাথে আমাদের সম্পর্ক কোনওদিন খারাপ হবে না ঠিকই কিন্তু জিও পলিটিক্যালি রাশিয়া একটু পিছিয়ে পড়েছে ফ্রান্সের তুলনায়। রাশিয়া চীনেরও ভাল বন্ধু সেজন্য ফ্রান্স ধীরে ধীরে হলেও রাশিয়াকে রিপ্লেস করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *