অফবিট

মানুষের জন্য ১৫৯ প্রজাতির পাখী বিলুপ্ত হতে চলেছে

পাখিরা মূলত স্বাধীন প্রজাতির প্রাণী।  তারা নানা রঙের ডানা মেলে আকাশে উড়ে বেড়ায় কোনো রকম পরোয়া ছাড়াই।  এবং কেউ তাদের থামাতে যায়না ।  মানুষ হিসাবে আমরা সবসময় চেয়েছিলাম,এ রকম  একটি জীবন।  পাখিরা এই পৃথিবীতে বসবাসকারী সবচেয়ে সুন্দর প্রাণীদের মধ্যে একটি।  উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত বিস্তৃত স্থানে পাখিদের দেখা মেলে।  এখনও পর্যন্ত বিশ্বে ১১,০০০ প্রজাতির পাখি পাওয়া গেছে। কিন্তু বর্তমানে এই প্রজাতি গুলি খুবই বিপদের মধ্যে আছে।  অন্তত ১৫৯ প্রজাতির পাখি  আমাদের ভয়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা,বাসস্থানের অভাব, গাছ কাটা, পাখি পাচার এবং অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তন প্রভৃতি  কারন এই ব্যপারে দুর্দান্ত ভূমিকা পালন করছে।  এখন প্রায় ১৫০০ প্রজাতির পাখি বিপদের মধ্যে আছে।  বিশ্বজুড়ে বহু পাখি বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।  এই ভাবে  বিলুপ্তিকরণ চললে  একদিন  কোনো পাখি জীবিত  থাকবেনা। পাখি মজুদ এবং সংরক্ষণ কর্মসূচি এই বিলুপ্তির হাত থেকে এই প্রাণীকে সংরক্ষণ করে চলেছে । 

প্রবন্ধটিতে আমরা আলোচনা করব এমন দশটি পাখি নিয়ে যারা অদূর ভবিষ্যতে বিলুপ্ত  হতে পারে। 

কিউই:  নিউজিল্যান্ডের ন্যাশনাল আইকন,কিউই পাখি এখন বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। নিউজিল্যান্ডে  পাঁচ স্বীকৃত প্রজাতির কিউই পাখি আছে  যার মধ্যে একটি প্রজাতি খুবই বিপদের মধ্যে রয়েছে এবং অন্যান্য চার প্রজাতিকে বিপদ প্রবন হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হযেছে। কিউই পাখির ডানা খুবই ছোটো। বর্তমানে তাদের আবাস অধিকাংশ ধ্বংস করা হয়েছে। এবং তারা বিড়াল, কুকুর, ফেরেট , মানুষ, গবাদি পশু , গাড়ি প্রভৃতির শিকারে পরিণত হযেছে। কিন্তু এই পাখি অত্যন্ত অভিযোজিত হয়। নিউজিল্যান্ড সরকারের গৃহীত বিভিন্ন প্রোগ্রাম, এই বিপন্ন প্রজাতির সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়াচ্ছে ।এখন ১৬০০ পৃথক পাখি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এই সংখ্যা যথেষ্ট নয়। এই প্রজাতি দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন এবং অরণ্য উচ্ছেদের কারণে।

ক্যালিফোর্নিয়া কনডোর: ক্যালিফোর্নিয়া কনডোর, হল উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে বড়ো পাখি যাদের তিন মিটার মাপের একটি বড়ো ডানা থাকে  ।এর  অস্তিত্ব খুবই বিপন্ন হয়ে আসছে । এই প্রজাতির পাখি ৬০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। ১৯৮৭  সালে পাখিগুলি বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং কেবল ২২টি পাখি থেকে যায়।  শিকার এবং আবাসস্থল হ্রাস তাদের বিলুপ্তির প্রধান কারণ ছিল।  তবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কর্মসূচিগুলি এই পাখির সংখ্যা বৃদ্ধিতে দুর্দান্ত প্রভাব ফেলেছিল।  এখন সংখ্যাটি বেড়েছে ৪০০ তে।  কিন্তু তারা এখনও বিপন্ন।  আবার আবাসের ক্ষতি হলে  এদের সংখ্যাও পুনরায় হ্রাস পেতে পারে।

কাকাপো: আউল প্যারট  নামেও এই কাকাপো পাখি পরিচিত । কাকাপো হ’ল একটি বৃহত প্রজাতির পাখি। এরা স্থলে বসবাস করে  এবং এরা  নিউজিল্যান্ডের স্থানীয় পাখি । এটি বিশ্বের সবচেয়ে ভারী এবং উড়ন্ত তোতা যার অস্তিত্ব  এখন গভীর ভাবে বিপন্ন।  কাকাপো  রাতে সক্রিয় হয়ে ওঠে, এরা তোতা পরিবারে একমাত্র নিশাচর পাখি । ১২০ বছর আগে এদের সংরক্ষণের প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল এবং কিছুটা সাফল্য এসেছিল। ২০১৯ সাল ছিল এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল প্রজননের মরসুম।  এখন কেবল ১৯৯ টি কাকাপো  রয়েছে।  যদিও নিউজিল্যান্ড সরকার আরও বেশি সংখ্যা বাড়ানোর আশা করছে, তবে তারা এখনও বিপন্ন প্রজাতি।

নীল থ্রোয়েটেড ম্যাকো: এই নামটি তাদের গলার প্রাণবন্ত নীল রঙ থেকে এসেছে এবং এরা  স্প্যানিশ ভাষায় বার্বা আজুল নামে পরিচিত, যার অর্থ ব্লুবার্ড।  নীল-গলাযুক্ত ম্যাকো  এখন বিলুপ্তির পথে।  এটি একটি গভীরভাবে বিপন্ন প্রজাতি।  অবৈধ ভাবে পোষা প্রাণীর বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, বাসা বাঁধার অভাব এবং অভ্যাস হ্রাস তাদের বিলুপ্তির পিছনের প্রধান কারণ।  কেবল ৪০০ টি পাখি এখন  রয়েছে।  ওয়ার্ল্ড প্যারোট ট্রাস্ট পাখি গুলি  সংরক্ষনের জন্য  কাজ করছে।

বেঙ্গল ফ্লোরিকান: বেঙ্গল ফ্লোরিকান, ভিয়েতনাম এবং ভারতীয় উপমহাদেশের  অত্যন্ত বিপন্ন একটি প্রাণী যে আইইউসিএন লাল তালিকায় প্রদর্শিত হয়।  তার আবাস ক্রমাগত চোরাশিকার, কৃষি জন্য জমি হস্তান্তর , শুষ্ক মরসুমের চাল উৎপাদনের জন্য বিপন্ন হচ্ছে ।এখন সেখানে কম করে ১০০০ পাখি জীবিত।  জৈবিক ও শারীরিক পরিবেশ ব্যবস্থাপনার  উদ্দেশ্য সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উপাদান, সঠিক ল্যান্ডস্কেপ ইকোলজি প্রয়োজন  এই বেঙ্গল ফ্লোরিকান  এবং তাদের আবাসস্থল সংরক্ষণ করার জন্য ।

নর্দান বাল্ড আইবিস: নর্দান বাল্ড আইবিস হল একটি পরিযায়ী পাখি যা প্রধানত পাথুরে বা আধা-মরুভূমিতে পাওয়া যায়।  একসময় উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ ও মধ্য ইউরোপ জুড়ে বিস্তৃত এই পাখিটি এখন আইইউসিএন-এর বিপন্ন প্রজাতির লাল তালিকায় রয়েছে।  তাদের অস্তিত্বের প্রধান সংকট  হল শিকারের অনুশীলন এবং তাদের আবাসস্থলে কীটনাশক প্রয়োগ   যার ফলে আবাসস্থল নষ্ট হয়।  এখন ১০০০ টিরও কম পাখি জীবিত আছে।  সংরক্ষণ প্রক্রিয়া ১৯৭০ সালে শুরু হয়েছিল এবং এখনও চলছে।

দি ফিলিপাইন ঈগল: বানর-খাদক  নামে পরিচিত, এই পাখি বিশ্বের বৃহত্তম ঈগল ।  এই প্রজাতি  এখন গভীর সংকটের মুখে । শুধু ৪০০ প্রজনন জোড়া অবশিষ্ট আছে ।  তাদের আবাসস্থল চোরাশিকার, পুরাতন বন ক্ষতি, এবং দূষণ প্রভৃতি কারনে ক্ষতির মুখে ।  এক দশকের বেশী  ফিলিপাইন  ঈগল ফাউন্ডেশন সফলভাবে এদের সংরক্ষনের কাজ করছে  । কিন্তু তারা এখনও  বিপন্ন প্রজাতি।

স্পূন বিলড  স্যান্ডপাইপার: স্পূন বিলড  স্যান্ডপাইপার হল একটি অনন্য পাখি যার  ঠোটের আকার চামচের মতো ।  এই প্রজাতির বিস্তৃত পরিসীমা রয়েছে ।  রাশিয়ায় প্রজনন, বিভিন্ন অঞ্চলে স্থানান্তরিত এবং ভিয়েতনাম, চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ এবং মায়ানমার এদের  শীতকালীন আবাসস্থল।  এরাও বর্তমানে গভীর বিপদের মুখে।এখন ৭০০ টিরও কম প্রজাতি বাকি রয়েছে।  শীঘ্রই, সংখ্যা আরও হ্রাস পাবে।  দূষণ, বন্যা এবং শুকনো জলাভূমি এদের সংখ্যা হ্রাসের  অন্যতম প্রধান কারণ।

রিজেন্ট হানি ইটার : এই প্রজাতির পাখিদের মাথা ও গলার রঙ  চকচকে কালো এবং বুকের উপরের রঙ হলুদ হয়। রিজেন্ট হানি ইটার একটি অত্যাশ্চর্য পাখি যাদের  অস্ট্রেলিযায় দেখা যায়। কিন্তু এই পাখি এখন তাদের আবাসস্থল ক্ষতি গ্রস্থ  হবার কারনে  বিপন্ন হতে চলেছে ।  প্রায় ৫০০ টি পাখি জীবিত আছে। পুনরুদ্ধার বাহিনী প্রজাতি সংরক্ষণের কাজ করছে। ২০১২ সালে  টোঙ্গা চিড়িয়াখানা  বন্দী- পাখিদের বনের মধ্যে  মুক্তি দিয়েছে। পুনরুদ্ধার বাহিনী তাদের সেরা চেষ্টা করছে যাতে  এই পাখি গুলি বিলুপ্ত না হয়ে যায় তার জন্য। 

গ্রেট কুরাশো : গ্রেট কুরাশো ক্রান্তীয় বনঅঞ্চলের  বৃহৎ পাখি।  বাসস্থানের  ক্ষতি ও অত্যধিক শিকার করার কারনে এই পাখি বিপন্ন হচ্ছে । গ্রেট কুরাশোর  দুই প্রজাতি আছে  । প্রথম প্রজাতি খুবই বিরল ,  মাত্র ৩০০ টি পাখি অবশিষ্ট আছে ।  আরও সাধারণ প্রজাতি পশ্চিম কলম্বিয়া , মধ্য আমেরিকার মাধ্যমে পূর্ব মেক্সিকো থেকে বিতরণ করা হয়।  মক্সিকো তে UMAs এই পাখির  প্রজনন করার কাজ করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *