মৃত মানুষদের দেহ থেকে দাঁত তুলে ফেলা হত। প্রাচীন রোমের অবাক কিছু নিয়ম
বর্তমান দিনের মানুষজন তাদের স্বাস্থ্য নিয়ে যথেষ্ট সচেতনতা অবলম্বন করে থাকে। তবে শুধু বর্তমান সময়ই নয় প্রাচীনকালে মানুষরা স্বাস্থ্য সচেতনার দিকে নজর দিত। যেমন- প্রাচীন রোমানরা। সেই সময়ে রোমের মতো বড় রোমান শহরগুলিতে স্বাস্থ্যবিধি উন্নত করার উদ্দেশ্যে তারা তৈরি করেছিলেন পাবলিক টয়লেট এবং সেই পাবলিক টয়লেটে ছিল জলের প্রবাহের ব্যবস্থাও। আর তাই এই নিয়ে কোন সন্দেহ নেই যে তারা চমৎকার নির্মাতা ছিলেন। যাই হোক, প্রাচীনকালে মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য আরো অনেক পদ্ধতি প্রচলিত ছিল যার মধ্যে এমন কিছু পদ্ধতি ছিল যা অদ্ভুত ও অস্বাস্থ্যকর। যা জানলে আপনারা অবাক হবেন। প্রাচীনকালের মানুষদের কিছু জঘন্য স্বাস্থ্যকর অভ্যাস হল-
১. মুখ ধৌত করতে মানুষের প্রস্রাব:
প্রাচীন রোমানরা মানুষের প্রস্রাব পুরানো হয়ে যাওয়া পর ব্যবহার করত। কারন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রস্রাব অ্যামোনিয়াতে পচে যায়। আর এর মধ্যে থাকে ব্লিচিং বৈশিষ্ট্য। যার ফলে প্রস্রাবের অ্যামোনিয়া দাগ তুলতে এবং রোমানদের হাসিকে আরও সুন্দর করে তুলতে সাহায্য করে। এই কারনে রোমানরা তাদের মুখ ধোয়ার জন্য মানুষের প্রস্রাব ব্যবহার করত। প্রস্রাবের দুর্গন্ধকে তোয়াক্কা না করেই এই পদ্ধতি ব্যবহার করে গেছে রোমানরা।
রোমান সাম্রাজ্যের ধনী ব্যক্তিরা পর্তুগিজদের মূত্র কিনে এনেছিল। ওই সময় সেখানকার লোকেরা মনে করত যে পর্তুগিজদের মূত্রের মান ভালো এবং বেশি ভালো কাজ করে।
২. অপরিচিত মানুষদের ব্যবহার করা বাট ব্রাশ ব্যবহার করা :
সেই সময়ে রোমানরা তৈরি করেছিলেন পাবলিক টয়লেট এবং সেই পাবলিক টয়লেটে ছিল জলের প্রবাহের ব্যবস্থাও। তাই তারা যে চমৎকার নির্মাতা ছিলেন তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। এই পাবলিক টয়লেটগুলি নির্মাণ করার পিছনে মূল লক্ষ্য ছিল রোমের মতো বড় রোমান শহরগুলিতে স্বাস্থ্যবিধি উন্নত করা।
আবার তারা মলত্যাগের পরে মলদ্বার মুছার জন্য ব্যবহার করতো জাইলোস্পনজিয়াম (ল্যাটিন ভাষায় একটি লাঠিতে স্পঞ্জ)।
এই জাইলোস্পনজিয়াম একজন ব্যবহার করার পর সেটিকে একটি ভিনেগার বা লবণ জলে ভরা বালতিতে রেখে দিতো। এরপর ওই একই জাইলোস্পনজিয়াম অন্য ব্যক্তিরাও ব্যবহার করতে পারে।
বলা বাহুল্য যে, রোমানরা কৃমি এবং ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার পিছনে অন্যতম একটি কারন হল এটি।
৩. গর্ভধারণ আটকাতে কুমিরের মূত্রের ব্যবহার:
১৮৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে অর্থাৎ প্রায় ৪ হাজার বছর পূর্বের প্যাপিরাস যা প্রাচীন মিশরীয়দের চিকিৎসা পাঠ্য ছিল সেটি ১৮৮৯ সালে খুঁজে পেয়েছিলেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা কাহুন গাইনোকোলজিকাল। প্যাপিরাসে মধ্যে অন্যান্য জিনিসের পাশাপাশি ছিল কিভাবে গর্ভাবস্থা প্রতিরোধ করা যায় সেই সম্পর্কে তিনটি নির্দেশিকা।
গর্ভাবস্থা প্রতিরোধ করার একটি পদ্ধতি হল প্রাচীন মিশরীয় মহিলারা কুমিরের গোবর নিতে এবং যৌন মিলনের পূর্বে মিশ্রণটি যোনিতে ঢোকানোর নির্দেশ দেয়।
কারন গোবরে মধ্যে থাকে ক্ষারীয় বৈশিষ্ট্য যা শুক্রাণুনাশক হিসাবে কাজ করতে পারে। তবে গর্ভনিরোধ করার এই পদ্ধতিটির পরীক্ষামূলক কোন প্রমাণ নেই, সেই জন্য এটি চেষ্টা করবেন না।
৪. পশুর মল দিয়ে টাক পড়ার সমস্যা দূর করা:
পুরুষদের টাক পড়ার সমস্যা যে এখনকার দিনের সমস্যা তা কিন্তু নয়। বলতে গেলে এই সমস্যা চলে আসছে সৃষ্টির শুরু থেকেই। এই সমস্যা থেকে রেহাই মেলেনি ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান পুরুষদেরও।
উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে, জুলিয়াস সিজারের কথা। তার চুলের অভাব লুকানোর জন্য পুষ্পস্তবক তার মাথায় অর্পণ করেছিলেন।
এছাড়াও ফ্রান্সের লুই চতুর্দশ নিজের টাক লোকানোর জন্য তিনি নিজের একটি ছোট বাহিনী তৈরি করেছিলেন পরচুলা তৈরি করার জন্য।
তখনকার সময়েও টাক পড়ার সমস্যা দূর করার জন্য মানুষেরা ডাক্তার ও ঔষধের শরণাপন্ন হত। ওই সময়কার অর্থাৎ ৪৬০-৩৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ সময়কালের এই সমস্যা দূর করার জন্য এক বিখ্যাত গ্রীক চিকিত্সক হিপোক্রেটিস পরামর্শ দিতেন আফিম, , বিটরুট, হর্সরাডিশ, পায়রার বিষ্ঠা এবং মশলার মিশ্রণ মাথায় মাখার।
দশম শতাব্দীতে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি এবং চেহারা সম্পর্কে খুব সংবেদনশীল ছিল শক্তিশালী ভাইকিং যোদ্ধারা টাক পড়া প্রতিরোধ করার জন্য তাদের মাথায় রাজ হংসের মূত্র ঘষতেন।
এছাড়াও আবার ১৭ শতকে, ইংরেজরা মুরগির মূত্র এবং লাই (সাবান তৈরির উপাদান) এর মিশ্রণ তাদের মাথায় প্রয়োগ করেছিলেন।
৫. নকল দাঁত:
দাঁত পড়ে গেলে তার জায়গায় নকল দাঁত প্রতিস্থাপন করার উপায় খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল আজ থেকে বহু বছর আগে। সেই সময় দাঁতের অভাব পূরণের করার জন্য দাঁতের ডাক্তাররা নকল দাঁত তৈরি করতে ব্যবহার করেছিল হাতির দাঁত, কিংবা পশুপাখির দাঁত।
তবে এর থেকেও অদ্ভুত আরেকটি বিষয় হল যে দাঁতের ডাক্তাররা জানতেন যে নকল দাঁত তৈরির জন্য সেরা দাঁত হল মানুষের দাঁতই। সেই জন্য অনেক সময় ধনী ব্যক্তিরা অর্থ প্রদান করত দরিদ্রদের দাঁত তুলে নেওয়ার জন্য।
উদাহরনস্বরূপ হিসাবে বলা যেতে পারে আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন (১৭৩২-১৭৯৯) এর কথা। কম বয়সেই ওয়াশিংটন এর সবগুলোই দাঁত পড়ে গিয়েছিল। সেই দাঁতের অভাব পূরণ করার জন্য তিনি দাঁত ক্রয় করেছিলেন আফ্রিকান আমেরিকান ক্রীতদাসদের কাছ থেকে।
এমনকি মৃত মানুষদের দেহ থেকে দাঁত তুলে ফেলত যা এই নকল দাঁতের ঘটনায় এক বিভৎস রূপ ধারণ করেছিল।
১৮১৫ সালে ওয়াটারলুতে যুদ্ধের সবচেয়ে কুখ্যাত ঘটনাগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল যে সেই যুদ্ধের পর মেথরকারীরা মৃত সৈন্যদের থেকে সমস্ত কিছু লুট করার পাশাপাশি তাদের দেহ থেকে তুলে নিয়েছিল তাদের দাঁত।
ওয়াটারলু যুদ্ধে মৃত সৈন্যদের থেকে তুলে নেওয়া তাদের দাঁত দিয়ে তৈরি করা নকল দাঁতগুলি। আর এই দাঁতগুলি “ওয়াটারলু দাঁত” নামে পরিচিত হয়েছিল।
উপরোক্ত পদ্ধতিগুলি সম্পর্কে কিছু তথ্য
এই পদ্ধতিগুলি অদ্ভুত ও অস্বাস্থ্যকর হলেও এর মধ্যে এমন কিছু পদ্ধতি ছিল যা সত্যি কাজ করেছিল। যেমন- প্রস্রাবের মধ্যে অ্যামোনিয়া থাকে যা দাঁত সাদা করে। কুমিরের গোবরে ক্ষারীয় বৈশিষ্ট্য থাকার কারনে তা শুক্রাণুকে ধ্বংস করে, যা কমিয়ে দেয় গর্ভধারণের সম্ভাবনা।
এছাড়াও মানুষের দাঁত দিয়ে তৈরি করেছিল নকল দাঁত যা আধুনিক চিকিৎসায় এনেছে বড় পরিবর্তন।
কিন্তু এই অপরের ব্যবহার করা বাট ব্রাশ, পাখির মল মাথায় লাগিয়ে টাকের সমস্যা দূর করা এই পদ্ধতি গুলো ঘৃণ্যই হওয়ার পাশাপাশি ছিল সম্পূর্ণ অকার্যকর।