অফবিট

১৯৬৭ সালে সিকিমে চীন ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে মার খেয়েছিল। কতজন চীনের সেনা আহত হয়েছিল জানা আছে?

গত শতাব্দীর ছয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকেই চিন সিকিমের নাথুলা সীমান্তবর্তি অঞ্চলের ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সিকিম ছাড়ার হুমকি দিতে থাকে। রীতিমতো চোঙা ফুঁকে বলতে থাকে, ‘দূর হটো না হলে আবার তোমাদের ১৯৬২ সালের মতো অবস্থায় পড়তে হবে’।

১৯৬৭ সালের আগস্ট মাসে আচমকা চিন তাদের যুদ্ধ প্রস্তুতি শুরু হয়ে দেয়। তারা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নতুন সেনাছাউনি বানানো শুরু করে। এমনকী ভারী অস্ত্রসস্ত্র মোতায়েন করতে থাকে। কিন্তু ভারত তখন আর ১৯৬২ সালের অবস্থায় নেই। তাকে নিজের জায়গা নিজেকেই গুছিয়ে নিতে হবে।

ফলে, ভারতীয় সেনা নাথুলা থেকে সি মুলা পর্যন্ত কাঁটাতারের বেড়া দিতে শুরু করে। সেটা দেখে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি এসে বিরোধিতা শুরু করে। তীব্র বাকবিতণ্ডার পর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ফের ৭ সেপ্টেম্বর সকালে ভারতীয় সেনারা কাজ শুরু করা মাত্র চিনের প্রায় ১০০ জন সেনা এসে আবার তর্কবিতর্ক শুরু করে। এবার তা হাতাহাতিতে গিয়ে পৌঁছায়। কিন্তু শিখ সেনাদের সঙ্গে গায়ের জোরে এঁটে উঠতে পারবে না বুঝতে পেরে চিনা সেনারা সীমানার ওপারে পালিয়ে যায়।

১১ সেপ্টেম্বর আবার ভারতীয় সেনা কাজ শুরু করে। এবার চিনা সেনাবাহিনী ভারী অস্ত্র দিয়ে গুলি চালাতে শুরু করে। হঠাৎ আক্রমনের মুখে পড়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি ঘটে যায়। ফলে তারাও ভারী অস্ত্র দিয়ে চিনা আক্রমনের জবাব দিতে শুরু করে। টানা তিনদিন দুইপক্ষের মধ্যে যুদ্ধ চলে। তাতে চিনের ৩০০ সেনা নিহত ও ৪৫০ জন আহত হয়। প্রায় সব বাঙ্কার সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। অন্যদিকে, ৮৩ জন ভারতীয় জওয়ান নিহত ও ১৬২ জন আহত হয়(একাধিক চীনের সংবাদমাধ্যম তেমনটাই দাবী করে)।

নাথুলা সীমান্তে বিপর্যস্ত হয়ে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি চোলা সেক্টরে অন্য একটি ফ্রন্ট খোলে। উদ্দেশ্য যুদ্ধক্ষেত্রকে আরও একটু বাড়ানো। পরিকল্পনা অনুযায়ী চিন ১ অক্টোবর সিকিমের চোলা সেক্টর আক্রমণ করে। কিন্তু আগে থেকেই ভারতীয় সেনারা সেখানে তৈরি ছিল। কারণ, চোলা সেক্টর খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখানেও চিনা আক্রমণ ব্যর্থ হয়। ৪০ জন চিনা সেনার মৃত্যু হয়। প্রাণ যায় ৫ জন ভারতীয় সেনার।

চিনা সেনাবাহিনী ক্রমশ পিছু হটে। সীমান্ত থেকে তিন কিলোমিটার দূরে পালিয়ে গিয়ে তাদের কিম সেনাঘাটিতে আশ্রয় নেয়। আত্মরক্ষার্থে সেখান থেকে গুলি চালাতে থাকে। তবে অনেক সুবিধাজনক অবস্থায় থাকা ভারতীয় সেনাবিভাগের তাতে ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ১০ অক্টোবর চিনা সেনারা একেবারে চুপ করে যায়। ভারতীয় সেনাবাহিনী কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজও শেষ করে। তাড়া খাওয়ার এই ঘটনা চিনা সেনা অনেক দিন পর্যন্ত মনে রেখেছিল। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *