কেন্দ্রীয় বাজেটে ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট চীনের তুলনায় বহুগুন কম
গত ২৩ জুলাই ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের বাজেট প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। দেশের বহু মানুষই নতুন কেন্দ্রীয় বাজেট নিয়ে খুশি নয়। বিনিয়োগের উপর কর বৃদ্ধি করা নিয়েও সরকারের সমালোচনা করছে অনেকে। এবারের প্রতিরক্ষা বাজেট নিয়েও খুশি নয় অনেকে। বলা হচ্ছে সীমান্তে চীন ও পাকিস্তানের মতোন শত্রু থাকা সত্ত্বেও এবারে প্রতিরক্ষা বাজেট ১০০ বিলিয়ন ডলার হলনা কেন? বিশ্বজুড়ে সমস্ত শক্তিশালী দেশই তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট ক্রমশ বৃদ্ধি করছে কিন্তু ভারতে কর বৃদ্ধি পেলেও সেই তুলনায় প্রতিরক্ষা বাজেট যথেষ্টই কম। বলা হচ্ছে কর বৃদ্ধি সত্ত্বেও সরকার যেহেতু প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধি করছেনা তখন ভবিষ্যতে কখনও প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধি করা হলে কর আরও বৃদ্ধি পাবে। কেন্দ্রীয় বাজেট ২০২৪-২৫ তে ভারত সরকার ৪৮.২০ লাখ কোটি টাকা খরচ দেখিয়েছে যা গিয়ে দাঁড়ায় ৫৮৫ বিলিয়ন ডলারে। বাজেটের অর্থ এই এক বছরে ভারত সরকার কত টাকা খরচ করবে। তবে ভারতের বাজেট আমেরিকা ও চীনের থেকে অনেক পিছিয়ে। ভারতের বর্তমান বাজেট যেখানে ৫৮৫ বিলিয়ন ডলার সেখানে আমেরিকার ও চীনের বাজেট যথাক্রমে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার ও ৪ ট্রিলিয়ন ডলার। ১০০০ বিলিয়ন ডলার = ১ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ভারতের প্রায় সাতগুন বেশী চীনের বাজেট। ভারতের মোট বাজেটের ১৩ শতাংশ অর্থাৎ ৬.২১ লাখ কোটি টাকা বা ৭৫ বিলিয়ন ডলারের বাজেট দেওয়া হয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে। এর মধ্যে আবার ৪,৩৯,৭০০ কোটি টাকা শুধুমাত্র বেতন ও পেনশনে চলে যাবে অর্থাৎ মাত্র ১,৮২,২৪০ কোটি টাকার শুধুমাত্র অস্ত্র কিনতে পারবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেটে ডিআরডিওকে মাত্র ২৩,৮৫৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে যা চীনের রিসার্চ সংস্থার তুলনায় বহুগুন কম। উপকূল রক্ষী বাহিনীকে দেওয়া হয়েছে ৭,৬৫১.৮০ কোটি টাকা। বিআরওর বাজেট বাড়িয়ে ৬,৫০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে ১,৯২,৬৮০ কোটি টাকা, বায়ুসেনাকে দেওয়া হয়েছে ৪৬,২২৩ কোটি টাকা এবং নৌসেনাকে দেওয়া হয়েছে ৩২,৭৭৮ কোটি টাকা। প্রতিবারের মতোন এবারেও ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেটের প্রায় ৬৮ শতাংশই চলে যাচ্ছে বেতন দিতে। বিশ্বের চতুর্থ শক্তিশালী দেশ ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় এত কম বাজেট কখনওই কাম্য নয়। সেনাদের বেতন দিতে যা খরচ হচ্ছে তা একদম ঠিক আছে কারন ভারতীয় সেনারা নিজেদের জীবনের বিনিময়ে দেশকে রক্ষা করে, তাদের এটা প্রাপ্য। এই জন্য ভারত সরকারের সেনাবাহিনীর অস্ত্র কেনার অর্থের পরিমান বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এই কারনে ভারতের জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলারের সমরিক বাজেট খুবই প্রয়োজনীয়।
ভারত একটি এমন দেশ যার শত্রু প্রতিবেশী পাকিস্তান ও চীনের মতোন দুটি পরমানু শক্তিধর দেশ। পাকিস্তানের সামরিক বাজেট ভারতের তুলনায় অনেক কম হলেও পাকিস্তানকে চীন ক্রমাগত সহায়তা করে। চীন সরকারি ভাবে জানায় তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট ২৩৬ বিলিয়ন ডলার, যদিও আমেরিকার বহু সামরিক বিশেষজ্ঞগন জানিয়েছে চীনের প্রকৃত সামরিক বাজেট অন্তত ৬০০ বিলিয়ন ডলার, চীন ইচ্ছে করে তাদের বাজেট কমিয়ে দেখায়। আমেরিকার প্রতিরক্ষা বাজেট বিশ্বে সবচেয়ে বেশী ৮৪২ বিলিয়ন ডলার! তবে ভারতকে চীন ও পাকিস্তানকে প্রতিরোধ করতে গেলে অন্তত ১০০ বিলিয়ন ডলারের সামরিক বাজেট প্রয়োজন। বর্তমান বিশ্বে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির কারনে সামরিক বাজেট রেকর্ড পরিমান ২,৪৪০ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রত্যেক শক্তিশালী দেশই যেন আসন্ন যুদ্ধের প্রস্ততি নিচ্ছে। গত কয়েক বছরে বিশ্ব রাজনীতিতে একাধিক বড় পরিবর্তন ঘটেছে যেমন ২০২২ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে যাকে ইউরোপের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকট বলা হচ্ছে। গত নয়মাস ধরে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও হামাসের যুদ্ধকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্য অশান্ত হয়ে উঠেছে। ইরান, ইয়ামেন, কাতার, লেবাননের মতোন দেশও মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল বিরোধীতা করছে। সৌদি আরবের সাথে ইয়ামেনের ঝামেলা রয়েছে। উত্তর কোরিয়া রাশিয়া ও চীনের সহায়তায় ক্রমাগত মিসাইল পরীক্ষা করছে দক্ষিন কোরিয়া ও জাপানের কাছে।
চীনের আগ্রাসন প্রতিরোধে দক্ষিন চীন সাগরীয় দেশগুলো, তাইওয়ান, জাপান নিজেদের প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধি করেছে। এসব কারনে বিশ্বজুড়ে সামরিক বাজেট দ্রুত বাড়ছে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হচ্ছে যেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য প্রস্ততি চলছে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর বিশ্ব রাজনীতি যতটা শান্ত হয়েছিল বর্তমানে ঠিক ততটাই অশান্ত হয়ে উঠেছে। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমনকে কেন্দ্র করে ইউরোপীয়ান দেশগুলো বিশেষ করে ন্যাটো তার বাজেট বৃদ্ধি করছে। তুরস্ক তার সামরিক বাজেট ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে, ব্রিটেনের মতো অর্থনৈতিক ভাবে সমস্যায় চলা দেশও তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট ২.৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে ১০০ বিলিয়ন ডলারে করেছে। ইউকের আশেপাশে কোনও শত্রু দেশ নেই তাসত্ত্বেও এসব দেশ নিজেদের শক্তিশালী করছে আগত যুদ্ধের কথা ভেবে। সেই তুলনায় ভারত অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীতে বর্তমানে বহু অস্ত্র ঘাটতি আছে যেমন ভারতীয় বায়ুসেনাতে অনেক স্কোয়াড্রন নতুন যুদ্ধবিমান লাগবে, হেলিকপ্টার, ড্রোন লাগবে কারনে পুরোনো মিগ ২১, জাগুয়ারের মতোন বিমানগুলিকে অবসরে পাঠাতে হবে, চিতা, চেতকের মতোন হেলিকপ্টার গুলোকেও অবসরে পাঠাতে হবে। তাছাড়া সুখোই ৩০ এমকেআই যুদ্ধ বিমানগুলিকে সুপার সুখোইয়ো আপগ্রেড করতে হবে। সেনাবাহিনীর জন্য ট্যাঙ্ক, বিশেষ সাজোঁয়া গাড়ি সহ একাধিক অস্ত্রশস্ত্র, আকাশ প্রতিরক্ষা মিসাইল প্রয়োজন। নৌবাহিনীর জন্য যু্দ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, সাবমেরিন, হেলিকপ্টার প্রয়োজন। এর জন্য বিপুল সামরিক বাজেট প্রয়োজন, ৭৫ বিলিয়ন ডলার কখনওই ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য যথেষ্ট নয় চীন ও পাকিস্তানকে মোকাবিলা করতে।