অফবিট

ক্যান্সার নিরাময়ের ওষুধ পৃথিবীর কোথায় রয়েছে?

নিউজ ডেস্ক – বর্তমানে দুরন্ত জীবনে  এক অংশ সময় পায়না সাধারণ মানুষ। সব সময় কাজ, লাইফ স্টাইল, ক্যারিয়ার ইত্যাদির পিছনে একটি রেসের ঘোড়ার মতো দৌড়ে চলেছে সকলে। যার কারণে বর্তমানে ক্যান্সার, ডিপ্রেশন নামক এত হেবি হেবি নামের রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে খুব সহজেই। কিন্তু পৃথিবীর বুকে মানুষরা কোন রকম ক্যান্সার বা কোনো অসুখ তাদের ছুঁতে পারে না। বরং রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা এখানে আসলে তারাও রোগ মুক্ত হয়।  এমন একটি দেশ রয়েছে সেটি হল গ্রিসের একটি ছোট্ট দ্বীপ ইকারিয়া। এই দ্বীপটি আয়তনে ২৫৪ বর্গ কিলোমিটার। এই দ্বীপের বাসিন্দারা কখনোই রোগে আক্রান্ত হয় না।তবে এর পেছনের রহস্য উদঘাটন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিশেষজ্ঞরা। 

জানা গিয়েছে এই দ্বীপে বাসিন্দাদের জীবন যাপন অনেকটাই সিদে সাদা। এখানে সকল মানুষের গড় আয়ু ১০০ বছর। ১০০ বছর হওয়ার পরেও কারো জীবনে এখনও বার্ধক্য নামেনি। যার কারণে পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত এই দ্বীপে সকলে রীতিমতো পাহাড়-চড়ে মন্দিরে উঠে পুজো দেয়। এই বিষয়ে ইকারিয়ার বাসিন্দা স্ট্যামাটিস মোরাইটিস নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে জানান বহুদিন আগে ইকারিয়া ছেড়ে সন্তান নিয়ে চলে গিয়েছিলেন আমেরিকার ফ্লোরিডায়। সেখানেই গোটা জীবন অতিবাহিত করার  ইচ্ছা ছিল তার। কিন্তু সবকিছু নিজেদের ইচ্ছামত না হয়ে কিছু জিনিস বিধাতার ইচ্ছা মতোনও হয়। কারণ ১৯৭৬ সালে একদিন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতলে ভর্তি হলে চিকিৎসকরা জানান ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। হাতে মাত্র বাকি রয়েছে আর নয় মাস। এমন খবর পেয়ে গোটা পরিবার ভেঙ্গে পড়েছিল।  এরপরেই বাকি জীবন ইকারিয়ায় ছেলেবেলার বন্ধুদের সঙ্গে কাটাতে চেয়েছিলেন তিনি। এরপরই যেমন ভাবা তেমন কাজ। গোটা পরিবার নিয়ে ইকারিয়ায় নিজের  জন্মভুমিতে ফিরে আসেন তিনি।  

নিজের জন্মভূমি ফিরে আসার যেন মেঘ না চাইতে জলের মতো কাজ করেছে তার কাছে। এই দ্বীপে কয়েকদিন কাটানোর পর থেকে যেন তার জীবনে ঘড়ির কাঁটা উল্টো দিকে চলে। সমস্ত রোগ সেরে উঠতে শুরু করে। এমনকি নিজের জমিতে চাষ করে অলিভও ফলান। যে ব্যক্তির ৬০ বছর বয়সে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি আরও ৩০ বছর অর্থাৎ ৯০ বছর বয়সে মৃত্যু হয়। শুধুমাত্র একজনের নয় এরকম অনেক নিদর্শন পাওয়া যায় ওই দ্বীপে। 

এই রকমই একটি জ্বলন্ত নিদর্শন হল ইকারিয়ার আরেক বাসিন্দা গ্রেগরি সাহাসের। এই ব্যক্তির বয়স ছিল ৭০ বছর। দিনে প্রায় কুড়িটি মতো সিগারেট খেতেন তিনি। কিন্তু তারপরও কোনো রোগ অর্থাৎ ক্যান্সার সহ এমন কোন রোগে আক্রান্ত হননি নিজের জীবন কালে। সামান্য একবার অ্যাপেন্ডিসাইড সংক্রান্ত রোগ ধরা পড়েছিল নয়তো আর কিছুই কাহিল  করতে পারেনি তাকে। পরে অবশ্য বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় মৃত্যু হয় তার। এখানকার বাসিন্দারা কখনোই ঘড়ি দেখে নিজের জীবন অতিবাহিত করেন না। যে যার নিজের মর্জির মালিক। এখানে দোকানপাট খোলে  মালিকদের সুবিধা মতন। এখানে ১২ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সকল দোকান খোলা থাকে। ছোট্ট এই দ্বীপে সকলেই একে অপরের সঙ্গে পরিবারের মতো বসবাস করে। এখানে কোনো রকম চিন্তা বা পয়সার লোভ না থাকায় সকল মানুষ ফ্রি ভাবে জীবন যাপন করে। ‌ তবে এমন দৃশ্য  বড়ই বিরল গোটা পৃথিবীতে, কারণে বহু বিশেষজ্ঞরা এই বিষয়ের উপর পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন কারণ জানতে। প্রতিবারই যে বিষয়ে পর্যবেক্ষণ  করুকনা কেন সবকিছুর একটাই উত্তর পেয়েছেন তারা সেটি হলো এই দ্বীপের বাসিন্দাদের লাইফ স্টাইল। এখানকার প্রত্যেকটি মানুষ স্ট্রেস মুক্ত থাকার পাশাপাশি শাকসবজি, ফল খান তারা। এই সকল খাবার দ্রব্য কিনবে তার অর্থ খরচ করতে হয় না কারণ প্রত্যেকের বাড়িতে কমবেশি চাষ হয়ে থাকে। পাশাপাশি  সম্পূর্ণরূপে ফাস্টফুড ত্যাগ করেছেন। এমনকি মাছ-মাংস পরিমাণ খুব কম এদের খাদ্য তালিকায় থাকে। তাই চিন্তামুক্ত জীবনে দীর্ঘ সময়ের জন্য ঘুম দিতে পারেন তারা। এদের একটি বিশেষত্ব রয়েছে ঘুমানোর আগে তারা এক ধরণের এন্টি-অক্সিডেন্ট হার্বাল চা খান। যেটি যে কোনরকমের স্ট্রেস শরীর থেকে দূর করে। 

আজব দ্বীপের সম্বন্ধে উৎসাহী বহু লেখকের মধ্যে ২০০০ সালে ন্যাশনাল  জিয়োগ্ৰাফিক এক্সপ্লোরার এবং লেখক ড্যান বুয়েটনার এই দ্বীপে জীবনযাপন নিয়ে একটি বই লিখেছেন‌ যার নাম দ্য ব্লু জোনস সলিউশন।  গোটা ইকারিয়া সম্বন্ধে লেখা রয়েছে এই বইতে। তবে এই দ্বীপের মহাঔষুধী হলো চীন্তা মুক্ত জীবন, খাদ্যাভাস এবং জলবায়ু যা দ্বীপের মানুষদের দীর্ঘায়ু করতে সহায়তা করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *