ফিচার আর্টিকেল

আমেরিকা, ইউরোপের প্রাক্তন সামরিক পাইলটদের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে নিয়োগ করছে চীন! কি মতলব আঁটছে?

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে বিশ্বের একমাত্র সুপার পাওয়ার। আমেরিকার সাথে পাল্লা দিয়ে চীনও তাদের সামরিক বাজেট বহু গুন বৃদ্ধি করেছে। চীন দ্রুতগতিতে তার সমরাস্ত্র নির্মান করছে। কিন্তু চীনের যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ কোনও কিছুই আমেরিকা বা পশ্চিমা দেশ গুলোর সমমানের নয় বলে বারবার আলোচিত হয়েছে। এবার চীন তার বিমান বাহিনীকে শক্তিশালী করতে এবং পশ্চিমা যুদ্ধবিমান প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে সক্রিয় এবং অবসর প্রাপ্ত পশ্চিমা যুদ্ধবিমান পাইলট এবং অন্যান্য পরিষেবা সদস্যদের তাদের সামরিক বাহিনীতে নিয়োগ করছে বলে জানা গেছে। ফাইভ আইস সংগঠনের সদস্যরা অর্থাৎ আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের ইনটেলিজেন্স বিভাগ একটি বিশেষ প্রতিবদনে চীনের এই নতুন কৌশলের কথা প্রকাশ করেছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি বা পিএলএ দক্ষিন আফ্রিকা ও চীনের কিছু বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, আমেরিকা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, সহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশের প্রাক্তন সামরিক পাইলটদের চীনের বায়ুসেনা ও নৌসেনার যুদ্ধবিমান পাইলটদের প্রশিক্ষনের জন্য নিয়োগ করছে। 

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার একটি বিভাগ ন্যাশনাল কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি সেন্টারের প্রধান মাইকেল কেসির মতে চীন যুদ্ধবিমান পরিচালনায় তাদের ত্রুটি গুলির সমাধানের জন্য পাইলটদের প্রশিক্ষনের জন্য পশ্চিমা সামরিক প্রতিভা নিয়োগ করছে। পেন্টাগনের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সাবরিনা সিং বলেছেন পেন্টাগন সর্বদা আশা করে যে তাদের পাইলটরা যে উচ্চমানের প্রশিক্ষন প্রাপ্ত হয় সেই প্রশিক্ষনের মান তারা শুধুমাত্র নিজের দেশ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের জন্যই নির্দিষ্ট রাখে। প্রতিবেদনে আরও জানা গেছে চীন কিছু প্রাক্তন পশ্চিমা সামরিক পাইলটদেরও খুঁজছে যারা পশ্চিমা যুদ্ধকৌশল চীনকে শেখাতে পারে যাতে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে চীন এই কৌশল ব্যবহার করতে পারে। এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারে কীভাবে সঠিকভাবে ল্যান্ড করতে হয় এবং পশ্চিমা যুদ্ধকৌশলকে প্রতিরোধ করার পদ্ধতিও চীন জানার চেষ্টা করছে। 

পশ্চিমা অবসরপ্রাপ্ত সামরিক পাইলট খুঁজে বের করা ও তাদের প্রচুর বেতনে কাজ দেওয়ার দায়িত্ব বেজিং বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থাকে দিয়েছে। লাওস, দক্ষিন আফ্রিকা, সিঙ্গাপুরের মতোন দেশ গুলো থেকে এইসব বেসরকারী সংস্থা পশ্চিমা পাইলট নিয়োগ করছে। ইতিমধ্যেই বহু পশ্চিমা পাইলট চীনের সামরিক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষন দেওয়া শুরু করে দিয়েছে। বিগত কয়েক বছরে চীন তার বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীকে ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি করেছে। সংখ্যার বিচারে চীনের নৌবাহিনী ইতিমধ্যেই আমেরিকার নৌবাহিনীকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। চীনের এই ক্রমবর্ধমান সামরিক ক্ষমতা তাইওয়ান ও দক্ষিন চীন সাগরের জন্য রীতিমতো হুমকী স্বরূপ। চীনা বিমানবাহিনীতে প্রচুর পরিমানে যুদ্ধবিমান এবং নৌবাহিনীতে তৃতীয় এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার যুক্ত হলেও যুদ্ধবিমান সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য যোগ্য পাইলট নেই চীনের কাছে। তাই চীন পশ্চিমা পাইলটদের প্রশিক্ষনের জন্য নিয়োগ করছে। ইনটেলিজেন্স রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২২ সাল থেকেই কিছু আমেরিকান, ব্রিটিশ ও জার্মান পাইলট চীনের বায়ুসেনা ও নৌসেনার হয়ে কাজ করছে। ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়াতে আমেরিকার নৌবাহিনীর প্রাক্তন পাইলট ড্যানিয়েল ডুগ্গানকে চীনের নৌবাহিনীর পাইলটদের প্রশিক্ষন দেওয়ার অপরাধে গ্রেফতার করা হয়। 

অতীতে চীনের উপর আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক অস্ত্রের ডিজাইন, প্রযুক্তি চুরীর অভিযোগ উঠেছে। যেমন চীনের জে ৩১ যুদ্ধবিমান আমেরিকার এফ ৩৫ ও এফ ২২ এর নকল বলা হয়। চীনের ভান্ডারে এরকম অজস্র সমরাস্ত্র রয়েছে যা অন্যদেশ থেকে নকল করা। তবে এবার পশ্চিমা দেশ গুলো চীনের এই পশ্চিমা পাইলট নিয়োগের স্ট্রাটেজির প্রতিরোধ শুরু করেছে। জুন, ২০২৩ থেকে আমেরিকা একাধিক সংস্থাকে নিষিদ্ধ করেছে যাদের সাথে চীনের সংযোগ রয়েছে, এর মধ্যে দক্ষিন আফ্রিকার একটি বিমান প্রশিক্ষন কেন্দ্রও রয়েছে। ব্রিটেনও গত সেপ্টেম্বরে ঘোষনা করেছে তাদের যে সমস্ত প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তা চীনের পাইলটদের প্রশিক্ষন দেওয়ার কাজে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ন্যটো ও আমেরিকা গত জানুয়ারি মাস থেকেই চীনের এই নীতি মোকাবিলার জন্য যাবতীয় আলোচনা করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *