আমেরিকার সম্ভাব্য উপ রাষ্ট্রপতি এবার ব্রিটেনের সমালোচনা করলো
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে আগামী নভেম্বর মাসে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। আমেরিকার নির্বাচনে এই মূহুর্তে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থন সবচেয়ে বেশী রয়েছে। প্রায় ৮০ শতাংশ সম্ভবনা রয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতি৷ নির্বাচিত হবার। জো বাইডেন নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বীতা থেকে সরে দাঁড়ানোর পর ডেমোক্র্যাট দলের তরফে কমলা হ্যারিস দাঁড়িয়েছে রাষ্ট্রপতি পদে। তবে জনসমর্থনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে কমলা হ্যারিস। বিশেষ করে সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপর হওয়া আক্রমনের পর থেকে তার জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
আমেরিকাতে রিপাবলিকান দল তাদের চওড়া ভাষনের জন্য প্রসিদ্ধ। ডোনাল্ড ট্রাম্পও নির্বাচনী প্রচারে যথেষ্ট সক্রিয় রয়েছে। সম্প্রতি রিপাবলিকান দলের উপ রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী জেডি ভান্স বলেছেন ইউকে এমন একটি ইসলামিক দেশ যার কাছে প্রথম পারমানবিক অস্ত্র এসেছে। তিনি সরাসরি ইউকে কে ইসলামিক দেশ বলে উল্লেখ করেছেন। এরপরেই আমেরিকা ও ইউকেতে তার সমালোচনা হচ্ছে রীতিমতো।
আসলে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি সভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় জেডি ভান্স বলেন পরমানু অস্ত্রের সতর্কতার জন্য জো বাইডেন সরকার তেমন কিছু পদক্ষেপ নেয়নি, তারা ক্ষমতায় এলে পরমানু অস্ত্র প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেবে। বক্তৃতায় তিনি আরও বলেন বিশ্বে সবচেয়ে বেশী ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে পরমানু অস্ত্র থেকে। পরমানু অস্ত্র ভুল হাতে চলে গেলে তা খুবই বিপদজনক হবে। এরপর তিনি বলেন হয়ত ইরান অথবা পাকিস্তানের মতোন ইসলামিক দেশের কাছে পরমানু অস্ত্র থাকা মোটেও ভালো লক্ষন নয়। এর পরক্ষনেই তিনি বলেন লেবার পার্টি যেদিন থেকে ইউকের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছে তখন থেকেই ইউকে প্রথম ইসলামিক দেশে পরিনত হয়েছে যার কাছে ১৯৫২ সালেই পরমানু অস্ত্র আসে। ইউকে কে কেন মুসলিম দেশ বলেছেন? তিনি এর পক্ষে বিস্তারিত কিছু জানায়নি জেডি ভান্স। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে ইউকেতে অভিবাসনের হার অত্যন্ত বেশী। ইউরোপের উন্নত দেশ ইউকেতে জীবনযাপনের মান উন্নত হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই অভিবাসনের হারও বেশী। ২০২৪ সালে ইউকের নির্বাচনে দেখা গিয়েছে মুসলিম জনসংখ্যার হার ইউকেতে ৭ শতাংশ! যা ইউকের মতোন ইউরোপীয়ান দেশের পক্ষে অনেকটাই বেশী। ইউকেতে ইহুদিদের সংখ্যা ০.৫ শতাংশ, শিখ জনসংখ্যা প্রায় ৩ শতাংশ, হিন্দু জনসংখ্যাও খুব কম কিন্তু সেই তুলনায় মুসলিম জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছে এই জন্যই জেডি ভান্স হয়ত ইউকে কে ইসলামিক দেশ বলেছে।
আমেরিকা ও ইউরোপের ডানপন্থী দলগুলোর একটি চিন্তাভাবনা আছে তা হল অতিরিক্ত অভিবাসনের জন্য হয়ত একদিন পশ্চিম ইউরোপীয়ান দেশগুলোতে মুসলিম জনসংখ্যার আধিক্য দেখা দেবে। এই জন্য ডানপন্থী দলগুলো ইউরোপে অভিবাসন নীতির প্রায়ই বিরোধীতা করে। ইউকেতে দুটি রাজনৈতিক দল রয়েছে কনজার্ভেটিভ ও লেবার পার্টি। কনজার্ভেটিভ দল যখন ক্ষমতায় ছিল তখন প্রধানমন্ত্রী ঋষি শৌনক ইউকেতে রোয়ান্ডা বিল নামে একটি আইন তৈরি করেছিল। ইউকেতে প্রতিবছর অসংখ্য বেআইনি শরনার্থী চলে আসে। এরা ইউকেতে প্রবেশ করেই সর্বপ্রথম পাসপোর্ট সহ সমস্ত জরুরী আইডি কার্ড ছিঁড়ে ফেলে দেয় যাতে ইউকে সরকার তাদের দেশ সম্পর্কে জানতে না পারে এবং তাদের ফেরত পাঠাতে না পারে। ইউকে সরকারকে এদের আসল দেশ খুঁজে পেতে অনেক সময় লাগে প্রায় দুই তিন বছর, ততদিনে তারা ইউকে সরকারের অর্থে সেখানে থাকতো। এই জন্য রোয়ান্ডা বিল পাশ করানো হয় ইউকেতে যেখানে ইউকেতে আসা অবৈধ শরনার্থীদের আফ্রিকার রোয়ান্ডাতে পাঠিয়ে দেওয়া হত সেখানে তাদের উপর মামলা চলতো, এর জন্য ইউকে সরকার রোয়ান্ডা সরকারকে মোটা অর্থও দিত। কিন্তু লেবার পার্টি ক্ষমতায় এসেই রোয়ান্ডা বিল প্রত্যাহার করে নেয়, এজন্য ইউকে লেবার পার্টিকে প্রো ইসলামিক দল বলা হয়। এইজন্য জেডি ভান্স লেবার পার্টিকে নিশানা করেছে বলে ধারনা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। তবে জেডি ভান্সের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বড়ই অদ্ভুত।
২০১৯ সাল পর্যন্ত জেডি ভান্স ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরোধী ছিল। এমনকী জেডি ভান্স প্রকাশ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আমেরিকার হিটলারও বলতো কিন্তু ২০২১ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পই তাকে রিপাবলিকান দলে নিয়ে আসে এবং তারপর থেকে দুজনের মধ্যে ব্যাপক বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছে যার কারনে বর্তমানে জেডি ভান্স আমেরিকার উপ রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হয়েছে।