প্রথম জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল পৃথিবীর কোন দেশ আবিস্কার করেছিল?
নিউজ ডেস্ক – নারী-পুরুষের শারীরিক মিলন একটি সাধারণ বিষয়। সেই মিলনের ফলস্বরূপ কোন সন্তান-সন্ততি জন্ম নেওয়া ও একটি প্রাকৃতিক নিয়ম। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে শারীরিক মিলন করতে গিয়ে শিশুদের সংখ্যা অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি সেক্ষেত্রে দুর্বল হয়ে পড়ছে নারীরাও। আবার অনেকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও অসময়ে সন্তান চলে আসে জীবনে। সুতরাং এই সকল সমস্যা থেকে সমাধান পেতে নারীদের সুবিধার্থে গর্ভনিরোধক পিলের রিসার্চ শুরু করেছিল বহু বিজ্ঞানী। তবে সেই দীর্ঘ রিসার্চে পর ১৯৬০ সালের ১৮ আগস্ট মার্কিন কম্পানি সার্ল অ্যান্ড কো. প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে হরমোন গর্ভনিরোধক পণ্য এনোভিড বাজারে প্রকাশ করে। যেটিকে নারীদের শারীরিক নিয়ন্ত্রণের মাইলফলক হিসেবে ধরা হয়।
পরবর্তীতে ১৯৬১ সালে বিশেষজ্ঞ মার্গারেট স্যাঙ্গার এবং ক্যাথরিন ম্যাকোর্মিক বিশেষ পর্যবেক্ষণের পর জার্মানি বাজারে পেশ করা হয় ‘আনোভলার’ নামক গর্ভনিরোধক পিল। যেটি প্রথমে ঋতুস্রাবের প্রতিকার হিসেবে কাজ করতো। কিন্তু ইপিএল শুধুমাত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল যে সকল মহিলাদের একাধিক সন্তান রয়েছে। না হলে অন্য কোন অবিবাহিত কিংবা অল্প বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে এই পিল ব্যবহার করার ঘোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা ছিল। তাছাড়াও এই ট্যাবলেটের প্যাকেটের বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া উল্লেখ করা হয়েছিল। যার কারণে অনেকেই পীর গ্রহণ করতে রীতিমতো ভীত ছিলেন। পাশাপাশি অনেক চিকিৎসকরাও জন্মনিরোধক পিল ব্যবহার থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিতেন। এমনকি এই পিলকে রাজনৈতিকবিদ ক্যাথলিক চার্চ এবং ষষ্ঠ পোপ পল ঘোর নিন্দা করেছিলেন।
পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালে যখন জাতিসংঘ পরিবার পরিকল্পনার অধিকার ঘোষণা করে এবং বড়ি সম্পর্কে আরও গবেষণার ফলাফল পাওয়া যায়, তখন জার্মান চিকিৎসকরা পিলের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব শিথিল করেন৷ এর পরেই জার্মানিতে গর্ভনিরোধক পিলের ব্যবহারে উন্নতি ঘটে। এরফলেই যেমন একদিকে শিশু জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আসে সে রকমই মেয়েরা নিজেদের ইচ্ছামত সন্তান গ্রহণ করতে পারে এবং নিজেদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণ পিলের কারণে নারী শিক্ষার সম্প্রসারণ ঘটে। অন্যদিকে আবার চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ফেডারেল সেন্টার ফর হেলথ এডুকেশনের তরফ থেকে জানানো একটি প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে, ১৮-৩৯ বছর বয়সি মেয়েরাই বেশির ভাগ গর্ভনিরোধক পিলকে বেছে নিয়েছেন। যদিও বর্তমান সমাজে গর্ভনিরোধক পিল বিষয়ে অধিকাংশ মানুষই জানে এটা কি এবং কি কাজে ব্যবহৃত হয়।
তবুও বিস্তারিত বলতে গেলে জন্মনিরোধক পিল হচ্ছে সোজা কথায় বলতে গেলে হরমোন নিয়ন্ত্রক ট্যাবলেট। এই ট্যাবলেট সেবন করলে ওভিউলেশন বা ডিম্বাণু নির্গমন হয় না। ফলে গর্ভসঞ্চারের সম্ভাবনাও থাকে না। সাধারণত দুই ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বাজারে পাওয়া যায়। একটিতে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন থাকে এবং অপরটিতে শুধু প্রোজেস্টেরন থাকে। দুটি ব্যবহৃত করলে পিরিয়ডের সময় অধিক রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণে আসে এবং ব্যাথা লাঘব পায়। তবে শুধুমাত্র যে ট্যাবলেটে প্রজেস্টেরন নিয়ন্ত্রণ করে সেটি একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খেতে হয়।