অফবিট

যন্ত্রনাহীন মৃত্যু। সুইজারল্যান্ডে মানুষের স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা করার বিশেষ সুইসাইড পড কিভাবে কাজ করবে?

এই সুন্দর মানব জীবনে মৃত্যু একটি অমোঘ সত্য। মৃত্যু এমন একটি জিনিস যাকে এড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা কারও নেই। তাই কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের একটি বিশেষ কথা আছে “জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে” অর্থাৎ মৃত্যুর মতো ভয়ানক ও চিরন্তন সত্য কিছু নেই। সনাতন হিন্দু ধর্মে পৃথিবীকে মৃত্যু লোক বলা হয়েছে। হিন্দু ধর্মে মানুষের মৃত্যু, কর্মফল, মৃত্যুর পর বিভিন্ন লোক নিয়ে প্রচুর ব্যাখা আছে। এই বিশ্বে কেউ অমর নয়, এমনকী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, প্রভু শ্রীরাম, গৌতম বুদ্ধ, ঋষভদেব সহ প্রত্যেক মহাপুরুষগনই পার্থিব শরীর ত্যাগ করে নিজেদের আপন লোকে ফিরে গেছেন। মহান বিশ্বজয়ী গ্রীক সম্রাট আলেকজান্ডারও মৃত্যুর করালগ্রাস থেকে রক্ষা পাননি। মৃত্যু যেমন জীবনের চরম সত্যি ঠিক তেমনই আমাদের প্রত্যেকেরই ইচ্ছা পূর্নাঙ্গ জীবনকাল সম্পূর্ন হলেই যেন স্বাভাবিক নিয়মে মৃত্যু আসে। কিন্তু সবটাই ইশ্বরের হাতে। এই মহাবিশ্বে বহু এমন মানুষ আছে যারা স্বেচ্ছায় মৃত্যু চায় সবসময়। এরকম মানুষদের কথা ভেবেই বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর দেশ সুইজারল্যান্ডে স্বইচ্ছায় আত্মহত্যার জন্য বিশেষ পড তৈরি করা হয়েছে। এটি একটি বিশেষ কাঁচের কেবিনের মতোন যেখানে একজন মানুষ শোবার পর বোতাম টিপলে পডের ভিতর ধীরে ধীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে শুরু করে এবং নাইট্রোজেনের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যার জন্য অল্প সময়েই মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়বে। এভাবে যন্ত্রনাহীন মৃত্যু ঘটবে মানুষের। সুইজারল্যান্ডের এই সুইসাইড পড যথেষ্ট বিতর্কিত কারন এভাবে মৃত্যু কখনও কাম্য নয়। যদিও ইউরোপীয়ান দেশগুলোতে বিগত কয়েক বছরে স্বইচ্ছায় মৃত্যুবরনের বেশ কিছু ঘটনা লক্ষ্য করা গেছে। বিশ্ব জুড়ে এরকম ঘটনা বাড়তেই থাকছে। গত বছরে দীর্ঘদিন ধরে রোগে ভোগা এক অস্ট্রেলিয়ান নারী কোর্টে আবেদন করে স্বেচ্ছা মৃত্যুর জন্য। ওই মহিলাটি শারীরিক অসুস্থতার কারনে দীর্ঘদিন ধরে হসপিটালে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিল। ডাক্তার জানিয়ে দিয়েছিল ওই মহিলাটি আর কখনও উঠে দাঁড়াতে পারবেনা। এরকম পরিস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়ার কোর্ট ওই মহিলাটির স্বেচ্ছা মৃত্যুর আবেদন মঞ্জুর করে। বিশ্ব জুড়ে অনেক মানুষই স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা করতে চায়, যার জন্য সুইজারল্যান্ডে এই সুইসাইড পড তৈরি করা হয়েছে যাতে মৃত্যুকালে কোনওরূপ যন্ত্রনা না হয় তেমন। 

সুইজারল্যান্ডে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এই পড চালু করা হবে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে এটি একটি বহনযোগ্য সুইসাইড পড হবে যেটি সুইজারল্যান্ডে প্রথম ব্যবহৃত হবে। এই প্রক্রিয়ায় কোনওরকম ডাক্তারি পরীক্ষা ছাড়াই কোনও এক ব্যক্তি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট অর্থ দিয়ে আত্মহত্যা করতে পারবে। এই সুইসাইড পড দেখতে একটি স্পেস ক্যাপসুলের মতোন। ২০১৯ সালে সর্বপ্রথম এই সুইসাইড পড জনসমক্ষে আনা হয়। এর ভিতরে অক্সিজেনকে নাইট্রোজেন দ্বারা রিপ্লেস করা হয়। হাইপক্সিয়া রোগে মানব শরীরের সমস্ত কোষে অক্সিজেন সরবরাহ কমতে থাকে। করোনা মহামারীর সময়ে অধিকাংশ রুগী এই হাইপক্সিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। একজন পরিপূর্ন সুস্থ মানবদেহে অক্সিজেনের মাত্র থাকে ৯০-১০০ শতাংশ। এর থেকে কম হলেই শরীরে নানান উপসর্গ দেখা দেয়। বিশেষ করে হাইপক্সিয়া রোগে মাথাতেও অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়, যার কারনে রুগী ধীরে ধীরে অচৈতন্য হয়ে পড়ে এবং অক্সিজেনের অভাবে তার মৃত্যু ঘটে। এই সুইসাইড পডেও অক্সিজেনর অভাবে ব্যক্তির হাইপক্সিয়া রোগ হয় এবং নাইট্রোজেনের প্রয়োগে রোগী যন্ত্রনাহীন মৃত্যুকে প্রাপ্ত হয়। এই পড একবার ব্যবহারের খরচ ২০ ডলার বা ভারতীয় মুদ্রায় ১৬৬০ টাকার মতোন। দি লাস্ট রিসর্ট অর্গানাইজেশন নামক যে সংস্থা এই সুইসাইড পড তৈরি করেছে, সেই সংস্থা জানিয়েছে সুইজারল্যান্ডে এই সুইসাইড পড ব্যবহারের উপর কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। সুইজারল্যান্ডের আইন বলে কোনও মানুষ স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরন করতে চাইলে তার সে অধিকার রয়েছে। সুইজারল্যান্ডকে পৃথিবীর স্বর্গ বলা হয়। বহু মানুষেরই জীবনের একবার ইচ্ছে থাকে এই ছবির মতোন সুন্দর দেশকে যেন একবারও যেতে পারে কিন্তু এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে যেন অপূর্নতা সব জায়গায় রয়েছে। যার জন্য সুইজারল্যান্ডের মতোন স্বপ্নের দেশেও ইতিমধ্যে বহু মানুষ সুইসাইড পড ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে পড়েছে। 

দি লাস্ট রিসর্টের চীফ এক্সিকিউটিভ ফ্লোরেন উইলেট জানিয়েছে খুব শীঘ্রই এই পড লোকে ব্যবহার করতে পারবে। তিনি আরও বলেছেন এর থেকে সুন্দর মৃত্যুর পদ্ধতি আর নেই। তবে এই পড ব্যবহারের আগে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দ্বারা পূর্ন জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, এরপর ব্যক্তি পডে প্রবেশ করবে এবং সে নিজেই ক্যাপসুল এঁটে দেবে। এরপরে সুইচ টেপার আগে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সিস্টেমের মাধ্যমে ওই ব্যক্তিকে পুনরায় একবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এরপর সুইচ টিপতেই অক্সিজেনের মাত্রা মাত্র ৩০ সেকেন্ডে ২১ শতাংশ থেকে কমে ০.০৫ শতাংশে চলে আসবে। এর পরবর্তী পাঁচ মিনিটের মধ্যে আচ্ছন্ন অবস্থায় সেই ব্যক্তির মৃত্যু হবে। এটা একধরনের আত্মহত্যাই। হিন্দু ধর্ম সহ বিশ্বের সমস্ত ধর্মেই আত্মহত্যাকে মহাপাপ বলা হয়েছে। বলা হয় মানুষ তার জীবন পায় পূর্বের কর্ম অনুযায়ী। সুতরাং এজীবনে যে যত কষ্টই পাক তাকে তা সহ্য করতেই হবে। তা না করে সে যদি আত্মহত্যা করে তবে ইশ্বরের বিচারে মৃত্যুর পর সে আরওবেশী দন্ড পাবে। সুতরাং এই ধরনের ভয়ানক জিনিস ভারতে কখনোই অনুমোদন পাবেনা। কিন্তু সুইজারল্যান্ড ইউরোপীয় দেশ তাদের নিয়মকানুন সম্পূর্ন আলাদা। তবে সুইজারল্যান্ডেও এই সুইসাইড পড নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। সুইজারল্যান্ড বেশ কিছু প্রদেশে এই পডকে সরাসরি নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছে, তবে কিছু প্রদেশে এই পড ব্যবহারের ব্যপারে আলোচনা চলছে। তবে বিজ্ঞান যত উন্নতই হোক, পরিস্থিতি যত প্রতিকূলই হোকনা কেন ইশ্বরের বিরুদ্ধে গিয়ে কখনও আত্মহত্যা করা উচিত নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *