তুলসী দেবীকে কেন অভিশাপ দেওয়া হয়েছিল জানেন?
নিউজ ডেস্ক: হিন্দু শান্ত্র অনুযায়ী তুলসিদেবী হলেন অত্যন্ত পবিত্র একটি দেবী। প্রত্যেক হিন্দু বাড়িতে সকাল সন্ধ্যা মেয়ে-বৌমারা তুলসীমঞ্চে ধুপ প্রদীপ দিয়ে তুলসী দেবীর পূজার্চনা করে থাকে।তিনি ছিলেন বিষ্ণু ভক্ত এবং পুরাণ অনুযায়ী বৃন্দা নামে পরিচিত তুলসী দেবী ছিলেন বৃন্দাবনে রাধা কৃষ্ণের নিত্য সেবিকা। কিন্তু আপনারা কি জানেন যে দেবীকে আমরা পবিত্র বলে মনে করা তাকে এই মর্তলোকে এক অভিশাপের কারনে জন্ম গ্রহন করতে হয়েছিল? এমনকি তাকে কলঙ্কিতও হতে হয়েছিল। কিন্তু কেন এই দেবীকে অভিশপ্ত এবং কলঙ্কিত হতে হয়েছিল?
পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, দেবী তুলসীর ওপর একটি নাম ছিল বৃন্দা।বৃন্দা বৃন্দাবনের রাধা কৃষ্ণের নিত্য সেবিকা ছিলেন।এক দিন গোলক বৃন্দাবনে ক্রীড়ারত অবস্থায় কৃষ্ণের সাথে বৃন্দাকে দেখে ফেলে রাধারানী।এতে তিনি খুবই ক্রধিত হয়ে যান বৃন্দা উপর।এই ক্রোধের বশে রাখা বৃন্দাকে অভিশাপ দেয় যে সে মর্ত্যে মানবী রূপে জন্ম গ্রহণ করবে।বৃন্দা এই অভিশাপ পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে তখন শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন যে, সে মানবী রূপে মর্ত্যে জন্মগ্রহণ করলেও তার তপস্যার দ্বারা সে এই জন্মে তার একটি অংশ প্রাপ্ত হবে।
সেই শাপের কারনে পৃথিবীতে বৃন্দা তুলসী দেবী হয়ে রাজা ধর্মধর্ব্বজ ও মাধবীর কন্যা সন্তান হয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শৈশব কাল থেকে ভগবান বিষ্ণুর পরম ভক্ত ছিলেন।তুলসী দেবী যখন বড় হল তখন নারায়ণকে স্বামী রূপে পাওয়ার জন্য ব্রহ্মার কঠোর তপস্যা করা শুরু করেন। এই কঠোর তপস্যায় প্রসন্ন হয়ে ব্রহ্মা তুলসী দেবীর সামনে অবির্ভূত হন এবং তাকে বর হিসাবে প্রদান করে যে এখন সে কৃষ্ণেরই একটি অংশ সুদামের স্ত্রী হবে এবং পরবর্তীকালে স্বয়ং কৃষ্ণকে পাবেন।
অন্যদিকে রাধিকার অভিশাপে সুদামকে একটি দানব গৃহে জন্ম গ্রহণ করতে হয়েছিল।তার নাম ছিল শঙ্খচূড়। দেবী তুলসি ছিলেন শঙ্খচূড় নামক এক অসুরের স্ত্রী। শঙ্খচূড় তপস্যা করে বর পেয়েছিল যে “ তার স্ত্রীর সতীত্ব নষ্ট হলেই তার মৃত্যু হবে”। কিন্তু তুলসি দেবী ছিলেন এক সতী নারী।তাই শঙ্খচূড় এই বর লাভ করার পর হয়ে উঠে অত্যাচারী।শুরু হয় দেবদেবতাদের উপর তার অত্যাচার।এই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে সমস্ত দেবদেবতারা শরনাপর্ণ হন মহাদেবের কাছে।এরপর মহাদেব সকল দেবগনের সাথে বিষ্ণুদেবের কাছে গিয়ে সমস্ত বিষয় জানান।তখন বিষ্ণুদেব দেবতাদের শঙ্খচূড়ের হাত থেকে দেবতাদের রক্ষা করার জন্য শঙ্খচূড়ের রূপ ধারন করে।এরপর বিষ্ণুদেব শঙ্খচূড়ের রূপ ধারন করে তুলসি দেবীর কাছে যান তাঁর সতীত্ব নষ্ট করার জন্য।কারন তুলসি দেবীর সতীত্বের জন্য মহাদেব শঙ্খচূড়কে পরাজিত করতে পারছিলেন না। তুলসি দেবী ভগবান শঙ্খচূড়ের বেশে থাকা ভগবান বিষ্ণুকে তাঁর স্বামী হিসাবে মনে করে।যার ফলে তাঁর সতীত্ব নষ্ট হয়। আর তখনই শঙ্খচূড়কে বধ করে ভগবান শিব। স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে তুলসী দেবী বুঝতে পারেন যে তার সাথে প্ররোচনা করছে ভগবান।এতে তিনি ভগবান বিষ্ণুর উপর ক্রোধিত হয়ে যান এবং ক্রোধের বসে তাঁকে অভিশাপ দেন তাত্ক্ষণিক পাষাণে পরিণত হয়ে যাওয়ার এবং তার সাথে দেবী তুলসী সিদ্ধান্ত নেন তৎক্ষণাৎ নিজের দেহ ত্যাগ করার।দেবী তুলসীর দেওয়া অভিশাপ গ্রহন করে নেন ভগবান বিষ্ণু।আর এইকারনেই ভগবান বিষ্ণু শালগ্রাম শিলায় পরিণত হয়ে যায়।
নারায়নকে অভিশাপ দেওয়ার পরক্ষণে দেবী তুলসী তার ভুল বুঝতে পারেন যে, তিনি অভিশাপ দিয়েছেন ভগবান বিষ্ণুকে। তখন নারায়ণ দেবী তুলসীকে বর প্রদান করেন যে, সে এই মর্ত্যলোকে এক সতীসাধ্বী দেবীরূপে পূজিতা হবেন এবং নারায়ণ শিলার সর্বদা তুলসীযুক্ত হয়ে থাকবে। নারায়ণের বরেই দেবী তুলসীর শরীর থেকে গন্ডকী নদী উৎপন্ন হয় এবং তার কেশ থেকে উৎপন্ন হবে তুলসীবৃক্ষ।
এই তুলসীবৃক্ষ রূপেই শালগ্রাম শিলার সাথে অর্থাৎ দেবী তুলসীর সাথে ভগবান নারায়ণের বিবাহ হয়েছিল। এইভাবেই দেবী তুলসী তাঁর তপস্যার দ্বারা ভগবান বিষ্ণুকে লাভ করেছিলেন। তবে ভগবান বিষ্ণু লাভ করতে গিয়ে তাকে অভিশপ্ত এবং কলঙ্কিত হতে হয়েছিল।