পৃথিবীর কোথায় মৎস্য শিকারিদের উলঙ্গ করে অত্যাচার করা হয়?
নিজস্ব সংবাদদাতা: কিছু ভয়ানক সত্যি গল্পের মত হয়।এই কাহিনীটি ও ঠিক সেরকম।ঘটনাটি থাইল্যান্ডের। রেতচাপাকসির বর্তমানে বয়স চল্লিশ বছর,তিনি থাকেন থাইল্যান্ডের মধ্যাঞ্চলীয় ফেটচাবুরি প্রদেশে।২০১৩ সালে চাইরেত রেতচাপাকসি চাকরি খুঁজতে খুঁজতে থাইল্যান্ডের একটি মৎস্য শিকারি কোম্পানিতে চাকরি নেন।তার পরিকল্পনা ছিল এই চাকরির মাধ্যমেই পরিবারের ভরণপোষণ চালানো। একদিন তিনি পার্শ্ববর্তী প্রদেশ সামট সং ক্রমে কাজের সন্ধানে যান। সেখানে একটি নৌকায় জেলে হিসেবে চাকরি পান। তারপর যা ঘটে তা রোমহর্ষক।সেখানে বন্দী হয়ে যান তিনি।সেখানকার স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া সঙ্গে রয়েছে মশার কামড়ও।এরকমই অসুস্থ পরিবেশের মধ্যেই বছরের পর বছর কাটিয়ে দিয়েছেন তিনি।তার সঙ্গে ছিলেন তার মতই আরো কিছু জেলে।তাদের জীবনের অর্ধেকের বেশি সময়ই কেটে গেছে মাছের ট্রলারে।মাঝ দরিয়ায় তরী ডুবে গেলেও দেখার মতো ছিল না কেউ। অতল গভীর সমুদ্রে নিশ্চুপে এভাবেই ডুবে গেছে কতো প্রাণ।
রেতচাপাকসি বর্তমানে ‘থাই অ্যান্ড মাইগ্রেন্ট ফিশার্স ইউনিয়ন গ্রুপ (টিএমএফজি)’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। জেলে জীবনের সেই দুঃসহ স্মৃতি তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমরা সেখান থেকে পালানোর কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। সবাই মিলে ইন্দোনেশিয়ার থাই রাষ্ট্রদূতের কাছে একটি চিঠি লিখেছিলাম। কিন্তু তাদের কাছ থেকে আমরা কোনো জবাব পাইনি। আমাদের মুক্তির ব্যাপারে কারো কোনো তৎপরতাও লক্ষ্য করিনি। একপর্যায়ে আমি খুব চিন্তিত হয়ে পড়ি। তখন ভাবতাম, কে আমাদের মুক্ত করবে? ধীরে ধীরে আমি খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলাম।”২০১৫ সালে স্থানীয় এনজিও এলপিএন জেলেদের সুরক্ষায় একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল।সেসময় তারা টিএমএফজি প্রকল্পের আওতায় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সমুদ্রগামী জাহাজ ও ট্রলারগুলো মনিটরিং করতো এবং সন্দেহভাজন জাহাজ ও নৌকাগুলোকে চিহ্নিত করে রাখতো।কিন্তু সংস্থাটি জানান, নিয়মিত মনিটরিং করা, সেই অনুযায়ী অভিযান চালানো এবং জেলেদের নিরাপত্তা প্রদান বেশ ব্যয়বহুল ও জটিলতাপূর্ণ কাজ হওয়ায় তা তাদের পক্ষে পরিচালনা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল।
থাইল্যান্ডের মৎস বিভাগ থেকে প্রায় ৮২ প্রকারের সি ফুড বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। এলপিএন এর অনুমান অনুযায়ী, ১০,০০০-২০,০০০ ফিশিং বোট এই সি-ফুড সংগ্রহ এবং প্রসেসিংয়ের সঙ্গে রয়েছে।রেতচাপাকসিকে বছর তিনেক আগে সেখানকার বন্দীদশা থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।এলপিএন সংস্থা তার অবস্থান শনাক্ত করার পর সংস্থাটির পরিচালক পাতিমা ও টিএমএফজি প্রকল্পের একদল সদস্যরা সেখানে যৌথ অভিযান চালান এবং রেতচাপাকসিসহ আরও অনেককে জেল থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হন।পাতিমা তার সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, “আমাদের ধারণা ছিল সেখানে ১০০ জনের মতো দাস জেলে বন্দী আছে, কিন্তু সেখানে অভিযান চালিয়ে আমরা দেখতে পাই প্রায় ১,০০০ দাস সেখানে জেলে বন্দী রয়েছে।”